ঢাকা, শনিবার, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

বৃষ্টিতে নামলো শীত, ‘গরম কেনাকাটা’র ধুম

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১১৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৮
বৃষ্টিতে নামলো শীত, ‘গরম কেনাকাটা’র ধুম গরম কাপড় কেনার ধুম, ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা: রাজধানীতে শেষ দু’দিনের বৃষ্টিতে শীত জেঁকে বসেছে বেশ। সকাল-সন্ধ্যার হিমেল হাওয়া গায়ে লাগলে শীতের আমেজ পাওয়া যাচ্ছে পুরোপুরি। তাইতো নগরবাসী শীতের প্রস্তুতিতে শুরু করে দিয়েছে ‘গরম কেনাকাটা’।

ফুটপাত থেকে আধুনিক বিপণিবিতানগুলোয় শীতের পোশাকের পসরা সাজিয়েছেন বিক্রেতারা। সাধ্য অনুযায়ী মার্কেট কিংবা ফুটপাত থেকে ক্রেতারা কিনে নিচ্ছেন পছন্দের শীতের পোশাকটি।

সব মিলিয়ে বিক্রিবাট্টা জমে উঠেছে বেশ।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, শীতের পোশাক কেনাকাটা করতে বিপনিবিতানগুলোতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভিড় আছে সাধারণ জনগণের। তবে শীতের তীব্রতা যতো বাড়াবে, তার সঙ্গে বাড়বে কেনাকাটাও।

মঙ্গলবার (১৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর নিউমার্কেট, আজিজ সুপার মার্কেট, বঙ্গবাজারের বিপণিবিতানগুলো এবং বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা যায়, হাল ফ্যাশনের শীতবস্ত্রের সমাহার ঘটিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা দোকান সাজিয়েছেন ফ্যাশন-সচেতন তরুণ-তরুণীদের কথা মাথায় রেখে।

এছাড়া মৌচাক, ইস্টার্ন প্লাজা, রাপা প্লাজা, সীমান্ত স্কয়ারের তুলনায় নিউমার্কেট, গাউছিয়া মার্কেট ও গুলিস্তানসহ অন্যান্য হকার্স মার্কেটগুলোতেই ক্রেতাদের আনাগোনা দেখা গেছে বেশি। দেদার বিক্রি হচ্ছে ফুটপাতের শীতবস্ত্রও। আর নামী-দামী শীতের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে ব্র্যান্ডের দোকানগুলোতেও।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ছেলেদের শীতের পোশাকে প্রতিবছরই কিছু নতুনত্ব থাকে। হাত কাটা সোয়েটার, মোটা জিপারের জ্যাকেট কিংবা হুডির পাশাপাশি পাঞ্জাবিদের মতো স্কার্ফ এখন বেশ জনপ্রিয়। এছাড়া ছেলেদের শীতের পোশাক হিসেবে এবার কটি চলছে বেশ। হালকা শীতে আরামদায়ক এবং যেকোনো অনুষ্ঠানে পরার উপযোগী এসব কটি তরুণদের প্রধান আকর্ষণ বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।

আরও আছে স্কার্ফের মতো করে গলায় অতিরিক্ত কাপড় পেঁচিয়ে প্রস্তুত করা ভিন্ন রকম ফ্যাশনেবল সোয়েটার ও জ্যাকেট। ছেলেদের মধ্যে কেউ বা বেছে নিচ্ছেন বিভিন্ন ধরনের শাল। সঙ্গে মানানসই স্কার্ফ অথবা মাফলার, উলেন ট্রাউজার আর সব বয়সী মানুষের জন্য শীতটুপি ও হাতমোজাও কিনছেন অনেকে।

এছাড়া ছেলেদের শীতের পোশাকের মধ্যে আছে নানা ধরনের সোয়েটার। গোল গলা, ভি গলা, চিকন কলারের এসব সোয়েটারে থাকছে বিভিন্ন ধরনের ডিজাইন। সামনের দিকে চেইন বা বোতাম আছে কিছু পোশাকে। নানা রঙের জ্যাকেটে খুঁজে পাওয়া যাবে বৈচিত্র্য। চামড়া, রেকসিন অথবা উলের তৈরি এসব জ্যাকেট। ডেনিম বা গ্যাবার্ডিন কাপড়ের ব্লেজারও আছে। আছে সামনে চেইন টানা নানা ধরনের সুপার হিরো বা কার্টুন আঁকা পোশাকও। গরম কাপড় কেনার ধুম, ছবি: শাকিল আহমেদপরিবর্তন এসেছে মেয়েদের শীতের পোশাকেও। শাল, কার্ডিগান ও সোয়েটারের পাশাপাশি এবারের শীতে মেয়েদের ফ্যাশন অনুসঙ্গ হিসেবে বাজারে আছে হাত কাটা হুডি, মোটা জিপারের হুডি জ্যাকেট, টপসের মতো লম্বা জ্যাকেট-সোয়েটার ও শীতের জন্য বিভিন্ন প্যাটার্নের মাফলার এবং স্কার্ফ। আছে তরুণীদের পছন্দ লম্বা ঝুলের পাতলা সোয়েটারও। গলাবন্ধ মাফলার ও স্কার্ফগুলো বেশ ফেশনেবল। এছাড়াও আছে মেয়েদের উলেন পাজামা।

রাজধানীর ইস্টার্ন মল্লিকা শপিং কমপ্লেক্সে এ ব্যাপারে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আকতারের সঙ্গে। বাংলানিউজকে তিনি বললেন, অল্প শীতে পাতলা সোয়েটার আরামদায়ক। এসব সোয়েটার জিনস ছাড়াও সালোয়ার-কামিজের সঙ্গে পরা যায়। আর এগুলো দামের দিক থেকেও বেশ সহজলভ্য। পাওয়া যায় ২৫০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে। এ ছাড়া উলের কার্ডিগান, ফুল ও কোয়ার্টার হাতার ক্যাজুয়াল ব্লেজার, সোয়েটার, ট্রাউজার, কোটসহ নানা ধরনের পোশাক এবারের শীতে তরুণীদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে বলেও জানান এই তরুণী। আর জানান, কম বয়সী মেয়েরা কোমরে বেল্ট রয়েছে এমন লম্বা কোট বা সোয়েটারের প্রতি বেশি আগ্রহী।

বাজারে শিশুদের জন্যও এসেছে বিভিন্ন ধরনের শীতের পোশাক। এগুলোর মধ্যে আছে ছয়মাস থেকে পাঁচ বছর বয়সীদের উলেন পোশাক। আর পাঁচ থেকে ১৩ বছর বয়সীদের জন্য সোয়েটার, হুডি ও জ্যাকেট পাওয়া যাচ্ছে পোশাকের দোকানগুলোতে।

নিউ মার্কেট, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট, আজিজ সুপার মার্কেট, নুরজাহান মার্কেট ঢাকার সবচেয়ে ব্যস্ততম এলাকা হিসেবে পরিচিত। নিউ মার্কেট ও এর আশপাশের মার্কেটে প্রায় সব ধরনের ক্রেতার উপযোগী পোশাক পাওয়া যায়। তাই এই মার্কেটে ভিড়ও বেশি। গরম কাপড় কেনার ধুম, ছবি: শাকিল আহমেদএখানে ছেলেদের ম্যাগিহাতা সোয়েটার পাওয়া যাবে ১৫০ থেকে ৫০০ টাকায়। ফুলহাতা সোয়েটার ২৫০ থেকে ৬০০ টাকায়। ছেলে ও মেয়েদের হুডি প্রতিটি ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকা। ছেলেদের কোট প্রতিটি ৮০০ থেকে ২৫০০ টাকা। এছাড়া ছেলে ও মেয়েদের চাদর ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা। স্কার্ফ ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা। মাফলার প্রতিটি ৭০ থেকে ৩০০ টাকা। মেয়েদের উলেন পাজামা ১৫০ থেকে ৬০০ টাকা। শীতের টুপি প্রতিটির মূল্য ৫০ থেকে ২৫০ টাকা। হাতমোজার মূল্য ৯০ থেকে ২৫০ টাকা।

বৃষ্টির পর বিকেলে নিউ মার্কেটে পোশাক কিনতে আসা সুলতানা আদনান বাংলানিউজকে বলেন, দু’দিনের বৃষ্টিতে শহরে শীতটা বেশ ভালোভাবেই নেমে এসেছে। তাই চলে এলাম শীতের পোশাক কিনতে। নিউ মার্কেটে সব ধরনের কাপড় পাওয়া যায় এবং এখানে দামও অন্যান্য মার্কেটের তুলনায় কম, তাই নিউমার্কেটেই আসা হয়।

প্রায় একই ধরনের দাম পড়বে বঙ্গবাজার ও গুলিস্তানের মার্কেটগুলোতেও। এ প্রসঙ্গে গুলিস্তানের কাপড় ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, এই মার্কেটে কাপড়ের মূল্য অন্যান্যের তুলনায় কম। তাই কম আয়ের মানুষের চাপ এখানেই বেশি। বেচা বিক্রিও অনেক ভালো। এছাড়া শীত যতো বাড়বে, বিক্রি ততো বাড়বে বলেও জানান তিনি।

বসুন্ধরা সিটি শপিং মল এবং যমুনা ফিউচার পার্ক থেকে শীতের পোশাক কিনতে হলে মূল্যটা গুনতে হবে একটু বেশি। তবে পণ্যগুলোও পাওয়া যাবে ব্র্যান্ডের। এ শপিং কমপ্লেক্সগুলোতে প্রতিটি ম্যাগিহাতা সোয়েটারে মূল্য ৮০০ থেকে তিন হাজার টাকা। ফুলহাতা সোয়েটার ১২৫০ থেকে সাত হাজার টাকা। মেয়েদের হুডিগুলো পাবেন ১২০০ থেকে ছয় হাজার টাকায়। এছাড়া ছেলেদের জ্যাকেট ২২০০ থেকে ১৭ হাজার টাকা। ছেলে ও মেয়েদের শাল বা চাদরের মূল্য ১৫০০ থেকে ২২ হাজার টাকা। ছেলেদের উলেন ট্রাউজার ৯০০ থেকে ১৮০০ টাকা। মেয়েদের উলেন পাজামা প্রতিটি ৬০০ থেকে ১২০০ টাকা। মাফলার মূল্য ৪০০ থেকে ১২০০ টাকা এবং স্কার্ফের দাম ৬০০ থেকে ১৫০০ টাকা।

বাংলাদেশ সময়: ২০১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৮
এইচএমএস/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।