দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দেশ শ্রীমঙ্গল। প্রায় দেড় শতাধিক বছরের প্রাচীন চা শিল্পের ঐতিহ্যের গৌরব বহনকারী এবং প্রকৃতির নিজ হাতে গড়া দৃষ্টিনন্দন শহর শ্রীমঙ্গল।
অপরূপ নৈসর্গিক ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি শ্রীমঙ্গলের চা বাগানের মধ্যে বয়ে চলা আঁকা-বাঁকা কিংবা উঁচু-নিচু মেঠোপথ, পাহাড়ি টিলাময় সৌন্দর্য, বিভিন্ন প্রজাতির গাছ-গাছালি ও বন্যপ্রাণী সমৃদ্ধ শহর।
এখানে রয়েছে উঁচু-নিচু টিলা-পাহাড় ঘেরা বৈচিত্র্যময় চা বাগান, প্রাকৃতিক অপূর্ব শোভা এবং চা কন্যাদের চা পাতা তোলার অপূর্ব দৃশ্য উপভোগ করতেই এখানে সারাদেশ থেকে ছুঁটে আসছেন পর্যটকরা। ১৯৫৭ সালে বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) এখানে গড়ে উঠেছে বলে শ্রীমঙ্গলকে বলা হয় চায়ের রাজধানী।
‘শ্রী’ মানে সুন্দর আর ‘মঙ্গল’ মানে কল্যাণ। অর্থাৎ যে সুন্দরের সাথে কল্যাণ সংযুক্ত সেটাই শ্রীমঙ্গল নামের অর্থ হিসেবে জানান দেয়। উঁচু-নিচু পাহাড় ঘেরা বন-বনানী আর নীল আকাশের সাথে যেন সবুজ পাহাড়ের মিতালী। নিজ চোখে না দেখলে অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। এই বিচিত্র রূপ আর সৌন্দর্য একনজর দেখার জন্য প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ ছুটে আসেন চায়ের দেশ শ্রীমঙ্গলে।
সম্প্রতি এক পড়ন্ত বিকেলে চা বাগান ঘুরে গেল, শত-সহস্র দুটি পাতা একটি কুঁড়ি চোখ মেলে তাকিয়ে আছে শরতের আকাশের দিকে। এ যেন চা বাগানের প্রকৃতিতে কালচে-সবুজের অপূর্ব সংমিশ্রণ। পাকা সড়কের দুই দিকে অগ্রসর হলেই দেখা যায়, দুই দিকে সারি সারি চা গাছ সমানভাবে বিছানো রয়েছে। এই দৃশ্য এতটাই শোভাবর্ধিত যে চোখ ফেরানো যায় না কিছুতেই।
চা বাগানের নিজস্ব এক যানবাহনের নাম ‘ট্রাক্টর’। বিকেলের ছায়াঘেরা পাকা পথের অপূর্ব সৌন্দর্যের ভেতর দিয়ে হঠাৎ কোনো এক ট্রাক্টর প্রচণ্ড শব্দে এগিয়ে যায় চা বাগানের ফ্যাক্টরির দিকে।
পুরান ঢাকার দয়াগঞ্জ থেকে আসা ডা. সেলিম বলেন, আমি এক ধরনের ভ্রমণপিপাসু মানুষ। দেশে ৬৪ জেলার মধ্যে প্রায় ৫০টির অধিক জেলায় ঘুরেছি। তবে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল আসা হয়নি। এবারই প্রথম এলাম। শ্রীমঙ্গলের চা বাগানের সৌন্দর্য দেখে আমি আমার পরিবার ভীষণভাবে মুগ্ধ।
শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবা সংস্থার সভাপতি এবং গ্র্যান্ড সেলিম রিসোর্টের স্বত্বাধিকারী সেলিম আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, চা বাগান, উঁচু-নিচু টিলা, পাহাড়ি ঝরনা পাহাড়ি লেক এগুলোকেই পর্যটকরা পছন্দ করেন এবং তারা শ্রীমঙ্গলে বেড়াতে আসেন। মূলত আরেকটি কারণে পর্যটকরা শ্রীমঙ্গলকে বেছে নেন, সেটা হলো শ্রীমঙ্গলে অবস্থান করে শ্রীমঙ্গলের সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপাশি সিলেটের বিভিন্ন পর্যটনস্পটও তারা ঘুরে দেখার সুযোগ পান। মানুষ এখন একটু শান্তিতে ঘুরতে চায়, একান্তে সময় কাটাতে চায়, যেটা শ্রীমঙ্গলের বিশাল প্রাকৃতিক পরিবেশ সেই সুযোগটুকু সহজেই তারা পেয়ে যান।
আরেকটি প্রস্তাবের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের এখানে সমৃদ্ধ হাওর-বিল রয়েছে। পর্যটকরা এগুলোর সৌন্দর্যও উপভোগ করতে চান। সেক্ষেত্রে প্রশাসনের পক্ষ থেকে যদি বিলের একটি সুনির্দিষ্ট জায়গাকে চিহ্নিত করে বসার সুব্যবস্থা করে দেওয়া, তাহলে পর্যটকরা হাওলের অস্তগামী সূর্যের দারুণ দৃশ্য উপভোগ করা সুযোগ পেতে পারেন।
শ্রীমঙ্গলে যে পাহাড়-টিলাগুলো বা প্রাকৃতিক জায়গাগুলো রয়ে গেছে সেগুলো যদি আমরা যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে পারি এবং এখানকার অভ্যন্তরীণ যেসব রাস্তার সমস্যা রয়েছে যেগুলো সমাধানে প্রশাসন যদি দ্রুত এগিয়ে আসে তাহলে ভবিষ্যতে আরও ব্যাপক সংখ্যক পর্যটকের সমাগম ঘটবে বলে জানান সেলিম আহমেদ।
বিবিবি/এএটি