গ্রীষ্মের কাঠফাটা রোদ বা বর্ষার মুষলধারে বৃষ্টি প্রকৃতির এই দুই রূপের মধ্যেই জীবিকা খুঁজে নিয়েছেন হাফিজুর রহমান। বর্ষা এলেই বিল-ঝিল আলো করে ফোটে আমাদের জাতীয় ফুল শাপলা, যা দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি এর ভেষজ গুণ ও খাদ্যমূল্যও অপরিসীম।
বাংলাদেশের বিভিন্ন ঋতুতে নানা ফুল ফুটলেও বর্ষার সঙ্গে শাপলার সম্পর্ক নিবিড়। সাধারণত সাদা, লাল ও বেগুনি—এই তিন রঙের শাপলা দেখা যায়। এদের মধ্যে লাল শাপলার সৌন্দর্য মুগ্ধ করে দর্শনার্থীদের, আর এর রয়েছে ওষুধি ব্যবহারও। রূপগঞ্জের চানপাড়া পূর্বগ্রাম, বড়আলু, মাঝিনা, নগরপাড়াসহ খাল-বিলের বিস্তীর্ণ এলাকায় বর্ষার পানিতে শাপলা ফোটে।
শাপলা কেবল ফুল নয়, এটি খুবই পুষ্টি সমৃদ্ধ একটি সবজি। সাধারণ শাক-সবজির চেয়ে এর পুষ্টিগুণ বেশি হলেও দাম কম। তাই নিম্নবিত্তদের কাছে এর চাহিদা ব্যাপক, যদিও স্বাদের কারণে ধনীরাও এটি পছন্দ করেন।
পেশায় ভ্যানচালক হলেও বর্ষা মৌসুমে ঝড় বৃষ্টির কারণে ভ্যান চালানো ব্যাহত হয় হাফিজুরের। ঠিক তখনই তিনি ভিন্ন পথে রোজগার শুরু করেন। প্রতিদিন সকাল থেকে তিনি রূপগঞ্জের বিভিন্ন বিল-ঝিলে ঘুরে ঘুরে শাপলা সংগ্রহ করেন। এরপর সেগুলো আঁটি বেঁধে মুড়াপাড়া, চনপাড়া, পূর্বগ্রাম, এবং পশ্চিমগাঁও বাজারে বিক্রি করে সংসার চালান।
শাপলা সংগ্রহকারী হাফিজুর রহমান জানান, তিনি ৮ থেকে ১০টি শাপলা নিয়ে একটি আঁটি তৈরি করে গ্রামের বাজারে ২০ টাকায় বিক্রি করেন। তবে শহর থেকে আসা দর্শনার্থী ও যাত্রীদের কাছে এই শাপলা বিক্রি করেন ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। তার মতে, শহরের মানুষ শাপলা তেমন দেখতে পান না, তাই খুশি মনেই বেশি দামে কিনে নেন। সবমিলিয়ে, দিন শেষে তার আয় ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা হয়।
রূপগঞ্জের কিছু কিছু এলাকায় লাল শাপলাও ফোটে, যা দেখতে ঢাকা থেকেও ছুটে আসেন দর্শনার্থীরা। বিশেষ করে দাউদপুর ইউনিয়নের জিন্দা মধ্যপাড়া ও শিমুলিয়া এলাকায় এবং পূর্বাচল সংলগ্ন নিঝুম পল্লী রিসোর্টের শাপলা বিলে লাল শাপলার প্রাচুর্য দেখা যায়। সৌন্দর্য আর জীবিকার এই মেলবন্ধনই বর্ষার রূপগঞ্জকে করে তুলেছে আরও বিশেষ।
শাপলা সংগ্রহ করে জীবনধারণ করা হাফিজুর রহমানরা প্রমাণ করেন যে, প্রকৃতি শুধু সৌন্দর্যই দেয় না, সুযোগমতো জোগান দেয় জীবনের রসদও।
এএটি