জয়পুরহাট: জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের দেও গ্রামে প্রতি বছরের মতো এবারও অনুষ্ঠিত হলো লাঠিখেলা ও মেলা। প্রায় দেড়শ’ বছর ধরে প্রতি বছরই এখানে মেলা ও লাঠিখেলা হয়।
এ বছরের এ মেলার প্রধান আকর্ষণ লাঠিখেলা হলেও শিশু-কিশোরদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগর দোলা, চড়কি ও হরেক রকমের খেলনাসহ মিঠাই-মণ্ডার পসরা।
আয়োজকরা জানান, মেলা উপলক্ষে বিভিন্ন স্থান থেকে অন্তত ৪০ হাজার মানুষের সমাগম ঘটে এ গ্রামে।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী 'লাঠিখেলা'। তবে সেই হারানো ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার পশ্চিম দেও গ্রামের মানুষেরা।
শনিবার (০৮ অক্টোবর) দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই দেও গ্রামের বিভিন্ন বাড়ির উঠানে শতশত মানুষ ভিড় জমাতে থাকেন। উপলক্ষ, প্রতি বছর একবার লাঠি খেলা উপভোগ করা। ঢাকের বাজনা আর কাঁসার ঘণ্টার তালে তালে লাঠিয়ালরা দেখান তাদের লাঠির কসরত। এ সময় প্রতিপক্ষের লাঠির আঘাত সামলানোর পাশাপাশি উপস্থিত দর্শকদের মনোরঞ্জনে লাঠিয়ালরা দেখান তাদের শারীরিক নানা ভঙ্গিমাও।
মেলায় লাঠি খেলা দেখতে আসা পূর্ণ গোপিনাথপুর গ্রামের বাসিন্দা আমজাদ হোসেন বলেন, প্রতি বছরই এ গ্রামে লাঠিখেলা দেখতে আসি। এবার নাতিকে সঙ্গে নিয়ে এসেছি। খুব আনন্দ উপভোগ করলাম।
কালাইয়ের হারুঞ্জা গ্রাম থেকে আসা সবেমাত্র এসএসসি পরীক্ষা শেষ করা দুই ছাত্র সাকিব ও আরাফাত জানায়, দেও গ্রামের মেলায় এবার প্রথম লাঠিখেলা দেখার সৌভাগ্য হলো। এ মেলায় যে এতো মানুষের ভিড়, তা আগে জানা ছিল না।
লাঠি খেলোয়াড় আলতাফ বলেন, সেই ছোট বেলা থেকেই বাপ-দাদার লাঠি খেলা দেখে আসছি। এরপর ১৯৮৫ সাল থেকে আমিও দেও গ্রামসহ বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় লাঠিখেলা দেখাই। এতে আমিও আনন্দ পাই, দর্শকদেরও আনন্দ দেওয়ার চেষ্টা করি।
দেও গ্রামের বাসিন্দা মোফাজ্জল হোসেন বলেন, মেলাকে ঘিরে জামাই-মেয়ে, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের দাওয়াত করা হয়। মেলার দুদিন আগে থেকে আত্মীয়-স্বজনরা গ্রামে আসতে শুরু করেন। মেলার দিন সকালে গ্রামে গরু-ছাগল জবাই করা হয়। আজ মেলার দিন (শনিবার) সকালে দেও গ্রামে অন্তত ১৪-১৫টি গরু জবাই করে মাংস ভাগ বাটোয়ারা করে নেওয়া হয়েছে। এরপরও গ্রামের অনেকেই বাজারে গিয়ে মাংস কিনে এনেছেন।
দেও গ্রামে প্রবেশের জন্য প্রধান রাস্তাটির দুই ধারে এবং একটি হাফেজিয়া মাদরাসা চত্বরে বসে মূল মেলা। এছাড়া খালি পড়ে থাকা বিভিন্ন জায়গায় হরেক রকমের পণ্যের দোকান বসান দূর দূরান্ত থেকে আসা দোকানিরা।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মশিউর রহমান জানান, প্রায় দেড়শ’ বছর ধরে দেও গ্রামে লাঠিখেলা ও সে উপলক্ষে মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ মেলা উপলক্ষে গ্রামে জামাই-মেয়ে, আত্মীয়-স্বজনসহ অন্তত ৪০ হাজার মানুষের সমাগম ঘটে।
স্থানীয় সংস্কৃতি কর্মীদের প্রত্যাশা শুধু দেও গ্রামেই নয়, লাঠিখেলার মতো ঐতিহ্যবাহী খেলাগুলো যুগ যুগ ধরে প্রতিটি গ্রাম-গঞ্জেই বেঁচে থাক।
বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৯, ২০২২
এসআই