ঢাকা, রবিবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৯ মে ২০২৪, ১০ জিলকদ ১৪৪৫

ফিচার

নগরজুড়ে সোনারঙা সোনালুর ঝলকানি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১০ ঘণ্টা, মে ২২, ২০১৯
নগরজুড়ে সোনারঙা সোনালুর ঝলকানি কার্জন হলে ফুটে আছে সোনারঙের সোনালু ফুল, ছবি: ডিএইচ বাদল

ঢাকা: পুরো গাছ থেকে হলুদ যেন বেয়ে বেয়ে পড়ছে। যেন হলুদরঙা কোনো স্বপ্ন! অথবা কোনো রূপসী কন্যা এইমাত্র যেন হলুদের পিঁড়িতে বসলো। সোনালু ফুলের ঝলমলে রূপ দেখলে মনে হবে এমনটাই।

গ্রীষ্মের এই সময়টাতে আশপাশ আলোকিত করে সোনারঙের সোনালু ফুলের গাছগুলো দাঁড়িয়ে আছে রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তার পাশে। কিশোরীর কানের দুলের মতো সোনালুর লম্বা ঝুলন্ত পুষ্পমঞ্জুরি বৈশাখী হাওয়ায় দুলতে থাকে সবাইকে দেখিয়ে দেখিয়ে।

আর সেই রূপ ওষ্ঠাগত প্রাণের রুক্ষতাকে ম্লান করে দেয় বর্ণিল ফুলের সমারোহে। কার্জন হলে ফুটে আছে সোনারঙের সোনালু ফুল, ছবি: ডিএইচ বাদলফুলটি নিয়ে বাংলাদেশ ন্যাশনাল হারবেরিয়ামের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম জানান, পূর্ব-এশিয়া থেকে আগত এ ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম 'ক্যাশিয়া ফিস্টুলা'। ইংরেজিতে একে 'ইয়োলো গোল্ডেন শাওয়ার' বলা হয়। এক সময় এ গাছ আমাদের উপমহাদেশে ছিল। মহাকবি কালিদাসের ‘মেঘদূত’ কিংবা ব্যাসের ‘ভগবত’ সবখানেই এ ফুলের গুণ-কীর্তন করা হয়েছে। দেশের গ্রামাঞ্চল ছাড়াও জাতীয় সংসদ ভবন, মিরপুর বোটানিক্যাল গার্ডেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনা পার্কসহ বিভিন্ন সড়কের মাঝপথে সোনালু ফুলের গাছ দেখা যায়। কার্জন হলে ফুটে আছে সোনারঙের সোনালু ফুল, ছবি: ডিএইচ বাদলসোনারঙের হলদে ফুলের গাছটি দেখতে মন্দ নয়। গ্রামবাংলায় এই সোনালু ফুল নানা নামে পরিচিতি পায় যেমন- সোনালু, সোনাইল, বান্দর-লাঠি নামে সবাই চেনে। তবে শীতকালে ফুলগুলো সৌন্দর্যমণ্ডিত বলে মানুষের মন কাড়ে। তখন এ গাছের সব পাতা ঝরে যায়। আর গ্রীষ্মের শুরুতে দু’একটি কচিপাতার সঙ্গে ফুটতে শুরু করে ফুল। দু’একটি কচি পাতার সঙ্গে হলুদ সোনালু রঙের অসংখ্য ফুল মানুষের দৃষ্টি কাড়ে। তাইতো এ ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হন অনেকেই। কার্জন হলে ফুটে আছে সোনারঙের সোনালু ফুল, ছবি: ডিএইচ বাদলতেমনি একজন সোনালুপ্রেমী সেজুতি আফরিন। সোমবার (২০ মে) বিকেলে রাজধানীর সংসদ ভবন এলাকায় ঘুরতে এসে প্রিয় ফুলটি নিয়ে ঢাকা সিটি কলেজের এই শিক্ষার্থী বলেন, ফুলগুলো যখন ফুটতে শুরু করে, তার সঙ্গে নতুন পাতার জাগরণ। দেখতে দেখতে ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় গাছ। পুষ্পিত সোনালু তখন যেন কাঁচা সোনা রঙে আবৃত। বেড়ে ওঠার সময় তেমন দৃষ্টিতে না পড়লেও ফুল ফোটার পর এর রূপ দেখে মন-প্রাণ প্রশান্তিতে ভরে যায়। আর হলুদবরণ সৌন্দর্য মাতোয়ারা করে রাখে চারপাশ। কার্জন হলে ফুটে আছে সোনারঙের সোনালু ফুল, ছবি: ডিএইচ বাদললাল কৃষ্ণচূড়ার ফাঁকে উঁকি দেওয়া বেগুনি জারুল ফুল ছাড়াও আপন মহিমায় ঝলমল করে সোনাঝরা সোনালু ফুল। গ্রীষ্মের প্রকৃতিতে গ্রামে একসময় অনেক সোনালু গাছ চোখে পড়তো। এছাড়াও হাট, বাজার ও গঞ্জের চারপাশেও দেখা যেত হলুদিয়া সাজের সোনালুর উপস্থিতি। এখন হাতেগোনা কিছু গাছ দেখা যায় পথে-প্রান্তরে।

দিন দিন কমে আসছে সোনালুর সংখ্যা। কারণ হিসেবে অনেকেই মনে করেন, এ গাছের কাঠ খুব একটা দামি নয় কিংবা গাছটি খুব ধীরে বাড়ে বলেই কেউ আর তেমন উৎসাহ নিয়ে সোনালু গাছ রোপণ করেন না। প্রাকৃতির ওপর ভর করেই হলুদ-সোনালি রঙের সৌন্দর্য বিতরণ করে অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে সোনালু। তবে ফুটন্ত সোনালুর দোল দেখে হৃদয়ে যে প্রকৃতির উষ্ণ অভ্যর্থনা জাগে, তার জন্য এই ইট কাঠের শহরেও মুখিয়ে থাকেন অনেকেই। কার্জন হলে ফুটে আছে সোনারঙের সোনালু ফুল, ছবি: ডিএইচ বাদলসোনালুর সোনারঙে মন ভরাতে চাইলে নগরবাসীর যেতে হবে বোটানিক্যাল গার্ডেন, সংসদ ভবন এলাকা, কার্জন হল, রমনা কিংবা সোহরাওয়ার্দী পার্কে।

বাংলাদেশ সময়: ১০০৬ ঘণ্টা, মে ২০, ২০১৯
এইচএমএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।