ঢাকা: তরুণ প্রজন্ম এখন কত কিছুই না করছে! বিশ্ব পরিবর্তনে তরুণ প্রজন্মের ভূমিকা অপরিসীম। তারা চাইলে অনেক কিছুই করতে পারে।
কুষ্টিয়া জেলার প্রেক্ষাপটে অসংখ্য ফেসবুক গ্রুপের মধ্যে অল্প যে কয়েকটি গ্রুপ প্রশংসিত হয়েছে, তার মধ্যে ‘এক কাপ চায়ের বন্ধু’ অন্যতম। খারাপকে পেছনে ফেলে বর্তমানে তরুণদের মেধা ও মনন বিকাশ ও আত্মার মানুষকে খুঁজে পাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে এ গ্রুপ। বন্ধুত্বের ভালোবাসায় পারস্পরিক যোগাযোগ ও বন্ধন তৈরি করার জন্য ২০২১ সালের মার্চে যাত্রা শুরু করে ফেসবুকের এ গ্রুপ। খুব বেশি বয়স না হলেও এরই মধ্যে গ্রুপের কার্যক্রম কুষ্টিয়া জেলায় প্রশংসিত হচ্ছে বিশেষভাবে।
গ্রুপের সদস্যরা নানামুখী সামাজিক কাজের সঙ্গেও জড়িত বলে জানান গ্রুপটির কর্ণধার (অ্যাডমিন) মো. মাসুম আল মাহমুদ। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে লেখাপড়া সম্পন্ন করা এ তরুণ বলেন, আমি যা শিখেছি, তা থেকে এলাকার উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে চেয়েছি। সে ভাবনা থেকেই এ কার্যক্রম শুরু করেছি। এ গ্রুপের মাধ্যমে আমরা সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের সাহায্যার্থে অর্থ সংগ্রহ ও তাদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি। এছাড়া করোনাকালে ২০২১ সালে আমাদের গ্রুপের পক্ষ থেকে প্রায় ৫০টি পরিবারকে উপহার সামগ্রী দেওয়া হয়। এসময় সাধারণ মানুষকে সচেতন করার কাজও করেছি আমরা।
তিনি বলেন, আমাদের এলাকার এক অঞ্চলের সঙ্গে অন্য অঞ্চলের সামাজিক বন্ধন তৈরিতেও গ্রুপটি রাখছে ভূমিকা। বন্ধুত্ব তৈরি, হতাশাগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানো এবং বাল্যবিয়ে প্রতিরোধেও রাখছে ভূমিকা। এছাড়া গ্রুপ থেকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করা, বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা, রমজান মাসে ইফতার বিতরণও করি। আমরা চাই, এক কাপ চা নিয়ে বন্ধুর সঙ্গে রাস্তায় দাঁড়িয়ে গল্প করার যে ভালো লাগা, তেমন ভালো কাজই যেন আমরা একসঙ্গে করে যেতে পারি এলাকার উন্নয়নে।
মিরপুর উপজেলার বাসিন্দা এবং কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী উম্মে কুসুম দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করছেন এ গ্রুপের মডারেটর হিসেবে। কেন এমন একটি প্লাটফর্মের সঙ্গে যুক্ত হলেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি একজন বন্ধুর মাধ্যমে এ গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত হই। এখানে যুক্ত হয়ে আমি অনেক কিছু পেয়েছি। ভাই পেয়েছি, বোন পেয়েছি, ভালো ভালো মানুষ খুঁজে পেয়েছি। এক কথায় একটা পরিবার পেয়েছি। যখন একটু মন খারাপ থাকে, তখন সবাই মন ভালো করে দেয়। যেটা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য খুব বেশি প্রয়োজন। বিভিন্ন সময় আমাদের আড্ডা হয়। এটা খুব ভালো একটা উদ্যোগ। আমরা সবাই মিলে আমাদের এলাকার উন্নয়নের জন্য ভাবছি, কাজ করছি। আমার কাছে এটা ভালো লাগে।
গ্রুপটির আরেক মডারেটর আর কে রাব্বি ইসলাম স্থানীয় একটি কলেজের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, এ গ্রুপ থেকে আমি অনেক সহযোগিতা পেয়েছি এবং অন্যদের সহযোগিতা করার সুযোগ পেয়েছি। কোনো সমস্যায় পড়লে গ্রুপের সবাই এগিয়ে আসে। এখানে অনেক বন্ধু তৈরি হচ্ছে। যা খুবই ভালো একটা দিক। আর সব থেকে বড় কথা হলো, এ গ্রুপের মাধ্যমে লেখাপড়াসহ যে কোনো প্রয়োজনে সহযোগিতা পাওয়া যায়।
‘এক কাপ চায়ের বন্ধু’ গ্রুপের সঙ্গে আরও যুক্ত আছেন মো. মোমিনউল্লাহ, মো. সোহেল রানা, হাবিবুর রহমান, মো. নাহিদ হাসান, রিংকু চৌধুরী, মো. তৌকির আহমেদ, শিমুল ইসলাম (মিঠু), আরাফাত আহমেদ আবির এবং নাসিম আহমেদ। তারা প্রত্যেকেই লেখাপড়া করছেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। তাদের মতে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে যদি ভালো কাজ করা যায়, তাহলে সেটি সমাজের জন্য অনেক ভালো হবে। সবাই মিলে সামাজিক অবক্ষয় রোধ এবং সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করাই উদ্দেশ্য।
গ্রুপটিকে নিয়ে আশাবাদী এলাকার গুণিজনরাও। এ বিষয়ে কুষ্টিয়ার ‘কৃষকের বাতিঘর’ লাইব্রেরির সভাপতি মো. সামসুল হক বলেন, ডিজিটাল এ যুগে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে অনেকেরই অভিযোগ আছে। সেসব পাশ কাটিয়ে ফেসবুককেও যে একটি ভালো উদ্দেশে ব্যবহার করা যায়, তার একটি উদাহরণ ‘এক কাপ চায়ের বন্ধু’ গ্রুপ। এ গ্রুপটি আঞ্চলিকভাবে সামাজিক বন্ধন এবং বন্ধুত্ব দৃঢ় করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। নেতিবাচক দিকগুলো এড়িয়ে যদি এর মাধ্যমে ভালো ভালো কাজ করা যায়, তাহলে সমাজ উপকৃত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০২২
এচএমএস/এসআই