ফেনী: বাংলা মাসের হিসাবে চলছে কার্তিক, ঋতুতে হেমন্ত, তাতে কি! ঘাসের ডগায় শিশিরবিন্দু জমুকু কিংবা না জমুক, শহরেরর মোড়ে মোড়ে শীতের পিঠাপুলির দোকানে মানুষের হাঁকডাক শুরু গেছে। শহরের নানা প্রান্তে ভ্রাম্যমাণ দোকানে এক মনে পিঠা বানাচ্ছেন দোকানিরা।
শীত রাতের শহরে যে কয়টি পিঠা বিক্রি হয় তার মধ্যে চিতই অন্যতম। সরষে, মরিচ, শুঁটকিসহ হরেক রকমের ভর্তা দিয়ে এ পিঠা তৃপ্তির সাথে খেতে পছন্দ করেন পথচারীরা। অনেককে অভিজাত পরিবার গাড়ি হেঁকেও আসেন ফুটপাতের এই পিঠা খেতে।
বুধবার (২ নভেম্বর) রাতে ফেনী শহরের বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে মানুষের জটলা দেখে দাঁড়াতে হলো, কাছে যেতেই দেখা গেল একটি ভ্যানে ভ্রাম্যমাণ মাটির উনুনে ছোট ছোট কড়াইয়ে চিতই পিঠা বানানো হচ্ছে সেখানে। ক্রেতারা বেশ মজা করেই খাচ্ছেন। বিক্রেতাও দারুণ ব্যস্ত, দোকানি তিনজন মিলেও সামাল দেওয়া যেন দায় হয়ে পড়েছে। দীর্ঘলাইনে পিঠার জন্য অপেক্ষা অনেকের।
পিঠা বিক্রেতা ফুল মিয়া এসেছেন দেশের উত্তরের জনপদ গাইবান্ধা থেকে। বছরের অন্য সময় ফলমূল, তরকারি ফেরি করলেও শীতের এই সময়ে লেগে যান পিঠা বানাতে। শুধু একা নয়, তাকে সহযোগিতা করতে সুদূর গাইবান্ধা থেকেও আসেন অন্য স্বজনরা। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১২টা অবধি চলে তাদের বিকিকিনি।
ফুলমিয়ার দোকানে সাধারণত চিতইয়ের পাশাপাশি বাড়তি রয়েছে ডিম চিতইয়ে। যারা একটু বেশি দামে ডিম দিয়ে ধনেপাতার ঘ্রাণে আয়েশ করে খেতে চান তাদের পছন্দ এই ডিম চিতই।
সাধারণত দৈনিক ৫/৬শ পিঠা বানালে সেখানে ডিম চিতই বিক্রি হয় ১০০ থেকে দেড়শোটি। সাধারণ চিতই বিক্রি হয় ৫ টাকা। ভিন্ন স্বাদের এই ডিম চিতই বিক্রি হয় ২৫ টাকা।
ফুল মিয়া নামে এক পিঠা বিক্রেতা বলেন, সবকিছুর দাম বেড়েছে পিঠার দাম বাড়াইনি আগের দামেই রেখেছি, পরিমাণে একটু কম দিয়ে পোষাতে চেষ্টা করি।
কথা হয় পিঠা খেতে আসা ফেনীর স্থানীয় একটি পত্রিকার সম্পাদক আরিফুল আমিন রিজভীর সঙ্গে।
তিনি বলেন, ঘরেও চিতই তৈরি হয়, তবে এত ধরনের ভর্তা পাওয়া যায় না। শুঁটকি, মরিচ, ধনেপাতা আর সরষে ভর্তা দিয়ে চিতই বেশ স্বাদের।
মোস্তাফিজ মুরাদ নামের স্থানীয় এক সাংবাদিক জানালেন, চিতই পিঠাতো ঘরেও তৈরি হয়। তবে ভর্তার এত বাহারি আয়োজন থাকে না। সরষে ভর্তা, মরিচ ভর্তা আর পেঁয়াজ ভর্তা দিয়ে চিতই পিঠার মজাই আলাদা। সরষের ফ্লেভার দুর্দান্ত লাগে।
দুলাল নামের পত্রিকার এক বিপনণকারী বলেন, দেশ ডিজিটাল হয়েছে, ঘরের নারীদের হাতে হাতে ফোন। পিঠাপুলি বানানোর সময় কোথায় তাদের৷ তাই শীতের পিঠার স্বাদ নিতে ফুটপাতের এই দোকানে আসি। খেতে ভালোই লাগে।
একরামুল হক নামের আরেকজন জানান, এত আয়োজন করে এখন আর বাড়িতে পিঠাপুলির আয়োজন হয় না। সে কারণেই রাস্তার এ পিঠা দোকানে আসা। চিতই পিঠার সাথে কয়েক রকমের ভর্তা ভিন্ন মাত্রা যোগ করে।
কথা হয় পিঠা বিক্রেতা মো. ফুল মিয়ার সঙ্গে, তিনি জানান, বেশ ভালোই পিঠা বিক্রি হয়। শহরের সব শ্রেণী-পেশার মানুষই তার দোকানে পিঠা খেতে আসেন। প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে বসে মাঝরাত অব্দি পিঠা বিক্রি করেন।
এ সময়ের মধ্যে প্রায় ১ হাজার টাকার বেশি পিঠা বিক্রি হয়। মজুরিসহ সব মিলিয়ে ৬শ টাকা খরচের পর লাভ থাকে ৫শ থেকে ৬শ টাকা। প্রতিটি পিঠা বিক্রি করা হয় ৫ টাকায়। শীত ভালো করে জেঁকে বসলে দৈনিক ২ হাজার পিস পিঠাও বিক্রি হয়েছে অন্যান্য বছর।
ফুল মিয়া আরও বলেন, ক্রেতারা ভর্তা দিয়ে চিতই পিঠা খেতে খুবই পছন্দ করেন। অনেকে আবার বাড়ি কিংবা অফিসেও পিঠা কিনে নিয়ে যান। এছাড়াও শহরের অলিগলিতে ভাপা পিঠা, খোলাঝালি পিঠা, পাটি সাপটা পিঠাসহ নানা স্বাদের পিঠার পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। ক্রেতারাও আগ্রহ নিয়ে খাচ্ছেন শীতের বাহারি এসব পিঠা।
তৈরির প্রক্রিয়া:
চালের আটা পানিতে গুলিয়ে গরম মাটির খোলা, স্টিলের কড়াই কিংবা তাওয়াতে ভেজে এই পিঠা তৈরি হয়। পিঠা তৈরির জন্য আটা ও পানির মিশ্রণ অল্প তাপে মাটির খোলা, তাওয়া কিংবা কড়াইয়ে ভাজতে হয়। শীতকালের অত্যন্ত জনপ্রিয় এ পিঠাটি। তৈরি হওয়ার পর খোলা থেকে নামিয়ে খেতে পারেন খেজুরের গুড় অথবা বিভিন্ন রকম ভর্তা দিয়ে। ডিম চিতই তৈরি করতে হলে কড়াই অথবা মাটির খোলায় চালের আটার মিশ্রণ দিয়ে তার ওপরে ডিম ভেঙে দিতে হয়। ডিমের ওপর ধনেপাতা দিলে যোগ হয় বাড়তি মাত্রা।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০২, ২০২২
এসএইচডি/এএটি