মৌলভীবাজার: বাংলাদেশের প্রাণীজগৎ সমৃদ্ধ। বিচিত্র এ প্রাণীজগৎকে আকর্ষণীয় করে রেখেছে প্রকৃতিতে বাস করা অগণন প্রাণীদের বৈচিত্র্যময় চরিত্রসমূহ।
এটি যে প্রতি মুহূর্তেই করে না কিন্তু নয়। কারে থাকে মাঝেমধ্যে। ডালে ডালে বিচরণের একটি সহজ কৌশল হিসেবে। তবে সামগ্রিকভাবে এ বিষয়টিকে প্রত্যক্ষ এবং পর্যালোচনা করলে ফলাফল দাঁড়িয়ে যায়- ডালে ঝুলে থাকা পাখি! বিচিত্র চরিত্রের এই পাখিটির নাম ‘বাসন্তী-লটকনটিয়া’। এর ইংরেজি নাম Vernal Hanging Parrot এবং বৈজ্ঞানিক নাম Loriculus vernalis. বাংলানিউজের জন্য এ পাখির ছবিগুলো তুলেছেন বন্যপ্রাণী আলোকচিত্রী তিমু হোসেন।
বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা এবং স্বনামধন্য পাখি গবেষক ইনাম আল হক বলেন, বাসন্তী-লটকনটিয়া ‘সিট্টাকুলিডি’ পরিবারের ছোট আকারের টিয়া। ‘লরিকুলাস’ গণের এই প্রজাতির পাখি পৃথিবীতে ১২টি থাকলেও বাংলাদেশে রয়েছে একটি প্রজাতি। এদের দেহ গোলগাল। ঠোঁট ছোট এবং লেজ খাটো। এর দৈর্ঘ্য মাত্র ১৪ সেন্টিমিটার এবং ওজন প্রায় ২৮ গ্রাম।
পাখিটির দৈহিক রং প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পাখিটির দেহ সবুজ। লাল চঞ্চু এবং লাল কোমর। সাদাটে চোখ। চোখের মণি বাদামি। পা ও পায়ের পাতা ফিকে কমলা। তবে পুরুষ পাখিটির গলা নীল।
এ পাখিটির স্বভাব সম্পর্কে তিনি বলেন, বাসন্তী-লটকনটিয়া ডালে ঝুলে থাকতে পছন্দ করে। গাছের ডালে উল্টো ঝুলে বিচরণ করা, খাবার খায় ও বিশ্রাম নেয়। আর্দ্র পাতাঝরা চিরসবুজ বনে ওরা বিচরণ করে। সচরাচর পারিবারিক দলে কিংবা সর্বাধিক প্রায় ৫০টি পাখির ঝাঁকে দেখা যায়। বনের ফলের গাছে এরা নানা ধরনের খাবার খায়। এদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে বুনো ডুমুরের নরম-কচি ফলত্বক, বীজ, কচি বাঁশের অগ্রভাগ, রসালো ফল ও ফুলের রস বলে জানান ইনাম।
বাসন্তী-লটকনটিয়ার দেশীয় অবস্থা বিশ্লেষণের অংশ হিসেবে তিনি বলেন, এরা বাংলাদেশের ‘দুর্লভ আবাসিক পাখি’। মাঝেমধ্যে দেখা যায়। চট্টগ্রাম, সিলেট বিভাগের চিরসবুজ বন ও নির্জন বনভূমিতে হঠাৎ পাওয়া যায়।
জানুয়ারি-জুন মাসের প্রজনন ঋতুতে প্রাকৃতিক মরা গাছে প্রায় এক মিটার গর্ত করে বাসা তৈরি করে এরা ডিম পাড়ে। ডিমের সংখ্যা ৩ থেকে ৪টি। ভারত, নেপাল, মিয়ানমার, চীনসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় এই পাখিটির বৈশ্বিক বিস্তৃতি আছে বলে জানান পাখি গবেষক ইনাম আল হক।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ০৪, ২০২২
বিবিবি/এএটি