ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিচার

পদ্মাপাড়ের নির্মল বাতাসে জেগেছে প্রাণের স্পন্দন

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০২২
পদ্মাপাড়ের নির্মল বাতাসে জেগেছে প্রাণের স্পন্দন

রাজশাহী: পদ্মা নদী আর রাজশাহীর মানুষের সুখ-দুঃখ ও আনন্দ-উৎসব; সবই একই সুতোয় গাঁথা। কখনও ভাঙনের আতঙ্ক, কখনও বা বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখায় কীর্তিনাশা ‘পদ্মা’।

আর উৎসব পার্বণে দেয় নির্মল আনন্দ। তাই তিলোত্তামা এই সবুজ শহরে এখনও বিনোদনের শ্রেষ্ঠ ঠিকানা হচ্ছে পদ্মা। ঈদ উৎসব হলে তো কথাই নেই। বিকেলে হলেই যেন জনস্রোত নামে রাজশাহীর পদ্মাপাড়ে।  

মহানগরীর দক্ষিণে থাকা বড়কুঠি থেকে বুলনপুর ও পঞ্চবটি হয়ে সাতবাড়িয়া। দীর্ঘ প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে রয়েছে পদ্মারপাড়। পদ্মাপাড়ের নির্মল বাতাস আর নৈসর্গিক পরিবেশে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে তাই বিনোদন পিপাসুদের আজও ঢল নেমেছে পদ্মাপাড়ে। সকাল নেই, দুপুর নেই, তীব্র রোদ গরম উপেক্ষা করে সব সময় পদ্মাকে ঘিরে থাকছে প্রাণচাঞ্চল্য। মানুষের কোলাহলে মুখরিত থাকছে রাজশাহীর পদ্মারপাড়। সেখানে যেন জেগেছে নতুন প্রাণের স্পন্দন। মানুষের বিনোদনের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পদ্মার ধার ঘেঁষে নির্মাণ করা হয়েছে সুদৃশ্য ওয়াকওয়ে। রাতে ভ্রমণের জন্য রাজশাহী সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে আলোকায়ন করা হয়েছে। তাই বিকেলে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলেও উন্নতমানের এ সড়ক দিয়ে সহজেই বিনোদন পিপাসুরা হেঁটে পদ্মার অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ পারছেন। কাটাতে পারছেন ঈদের অখণ্ড অবসর।  

ঈদের দিন থেকে এখন পর্যন্ত বিনোদন প্রেমীদের পদচারণায় ও হৈহুল্লোরে মেতে থাকছে পদ্মারপাড়। শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সী মানুষের ভালোলাগার প্রধান কেন্দ্রবিন্দু বলতে রাজশাহীর পদ্মার পাড়। নদীর প্রবাহমান সেই জোয়ার, কলকলিয়ে পানির শব্দ, মাঝিদের গান সবই আজ অতীত। এরপরও নদীর কূলে এখনও শুধু তারুণ্যের জয়গান। বিনোদনের সব স্রোত যেন মিশেছে পদ্মায়। নিরাপত্তা নিয়ে কোনো সমস্যা না থাকায় প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত অবধি পদ্মা নদীর কূলে মানুষের আনাগোনা থাকছে। ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে তাই কেউ কেউ পদ্মার জলরাশিতে আনন্দ করে বেড়াচ্ছেন। মাঝ নদীতে গিয়ে উত্তার ঢেউ দেখছেন। নদীবক্ষে বয়ে চলা শান্তির সুবাতাসে তৃষ্ণার্ত প্রাণটাকে উজার করে দিচ্ছেন। পদ্মার নৈসর্গিক রূপে মুগ্ধ হয়ে তীরে ফিরছেন বিনোদন প্রেমী মানুষ।

ঈদুল আজহার ছুটি শেষ হয়ে গেলেও রাজশাহীতে ছুটির আমেজ কাটেনি। ঈদকে কেন্দ্র করে তাই পদ্মা নদীর তীর ঘেঁষে থাকা বিস্তৃত শহর রক্ষা বাঁধে ব্যবসা-বাণিজ্যও এখন বলা যায় পাুরোপুরি জমজমাট। মানুষের আনাগোনায় মুখরিত নদী পাড়ে তাই গড়ে উঠেছে অত্যাধুনিক বাণিজ্যকেন্দ্র। বুলনপুর এলাকায় ‘আড্ডা’ সেখান থেকে পেরিয়ে সামান্য এগোলেই চোখে পড়ে ‘টি-বাঁধ’। তার পাশেই ছোট পরিসরে পার্ক তৈরি করেছে বিজিবি। এখানে নির্মাণ করা হয়েছে ‘বহির্নোঙ্গর’ আর ‘সীমান্ত নোঙ্গর’। হাল্কা সব ধরনের খাবারের আয়োজন রয়েছে এখানে। সেসঙ্গে ছোট ছোট আমবাগানের ফাঁকে ফাঁকে বসার সুরম্য স্থান। এখানে বসে অনায়াসে নদীর সৌন্দর্য অবলোকন করা যায়। এখানে নদী ভ্রমণে আগ্রহীদের জন্য সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে ‘গাঙচিল’ নামের ছোট আকারের নৌকা। রাতের আঁধারে রঙিন নিয়ন আলোয় আরও ফুটে ওঠে এ স্পটের চেহারা। আর 'বহির্নোঙ্গর’ ও ‘সীমান্ত নোঙ্গর’ পেরিয়ে অল্প সামান্য হাঁটা পথ পেরুলেই চোখে পড়ে সুদৃশ্য গ্যালারি সমৃদ্ধ মুক্তমঞ্চ। এটি লালন শাহ পার্ক। আঁকাবাঁকা সিঁড়ির মতো সাজানো-গোছানো গ্যালারিতে বসে অনায়াসে দেখা যায় পদ্মার অপরূপ রূপ। পাল তোলা নৌকার কলকলিয়ে ছুটে চলার অনুপম দৃশ্য না থাকলেও স্রোতস্বিনী পদ্মার বয়ে চলার দৃশ্য মানুষকে আনন্দ দিচ্ছে। রাজশাহী সিটি করপোরেশন এ পার্কের দেখভাল করে।

এখানে যেকোনো বড় অনুষ্ঠানের জন্য রয়েছে বিস্তৃত মুক্তমঞ্চ। এই লালন শাহ পার্ক পেরিয়ে এগিয়ে গেলে অদূরেই রয়েছে হযরত শাহ মখদুম (রহ.)- এর মাজার। নদীর পাড় ঘেঁষে এ মাজারের অবস্থান। মাজার জিয়ারত কিংবা পরিদর্শনে এসে এক পলকের দেখা মেলে পদ্মা নদীর। মাজার সড়কের এপারেই নদীর ঘাট পর্যন্ত সুরম্য সিঁড়ি করে দিয়েছে সিটি করপোরেশন। বর্ষাকালে এখানে হাত বাড়ালেই ছোঁয়া মেলে পদ্মার স্বচ্ছ পানি। এরপর মাজার শরীফ থেকে সোজা পূর্বদিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যায় মানুষের জটলা। তরুণ-তরুণীদের হৈ-চৈ। আড্ডা। সঙ্গে পাখির কিচির মিচির শব্দও কানে ভেসে আসে। এটি পদ্মা গার্ডেন। মিনি পার্কও বলা যায় এটিকে। সকাল থেকে বিকেল এ পার্ক তরুণ-তরুণীদের আড্ডায় মুখরিত থাকে। এখানেও রয়েছে বিভিন্ন ফাস্টফুডের দোকান। ছায়া ঢাকা নদীর পাড় ঘিরে সব বয়সী মানুষের মিলনমেলা এটি। পদ্মা পাড়ের বড়কুঠি ঘিরে গড়ে উঠেছে আধুনিক মানের কয়েকটি হোটেল। চা-কফি কিংবা স্ন্যাকস সবই মেলে হাতের কাছে। আর সুউচ্চ কাঁচের ঘরে বসে নদী দেখতে চাইলে সেখানেই রয়েছে পাঁচতলা কফি বার। কফির কাপে চুমুক আর উঁচু থেকে নদী দেখার সুযোগ মেলে এখানেই। মহানগরীর বড়কুঠি পদ্মার পাড় ও সীমান্ত অবকাশ নোঙ্গর এলাকায় শিশু সন্তানদের নিয়ে বেড়ানোর সুযোগ পেয়ে অনেকেই অনেকভাবে জানান আনন্দ অনুভূতির কথা।

বাবা জাহিদ হোসেনের সঙ্গে বেড়াতে আসা সাত বছরের ছোট মেয়ে জেরিন জানায়, পদ্মাপাড়ে বেড়াতে তার কাছে ভীষণ ভালো লাগছে। সে ফুচকা খেয়েছে, পেয়ারা খেয়েছে। কিনেছে রঙিন বেলুনও। এখনে আসার পর ঈদের আনন্দ যেন তার কাছে দ্বিগুণ মনে হচ্ছে।   

রিফাত, তাফসির, বর্ণ ও প্রভাস সবাই বন্ধু। তাদের বাড়ি মহানগরীর সুলতানাবাদ এলাকায়। ঈদ উপলক্ষে বেড়াতে এসেছেন টি-বাঁধ এলাকায়।

তারা বলেন, চারিদিকে এখনও ঈদ উৎসব চলছে। তাদের কাছে সবচেয়ে প্রিয় এই পদ্মা নদীর পাড়। এখানকার প্রাকৃতিক দৃশ্য তাদের বেশি ভালো লাগে। তাই শীত-গ্রীষ্ম বর্ষা নেই। যে কোনো উৎসবেই তারা সব বন্ধুরা আনন্দ করতে পদ্মাপাড়ে আসেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, জুলাই, ১৩, ২০২২
এসএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।