ঢাকা: পৌষ-মাঘকে সঙ্গী করে বিদায় নিয়েছে শীত। ঋতুচক্রের পরিক্রমায় শীতের বিদায়ঘণ্টা বাজলেও রয়ে গেছে উৎসবের আমেজ।
মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় শিল্পকলা একাডেমির উন্মুক্ত প্রান্তরে বিরাজ করছিল ভিন্ন আমেজ। মঞ্চ থেকে ভেসে বেড়াচ্ছিল লোকসঙ্গীতের সুর। তাকে সঙ্গী করে এ দোকান থেকে সে দোকানে ঘুরছিলেন দর্শনার্থীরা। দেখছিলেন নানা রকমের পিঠা। পিঠাশিল্পীরাও ব্যস্ত ছিলেন তাদের রসনা মেটাতে।
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতায় উৎসবের আয়োজন করেছে জাতীয় পিঠা উৎসব উদযাপন পরিষদ। বিকেলে শিল্পকলা একাডেমির কফি হাউজের সামনে উন্মুক্ত মঞ্চে উৎসবের উদ্বোধন হয় বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। অতিথি ছিলেন নাট্যজন আতাউর রহমান ও নৃত্যগুরু আমানুল হক। উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক ও শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন পরিষদের সভাপতি ম. হামিদ। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন একাডেমির সচিব নওসাদ হোসেন। স্বাগত বক্তব্য দেন উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার শাহ্ আলম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কে এম খালিদ বলেন, সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণসহ নানা কারণে এখন আর গ্রামেগঞ্জে সেভাবে পিঠা উৎসব হয় না। সেই উৎসবটি এখন শহরের চার দেয়ালের মধ্যে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এটা ভালো দিক। অন্তত এই উৎসবের কারণে আমরা আমাদের গ্রামের পিঠাপুলির সেই ঘ্রাণ ও স্বাদ নিতে পারছি।
আতাউর রহমান বলেন, কথায় বলে ‘জীবন চর্চা নয়, জীবন চর্যা’। আমাদের এই জীবন চর্যার এক বিরাট উৎসব হলো পিঠা উৎসব। এটা আমাদের জাতির একটা পরিচয়ও বটে। পৃথিবীর অনেক দেশে পিঠা-পায়েশ আছে। উৎসবও হয়। কিন্তু কোথাও আমাদের দেশের মতো এত বাহারি পিঠা-পুলি কিংবা পায়েশ নেই। এই মহামারির দিনেও এই পিঠা উৎসব হচ্ছে, এটা আমার কাছে খুব আনন্দের।
আমানুল হক বলেন, পিঠা আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির একটা অংশ। আমাদের এই ঐতিহ্যকে যদি তরুণ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে না পারি তাহলে আমরা পিছিয়ে যাব। সুতরাং এ ধরনের আয়োজনের মাধ্যমে আবহমান গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যকে তুলে ধরা জরুরি।
লিয়াকত আলী লাকী বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতির মধ্যে এই পিঠা উৎসব করতে পেরে আমরা আনন্দিত। করোনা সংক্রমণ প্রতিকারের যে নিদের্শনা আছে, আমরা সবাই সেই নিদের্শনা মেনে এই পিঠা উৎসবে আসব। এ দেশের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির অনন্য উপদান পিঠার স্বাদ নেব।
এবারের উৎসবে প্রায় ৫০টি স্টলে প্রায় ২০০ পদের পিঠা নিয়ে হাজির হয়েছেন দেশের নানা প্রান্তের পিঠাশিল্পীরা। এসব স্টলে ঠাঁই পেয়েছে বিচিত্র স্বাদ ও নকশার রকমারি পিঠা। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, ঝাল পিঠা, মালপোয়া, মেড়া পিঠা, মালাই পিঠা, মুঠি পিঠা, আন্দশা, কুলশি, কাটা পিঠা, কলা পিঠা, খেজুরের পিঠা, ক্ষীর কুলি, গোকুল পিঠা, গোলাপ ফুল পিঠা, লবঙ্গ লতিকা, রসফুল পিঠা, সুন্দরী পাকান, সরভাজা, পুলি পিঠা, পাতা পিঠা, পাটিসাপটা, পাকান পিঠা, নারকেলের সেদ্ধ পুলি, নারকেল জিলাপি, তেজপাতা পিঠা, তেলের পিঠা, দুধরাজ, ফুলঝুরি পিঠাসহ নানান নকশি ও বাহারি নামের পিঠা।
আগামী ৫ মার্চ শেষ হবে পিঠা উৎসব। প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে পিঠা খাওয়ার এ আয়োজন। বাহারি পিঠার সঙ্গে উৎসব আঙিনায় প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে অনুষ্ঠিত হবে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। তারই অংশ হিসেবে উদ্বোধনী আয়োজন শেষে উৎসব মঞ্চে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বিভিন্ন সংগঠনের শিল্পীরা পরিবেশনায় অংশ নেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২১
এইচএমএস/এমজেএফ