ঢাকা, শুক্রবার, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

শতবর্ষের চিতই উৎসব

এইচ এম লাহেল মাহমুদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১, ২০২২
শতবর্ষের চিতই উৎসব

পিরোজপুর: পিরোজপুরের নাজিরপুরে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল শতবর্ষের চিতই উৎসব। প্রচণ্ড শীত উপেক্ষা করে হাজারো মানুষের ভিড় দেখা যায় এ উৎসবকে ঘিরে।

সোমবার (৩১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় শুরু হওয়া এ অনুষ্ঠান চলে মঙ্গলবার (০১ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টা পর্যন্ত।  

উপজেলার সদর ইউনিয়নের কুমারখালী বাজার সংলগ্ন দেবলাল চক্রবর্তীর বাড়ির কালি মন্দিরে এ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। দেশের বিভিন্ন
স্থান থেকে ওই মন্দিরের ভক্তসহ বিভিন্ন লোকজন প্রতি বছরের মাঘ মাসের অমাবশ্যা তিথিতে সেখানে আসেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সেখানে স্থানীয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা হাজারো নারী-পুরুষের উপচে পড়া ভিড়। একটি মাঠে সারি সারি করে তৈরি করা হয়েছে ১০৮টি মাটির চুলা। চুলার উপরে রাখা আছে কাঁচি খোঁচা পিঠা তৈরির সাজ। সন্ধ্যা ৭টার দিকে অনুষ্ঠানিকভাবে  শুরু করা হয় পিঠা তৈরি। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা নারীরা এ পিঠা তৈরিতে অংশ নেন। একটি বড় বট গাছের উপরেও স্থাপন করা হয়েছে পৃথক ১০টি চুলা। সেখানেও ১০ জন ভক্ত এ পিঠা তৈরির কাজ করছেন। তৈরি করা পিঠা সেখানে আগত ভক্ত ও দর্শকদের খেতে দেওয়া হয়।

ওই মন্দিরের পুরোহিতের দায়িত্বে থাকা দেবলাল চক্রবর্তী জানান, গত প্রায় শত বছর আগে থেকে তার পূর্ব পুরুষ হরষিত আনন্দ চক্রবতী এ মেলার আয়োজন করেন। এখানে প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ভক্তরা যোগদান করেন। তারা তাদের মনোবাসনা পূরণের জন্য এখানে মানত করেন। আর তাদের মনোবাসনা পূর্ণ হলে এখানে এ চিতই উৎসবে যোগ দেন।  

তিনি আরও জানান, সন্ধ্যা ৭টায় বিশেষ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পিঠা উৎসব শুরু হয়। চলে সারারাত ও পরের দিন সকাল ১০টা পর্র্যন্ত। পরে সকালে খিচুড়ি অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তা শেষ হয়। ১০৮টি চুলায় চিতই পিঠা (কাঁচি খোচা পিঠা) তৈরি হয়।

একটি মাঠে সারি করে তৈরি ওই সব চুলায় মাটির তৈরি সাজে চালের গুড়া দিয়ে পিঠা তৈরিতে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা নারী ভক্তরা। এ উৎসবকে স্থানীয়ভাবে চিতই উৎসব বলে।

ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার স্কুল শিক্ষিক তিথি বিশ্বাস (৫০) জানান, তিনি ছোট থেকে তার বাবা-মার সঙ্গে
প্রতি বছরের মাঘ মাসের অমাবশ্যা তিথিতে এ পিঠা উৎসবে এখানে আসেন। এখানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নারী-পুরুষ অংশ নেন। এদের কেউ কেউ তাদের মনোবাসনা পূরণের জন্যও এ পিঠা উৎসবে যোগ দেন।

বাগেরহাটের চিলমারী উপজেলার সন্তোষপুর গ্রামের পংকজ কান্তি জানান, বিয়ের প্রায় ১৫ বছরেও স্ত্রীর কোনো সন্তান হচ্ছিল না। এখানে মানৎ করলে স্রষ্টার কৃপায় পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। তাই এ সন্তান নিয়ে এখানে এসেছি।

নাজিরপুর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শেখ মো. মোস্তাফিজুর রহমান রঞ্জু জানান, এটি এই অঞ্চলের একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব। প্রতি বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় এখানে এ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নারী-পুরুষরা অংশ নেন।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. জুলহাস উদ্দিন সান্টু জানান, এখানকার এই পিঠা উৎসব একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব হিসেবে পরিণত হয়েছে। শত বছরের এ উৎসব সম্পর্কে আমরা আমাদের পূর্ব পুরুষের কাছ থেকে জেনেছি। এ উৎসবে আমরা স্থানীয়রাও বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে থাকি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।