ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

ঘাসের বিচিত্র ফুল ‘চোরকাঁটা’

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০২৪
ঘাসের বিচিত্র ফুল ‘চোরকাঁটা’ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে চোরকাঁটা। ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন 

মৌলভীবাজার: কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের ‘বীরপুরুষ’ কবিতার কথা হয়তো মনে আছে অনেকেরই। সাহসী এবং অদম্য ছেলে তার মাকে নিয়ে এগিয়ে চলেছে সুদূরের উদ্দেশ্যে।

পথে ডাকাতরা আটকায় তাদের গন্তব্যযাত্রা। সব কাহিনি শেষে ছেলেটি ডাকাতের সাথে লড়াইয়ের মাধ্যমে তাদের পরাজিত করে মাকে অবাক করে দেয়।

‘চোরকাঁটাতে মাঠ রয়েছে ঢেকে, মাঝখানেতে পথ গিয়েছে বেঁকে’, বীরপুরুষ কবিতার সেই বিখ্যাত লাইনটি পড়লেই ‘চোরকাঁটার’ কথা খুব সহজে মনে পড়ে যায়। আসলে কী সেই চোরকাঁটা? এ প্রশ্ন দেওয়া দেয় অনেকের মনে।  

এটি অদেখা বা দুষ্প্রাপ্য কোনো কিছুই নয়। এটি আমাদের প্রতিবেশী ঘাসজাতীয় উদ্ভিদ। চোরকাঁটা এক ধরনের ফুল। বলা যেতে পারে ঘাসের বিচিত্র ফুল। তবে সেই ফুল পাপড়িময় নয়। নয় সৌন্দর্যমুখর বা সৌরভশোভিত। এই ফুল আদ্যপান্ত কাঁটাযুক্ত।  

তবে কথা আছে! কাঁটা বলে কিন্তু লেবু বা গোলাপ গাছজাতীয় তীক্ষ্ম-তীব্র কাঁটা নয়। এই গুচ্ছময় কাঁটাগুলো মানুষের হাতে, পায়ে বা চামড়ায় বিঁধে না। এই কাঁটা খুব সহজেই বিঁধে যায় মানুষের পরিহিত পোশাকে। বেশির ভাগ সময়ই ফুলপ্যান্টের নিচের অংশে বিঁধে।

এই গ্রীষ্মঋতুতেই ওরা নিজেদের কাঁটাযুক্ত করে সাজিয়ে রেখেছে। ঘাসযুক্ত পথ দিয়ে আপনি যখনই অসাবধানতাবশত এগিয়ে যাবেন তখনই ওরা খুব স্বাভাবিকভাবে আপনাকে ঘিরে ধরবে! আপনার পরিহিত পেন্টে এসে বিঁধবে।  

ব্যাপারটি এত দ্রুতই হবে যে, আপনি টেরও পাবেন না। ওদের দলের ভেতর দিয়ে যতই অসাবধানতাবশত এগোতে থাকতেন ওরা ততই দলে দলে এসে আপনার পায়ের অংশের কাপড়ে বিঁধতে কোনো কার্পণ্য করবে না।  

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ (১২ খণ্ড) থেকে জানা যায়, ‘চোরকাঁটা’র বৈজ্ঞানিক নাম Chrysopogon aciculatus। এরা Poaceae পরিবারের উদ্ভিদ। চোরকাঁটার আঞ্চলিক নাম প্রেমকাঁটা, লেংরা প্রভৃতি। বাংলাদেশের সর্বত্রই পাওয়া যায়। পথিপার্শ্ব, পদদলিত তৃণভূমি ও চারণভূমিতে এদের দলগত বিস্তার। ভারত, চীন, অস্ট্রেলিয়া ও অন্যান্য গ্রীষ্ম প্রধান দেশগুলোতে এদের বৈশ্বিক অবস্থান।  

পুষ্পবিন্যাস পিরামিডের ন্যায় আকার বিশিষ্ট পেনিকল, ৪-১০ সেমি লম্বা, শক্ত, লালাভ, আরোহী শাখাযুক্ত, স্পাইকলেট সহজেই সন্ধিস্থল থেকে পৃথক হয়। অবৃন্তক স্পাইকলেট সরু উপবৃত্তাকার, ৩-৫ মিনি লম্বা, পরিঘাত কলা পর্বলগ্ন, সূচ্যাকার, সবৃন্তক স্পাইকলেট ভলাকার বা রৈখিক-ভল্লাকার ৪-৫ মিমি লম্বা, শূকবিহীন, বৃন্ত ২-৩ মিমি লম্বা, চ্যাপটা, রোমাশবিহীন।


 
চোরকাঁটা অনেকের কাছেই খুব বিরক্তিকর এক ব্যাপার! কেননা, বাসায় এসে সেই কাঁটাগুলো একটা একটা করে প্যান্ট থেকে তুলে তুলে ফেলে দিতে বেশ কিছু সময়টা ব্যয় হয়ে যায়। তখন আপনার যত তাড়াহুড়ো থাকে বিরক্তির মস্তিস্করেখা ততই প্রগাঢ় হয়। তবে অন্যভাবে দেখলে, ব্যস্ততম জীবনযাপনের মাঝে এ যেন প্রকৃতিবিষয়ক এক অন্য রকমের স্পিডব্রেকার! 

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০২৪ 
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।