হবিগঞ্জ: কালের বিবর্তনে বাঙালির ঐতিহ্যবাহী মোরগ লড়াই হারিয়ে গেলেও এখনও অনেক অঞ্চলে খেলাটির অল্প-স্বল্প প্রচলন রয়ে গেছে। লড়াইয়ের জন্য বিখ্যাত একটি মোরগের নাম ‘আঁচিল’।
অঞ্চল বেঁধে সেটিকে ‘সরাইল্য’ বা হাসলি মোরগ বলেও ডাকা হয়। যুদ্ধক্ষেত্রে এরা দুর্ধর্ষ, ক্ষিপ্র ও কষ্টসহিষ্ণু। পিছু হটে না লড়াই শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত।
শুধু সৌখিন তাই নয়, এ মোরগ ভালো আয়ের উৎসও বটে। একেকটি মোরগ বিক্রি হয়ে থাকে ২৫ থেকে ৪০ হাজার টাকায়। পাঁচ থেকে সাত কেজি ওজন হয় এদের।
হবিগঞ্জ শহরতলীর মাছুলিয়া এলাকার বাসিন্দা রাজু মিয়া নামে এক যুবক ছয়টি হাসিল মোরগ লালন-পালন করেছেন। খামারে তিনি মোরগের সংখ্যা আরও বাড়াবেন।
রাজু মিয়া জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল থেকে তিনি ছোট অবস্থায় ছয়টি মোরগ কিনেছিলেন। সবগুলো এখন বড় হয়ে গেছে। একটি মোরগের নাম দিয়েছেন ‘যোদ্ধা’। মোরগটি এ পর্যন্ত পাঁচটি লড়াইয়ে অংশ নিয়েছে। যোদ্ধা সিলেট ও মৌলভীবাজারে দুইটি লড়াইয়ে জিতে ফ্রিজ ও নগদ টাকাসহ বিভিন্ন পুরস্কার পেয়েছে। বাকি তিনটিতেও অন্য বিভিন্ন পুরস্কার পায়।
ফ্রিজ পাওয়ার পর সেখানকার একজন ৩০ হাজার টাকায় মোরগটি কিনতে চেয়েছিলেন। ৪০ হাজার টাকা পেলে যোদ্ধাকে বিক্রি করবেন বলে রাজু জানান।
তিনি জানান, এ মোরগের জন্য আলাদা কোনো ধরনের খাবার দিতে হয় না। এদের খাদ্যাভ্যাস সাধারণ মোরগের মতই। মাঝেমধ্যে মোরগগুলোর চিকিৎসার জন্য তিনি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের স্মরণাপন্ন হন।
সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা শামীম চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ভারতীয় উপমহাদেশে এই মোরগ বেশ বিখ্যাত। পাঞ্জাব, গুজরাট, দিল্লি, লখনৌ এবং হায়দ্রাবাদে এখনও বেশ জনপ্রিয় এই ফাইটার মোরগ। এরা বিখ্যাত উচ্চতা, ক্ষিপ্রতা, দৈহিক শক্তি ও কষ্ট সহিষ্ণুতার জন্য বিখ্যাত।
বাংলাদেশে পুরান ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এই মোরগের লড়াই বেশ জনপ্রিয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের এসব মোরগ বেশি পাওয়া যায়। মোরগগুলোকে সরাইল্যা মোরগ বলেও ডাকা হয়। এগুলোকে হাসলি মোরগ বা আসলি মোরগও বলা হয়।
অত্যন্ত দুর্ধর্ষ ও কষ্ট সহিষ্ণু হিসেবে এরা পরিচিত। এ মোরগগুলো প্রতিপক্ষকে যেভাবে আক্রমণ করে এর আলাদা আলাদ নাম আছে। সেগুলো- নিম, কারি, বাড়ি, ফাঁক, ছুট ও কর্নার। এগুলো লড়াইয়ে পিছু হটে না। শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২২
এএটি