ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

মুক্তিযুদ্ধের বর্বরতার ইতিহাস ‘বধ্যভূমিতে একদিন’

ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫০৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০২০
মুক্তিযুদ্ধের বর্বরতার ইতিহাস ‘বধ্যভূমিতে একদিন’ প্রামাণ্যচিত্রের উদ্বোধনী প্রদর্শনীতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। ছবি: ডি এইচ বাদল

ঢাকা: একাত্তরের গণহত্যা নিয়ে ‘বধ্যভূমিতে একদিন’ প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন নির্মাতা কাওসার চৌধুরী। এক ঘণ্টা ৫৬ মিনিট ব্যাপ্তির এ প্রামাণ্যচিত্রে তিনি তুলে ধরেছেন বধ্যভূমি হিসেবে উল্লেখিত দেশের গণকবর, মজে যাওয়া নদী, জলাধার, জলাশয়, পাতকুয়া বা ইঁদারা, শহর ও শহরতলীর পরিত্যক্ত স্থান যেখানে হত্যাকারীরা শহীদদের দেহগুলো ফেলে দিয়েছিল।

প্রামাণ্যচিত্রটিতে প্রত্যক্ষদর্শী, বীরাঙ্গনা ও মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে ফেরা মানুষসহ সংস্কৃতিকর্মী, সাংবাদিক, ইতিহাসবিদ, মুক্তিযুদ্ধ গবেষকদের ভাষ্য চলচ্চিত্রের ক্যানভাসে চিত্রিত করা হয়েছে।

বুধবার (৩০ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় প্রামাণ্যচিত্রটির উদ্বোধনী প্রদর্শনী। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোজাম্মেল হক বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময়কার বর্বরতার ইতিহাস সংরক্ষণের বিষয়টি যেখানে আমাদের অনেক কম, সেখানে এ প্রামাণ্যচিত্রে যে সেসব বিষয় গুরুত্বভরে তুলে ধরা হয়েছে, এটা অনেক বড় ব্যাপার। আমাদের অনেক কিছুই আছে। তবে তা বিস্মৃত। গণহত্যার নির্মমতা যেখানে সঠিকভাবে বোঝা যায় না সেখানে এ প্রামাণ্যচিত্র থেকে কিছুটা ধারণা পাওয়া যাবে।

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি ক্ষমতায় থেকে এখনও আমাদের পাকিস্তানি দোসরদের আস্ফালন শুনতে হয়। এটা আমাদের ব্যর্থতা। গণহত্যাসহ মুক্তিযুদ্ধের আরও কিছু বিষয় নিয়ে বিষয়ভিত্তিকভাবে আমরা বেশ কিছু প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থী থেকে তরুণদের উপযোগী করে এ প্রামাণ্যচিত্রগুলো নির্মাণ করা হবে এবং তা তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়া হবে।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের কাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্ব এবং পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বর্বরতার চিত্র, তারা কি করেছিল সেসব পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভূক্তির চেষ্টা করা হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থী উভয় দিক জানবে এবং নিজে সিদ্ধান্ত নিতে শিখবে কোন দিকটি তাদের গ্রহণ করা উচিত।

‘বধ্যভূমিতে একদিন’ প্রামাণ্যচিত্রটির উদ্বোধনী প্রদর্শনীতে অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ম. হামিদ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, শিল্প-সমালোচক মইনুদ্দিন খালেদ ও বাংলাদেশ প্রামাণ্যচিত্র পর্ষদের সভাপতি ফরিদুর রহমান।

আলোচনায় অংশ নিয়ে অতিথিরা তাদের বক্তব্যে বলেন, আমরা যেবিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম তা অনেকটা কাওসার চৌধুরী করে ফেলেছেন। দালিলিক সংরক্ষণ চলচ্চিত্রের ভাষায় সংরক্ষিত হলে অধিক মানুষকে সম্পৃক্ত করা যায়। আমাদের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রামাণ্যচিত্রগুলো নিয়েও একটি বিশ্লেষণ হওয়া প্রয়োজন এবং সেগুলো শুধু টেলিভিশনে নয়, সরসারি প্রদর্শন করা উচিত।

তারা আরও বলেন, আমাদের নতুন প্রজন্মের মধ্যে বোধ জাগাতে হবে, আমরা যেখানে পা রাখি সেখানেই শহীদদের রক্ত আছে। এছাড়া আমাদের তরুণদের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস না জানার কারণেই তাদের মধ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছে।

‘বধ্যভূমিতে একদিন’ প্রামাণ্যচিত্রটি নির্মাণ করতে সময় লেগেছে প্রায় আড়াই বছর। এতে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার বধ্যভূমি ও সেখানকার ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। প্রামাণ্যচিত্রটিতে চিত্রিত করা হয়েছে গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী, বীরাঙ্গণা ও মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে ফেরা মানুষসহ বিভিন্ন সংস্কৃতিকর্মী, সাংবাদিক, ইতিহাসবিদ, মুক্তিযুদ্ধ গবেষকদের ভাষ্য।

প্রামাণ্যচিত্রটি নিয়ে এর নির্মাতা কাওসার চৌধুরী বলেন, স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরে একাত্তরের গণহত্যার কথন সংগ্রহের কাজটি এ প্রামাণ্যচিত্রের মাধ্যমে কিছুটা এগিয়ে রাখার চেষ্টা করেছি। বাকি কাজটুকু সম্পন্ন করার দায়িত্ব নতুন প্রজন্মের। তারা তাদের জন্মের ঋণ বিবেচনায় এ কাজটি আন্তরিকতা, সততা ও বস্তুনিষ্ঠতার সঙ্গে সম্পন্ন করবে এটাই তাদের প্রতি আমার প্রত্যাশা।

বাংলাদেশ সময়: ০৫০৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০২০
এইচএমএস/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।