ঢাকা, শুক্রবার, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

মিশরীয় চিত্রশিল্পী সামার কামেলের গল্প

সাইফুর রহমান তুহিন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৫ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০২২
মিশরীয় চিত্রশিল্পী সামার কামেলের গল্প নিজ স্টুডিওতে শিল্পী সামার কামেল

চিত্রকর্মে টিস্যু পেপার, নেইল পলিশ ও টি-ব্যাগ ব্যবহারের মাধ্যমে বৃহত্তর সমাজকে ব্যতিক্রমী উপায়ে একটি বার্তা পৌঁছে দেন চিত্রশিল্পী সামার কামেল। ত্রিশ বছর আগে স্বামীকে নিয়ে দুবাইতে বসতি গড়েন মিশরীয় এই চিত্রশিল্পী।

যখন চিত্রকর্মে টি-ব্যাগ ব্যবহারের চিন্তা তাঁর মনে উঁকি দেয় তখন তিনি তাঁর স্টুডিওতে এক কাপ চায়ের স্বাদ উপভোগ করতে বসেন। স্টুডিওতে বসে সংবাদমাধ্যমকে কামেল বলেন—“টি-ব্যাগ কিছুটা দ্বিধা-দ্বন্দ্বের জন্ম দেয়। আমি এটিকে সূর্যের আলোর নিচে রাখলাম এবং তার রং আমাকে মুগ্ধ করলো। ব্যাগটি শুকিয়ে যাওয়ার পর এটিকে আমি আমার ক্যানভাসে ব্যবহার করি এবং এই কাজের ফলাফল ছিল আমার জন্য ভালোলাগার। আমি এটি আবিষ্কার করলাম ঘটনাচক্রে। ”

তিনি বিশ্বাস করেন, যেকোনো শিল্পী তার চিত্রকর্মে যেকোনো উপাদান ব্যবহার করতে পারেন। ব্যাপারটি শুধু নিজেকে প্রকাশ করার জন্য নয়, এর পাশাপাশি বিশ্ব সমাজকে একটি বার্তা দেওয়ার জন্য।

“আমি আমার কাজে মিশ্র উপাদান ব্যবহার করতে পছন্দ করি। তাই আমি ব্যবহার করি ফ্রেব্রিক, সংবাদপত্র, নেইল পলিশ, টিস্যু পেপার এমনকি টি-ব্যাগ, যা এখন আমার কাজের ট্রেডমার্ক স্টাইলে পরিণত হয়েছে”।

ওয়ার্ল্ড আর্ট দুবাই (ডব্লুউএডি) এর তত্ত্বাবধায়ক এই শিল্পী দুটি বইয়েরও রচয়িতা। একজন লেখক হিসেবে কামেল সেইসব কাজের জন্য পরিচিত যা নারীদের প্রতি সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গি পর্যবেক্ষণ এবং জীবন্ত চিত্রায়নের মাধ্যমে আধুনিক নারীদের মনে তাদের বিশ্বাসকে পরিবর্তনের চেষ্টা করে। তার প্রয়াত পিতা একজন চিত্রশিল্পী ছিলেন বলে তিনি বেড়ে উঠেছেন চিত্রকর্ম আর রঙের মধ্যেই।

কামেল আরও বলেন, “শৈশবকালে আমি সাহিত্য পাঠেই বেশি আগ্রহী ছিলাম, চিত্রকলা নয়। তখন আমি লেখালেখিও পছন্দ করতাম। আমার মনে পড়ে যে, আমি গল্প লিখতে অভ্যস্ত ছিলাম এবং এর পাশাপাশি দৃশ্যাবলি আঁকতাম আর এগুলো দিয়ে মিনি বুকলেট তৈরি করতাম। এখন অতীতের স্মৃতিচারণ করলে আমার কাছে মনে হয় যে, শৈশবকাল ছিল আমার বর্তমান জীবনেরই একটি বর্ধিতাংশ। ”

কামেল তার প্রতিভাকে ব্যবহার করেছিলেন সামাজিক ইস্যুগুলোকে জোরালোভাবে তুলে ধরার জন্য, যেগুলোর মোকাবিলা করা প্রয়োজন ছিল। ‘এমিরেটস উইম্যান ফর আর্টস অ্যান্ড কালচার অ্যাওয়ার্ড’-এর জন্য মনোনীত হয়েছিলেন তিনি। কামেল বিশ্বাস করেন, এই মনোনয়নের পেছনে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত অংশকে সহায়তা এবং অপরিশোধিত ঋণের দায়ে মিশরের রাজধানী কায়রোতে বন্দী নারীদের জন্য চ্যারিটির মাধ্যমে তহবিল গঠন করার একটি বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। কামেল বলেন, “আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, চিত্রকলা নিজেই একটি বড় বার্তা”।

ওয়ার্ল্ড আর্ট দুবাই
‘ওয়ার্ল্ড আর্ট দুবাই’ হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের বৃহত্তম, সবচেয়ে বৈচিত্র্যপূর্ণ ও তুলনামূলক কম ব্যয়বহুল আন্তর্জাতিক চিত্র প্রদর্শনী। এ উৎসবের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে গত মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত ইভেন্টটি ছিল কামেলের জন্য চতুর্থ। কামেল বলেন, “এটি বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের একত্রিত করে, একসঙ্গে মেশার সুযোগ সৃষ্টি করে এবং চিত্র ও শিল্পকলার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জানতে সহায়তা করে। ”

তিনি আরও বলেন, “এখানে শিল্পকলার কোনো সীমারেখা নেই এবং শিল্পীরা পুরোপুরি মুক্তভাবে নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরতে পারেন। ‘ওয়ার্ল্ড আর্ট দুবাই’ হলো, এই অঞ্চলের বৈচিত্র্যপূর্ণ জীবনের একটি প্রতীক। ”

কামেল আরও যোগ করেন, “গত ১৫ বছরে সংযুক্ত আরব আমিরাত মধ্যপ্রাচ্যের শিল্পকলার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে এবং এটি হলো চিত্রশিল্পী ও চিত্রকলার প্রতি দেশটির সমর্থনের একটি চমৎকার উদাহরণ। এই দেশে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক চিত্রশিল্পীর গোল্ডেন ভিসা পাওয়ায় অবাক হওয়ার কিছু নেই। অনেক চিত্রশিল্পীই সংযুক্ত আরব আমিরাতকে নিজের দেশ বলে গণ্য করেন বলে দেশটি এখন চিত্রকলার এক বাতিঘরে পরিণত হচ্ছে। এদেশের চিত্রকলা এখন স্থানীয় থেকে বৈশ্বিক রূপ লাভ করছে। ”


শিল্পী সামার কামেলের একটি চিত্রকর্ম

সামার কামেলের চিত্রকর্মে নারীদের গুরুত্ব
সামার কামেল নারীদের বহুমাত্রিক চরিত্র হিসেবে দেখে থাকেন, সবসময় তাদের চিন্তাভাবনা ও আবেগের কেন্দ্রবিন্দু পর্যবেক্ষণের চেষ্টা করেন এবং এগুলোকে ক্যানভাসে চিত্রায়িত করেন।

তার ভাষায়, “নারী ইস্যুটি কিন্তু অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ইস্যুর মতোই সমান গুরুত্বপূর্ণ। আমার সমাজের কোনো সমস্যাকে যদি গুরুত্বসহকারে তুলে ধরার প্রয়োজন হয় তাহলে একজন শিল্পী হিসেবে কেন আমি তা করবো না? আমার বইয়ে ও চিত্রকর্মে নারীরা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক নয়। আমি যদি প্রাচ্যের নারীদের সংগ্রাম ও চ্যালেঞ্জসমূহকে চিত্রায়িত করি তাহলে তাদের শক্তিমত্তার দিকটি প্রতিফলিত হবে। ”

কামেল তার বইয়ে বেশ গুরুত্বারোপ করেছেন বিশেষভাবে আরব নারীদের প্রতি এবং তাদের সংগ্রামকে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন নিজের চিত্রকর্মগুলোতে।

কামেলের সমৃদ্ধ সংগ্রহশালা
৭০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক চিত্র প্রদর্শনী এবং বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন চিত্রমেলায় নিজের কাজের প্রদর্শনী করার পাশাপাশি সামার কামেল চীন, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডস, স্পেন, জাপান, মিশর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, ব্রাজিল, বেলজিয়াম ও সংযুক্ত আমিরাতের সর্বত্র নিজের কাজের প্রদর্শনী করেছেন।

সূত্র: গালফ নিউজ

সাইফুর রহমান তুহিন: ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও ফিচার লেখক

বাংলাদেশ সময়: ১৭২১ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০২২
এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।