ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

করোনা পরিস্থিতি: ভালো থাকুক বৃদ্ধাশ্রমের প্রবীণরা

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ৭, ২০২০
করোনা পরিস্থিতি: ভালো থাকুক বৃদ্ধাশ্রমের প্রবীণরা

ঢাকা: নিবাসের বারান্দায় গ্রিলে হাত রেখে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছেন প্রায় ষাটোর্ধ দুই প্রবীণ নারী। চোখে তাদের আকাঙ্খা। সেদিকে তাকালেই বোঝা যায়, অপেক্ষার চোখ তাদের এতটাই ক্লান্ত যে, কোনো এক সন্তান বয়সী চোখের বন্দরে নোঙর করতে পারলেই মেলে ধরবেন হাজারো সুখ-দুঃখের গল্প।

তবে সে বন্দর সহজে মেলে না, আসে না ছেলে-মেয়ে বা প্রিয় পরিবারের কোনো সদস্যরা। আক্ষেপ থাকলেও সেটি এখন হাসিমুখেই সামলে নিতে শিখে গেছেন ভীষণ পারদর্শিতায়।

তাইতো দূর থেকেই মামতায় হাসেন, হাসির ভাষায় জানান দেন ‘ভালো থাকার’ বার্তা।

সম্প্রতি রাজধানীর আগারগাঁও প্রবীণ হিতৈষী সংঘ ঘুরে দেখা যায়, যে বয়সে দেশের এই প্রবীণ নাগরিকদের নাতি-নাতনিদের সঙ্গে সময় কাটানোর কথা, সে সময় কাটছে বৃদ্ধাশ্রমের আবদ্ধ গণ্ডির ভেতরে। আর দেশে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে তারাও আতঙ্কে সময় পার করছেন।  

করোনা পরিস্থিতির কারণে বর্তমানে এই সংঘে সংরক্ষিত করা হয়েছে প্রবেশাধিকার। ছুটি থাকার কারণে দেখা মেলেনি কোনো কর্মকর্তার। তাই এখানকার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বাংলানিউজের কথা হয় আগারগাঁও প্রবীণ হিতৈষী সংঘের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মী মো. শহিদুল ইসলামের সঙ্গে।  

বাংলানিউজকে তিনি জানান, করোনা পরিস্থিতিতে ছুটি থাকার কারণে এই মুহূর্তে সংঘে কোনো কর্মকর্তা উপস্থিত নেই। তবে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে সংঘের পক্ষ থেকে।

শহিদুল ইসলাম বলেন, করোনা ভাইরাস নিয়ে নিবাসের সকলকেই সচেতন করা হয়েছে এবং সকলেই সচেতন। তারা কেউই বর্তমানে বাইরে বেরুচ্ছেন না। একইসঙ্গে নিরাপত্তার স্বার্থে বন্ধ করা হয়েছে বহিরাগতদের আগমন। আর এখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বাইরে গেলেও বাধ্যতামূলকভাবেই মাস্ক এবং গ্লাভস ব্যবহার করছেন।

বর্তমান পরিস্থিতিতে নিবাসে বসবাসরত প্রবীণদের চিকিৎসাসেবার ব্যাপারে জানতে চাইলে এই নিরাপত্তা কর্মী বলেন, বর্তমানে ডাক্তাররা নেই। তারা ছুটিতে আছেন। তবে যাওয়ার আগে তারা তাদের মোবাইল নম্বর নোটিশ বোর্ডে দিয়ে গেছেন এবং যে কোনো পরিস্থিতিতে যোগাযোগ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।

সংঘে কোনো কর্মকর্তা নেই, এমন পরিস্থিতে নিবাসের খাদ্যের ব্যবস্থা কে দেখাশোনা করছেন জানতে চাইলে তিনি জানান, রান্নার জন্য যারা আছেন, তারাই বিষয়টি দেখাশোনা করছেন। আর নিবাসের অধিকাংশ প্রবীণই নিজে রান্না করে খান। বাকি যারা আছেন তারা মেসে খান। আর সাবধানতার জন্য সবাইকেই প্রতিদিন সচেতন করা হচ্ছে। আমরাও চাই সবাই ভালো থাকুক এবং করোনা পরিস্থিতিতে সবাই সচেতন আছেন বলেও জানান তিনি।

গেটের বাইরে থেকে ভেতরে তাকালে গ্রিলে হাত রেখে বারান্দা থেকে রাস্তায় একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকা মানুষগুলো দেখলেই বোঝা যায়, বাংলাদেশে পরিবার বিচ্ছিন্নতা বাড়ছে। বৃদ্ধ বয়সে এসে অনেককে পরিবারছাড়া হতে হচ্ছে। বাধ্য হয়ে ঠিকানা হিসেবে বেছে নিতে হচ্ছে বৃদ্ধাশ্রম। এই বাস্তবতায় প্রবীণ নিবাস বা বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যাও বাড়ছে। অনেকে বাণিজ্যিকভাবে বৃদ্ধাশ্রম খুলছেন। এ বৃদ্ধাশ্রমগুলো থেকে আয়ে কর অব্যাহতিও দেওয়া হয়েছে। তবে এই করোনা পরিস্থিতিতেও প্রবীণরা যেন পরম মমতায় একটু ভালো থাকেন সেটাই সবার প্রত্যাশা।

বাংলাদেশ সময়: ২১২২ ঘণ্টা, মার্চ ০৭, ২০২০
এইচএমএস/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।