মৌলভীবাজার: এখন ‘জলপাই’ (Olive) এর সময়। দেশের নানা প্রান্তের ছোট-বড় বাজারে হঠাৎ দেখা যায় বিক্রেতাকে জলপাই বিক্রি করতে।
অনেকেই জলপাইয়ের তেল অর্থাৎ ‘অলিভওয়েল’ বহু মূল্য দিয়ে কিনে থাকেন। এই তেল খাবার জন্য নয়। শীতকালে শরীরের ত্বকের রুক্ষতা আর ফেটে যাওয়া ভাব দূর করতে এই তেল অত্যন্ত কার্যকর।
জলপাই দেশি প্রজাতির ফল। শীতকাল এলেই জলপাই অনেক বেশি পাওয়া যায়। দীর্ঘদিন ধরে এই জলপাই নানানভাবে ব্যবহার হয়ে আসছে। অনেকেই আছেন যারা এই ফলটিকে খুবই পছন্দ করেন। আবার অনেকেই আছেন এটিকে খুব একটা পছন্দ করেন না।
সম্প্রতি স্থানীয় বাজারে বিক্রি হচ্ছে মৌসুমি ফল জলপাই। কেজি প্রতি দাম ৪০ টাকা থেকে ৬০ টাকা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক উপ-পরিচালক (ডিডি) কৃষিবিদ কাজী লুৎফুল বারী বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের দেশে জলপাইয়ের যে ভ্যারাইটি পাওয়া যায় তা মূলত আচার তৈরিতেই বেশি ব্যবহৃত হয়। গ্রামগঞ্জে এমনকি শহরের এক সময় মহিলারা প্রচুর পরিমাণ জলপাইয়ের আচার করতেন। রোদে শুকিয়ে প্রয়োজনীয় মসলা মিশিয়ে তারপর সরিষা তেল দিয়ে কাঁচের বোতলে সংরক্ষণ করতেন। সরিষা তেল হচ্ছে খুব ভালোমানের প্রিজারভেটিভ। এর মাঝে এক বছরের বেশি সময় আচার ডুবিয়ে রাখলেও নষ্ট হয় না। আমাদের সরিষার লোকাল ভ্যারাইটির মধ্যে একটা বিশেষ ঝাঁজ রয়েছে। এটাকে ‘ইউরেটিক এডিস’ বলে। যেটা ব্যাটেরিয়াকে প্রিভেন্ট করে। যা খাবারের উপাদানকে কখনো পচতে দেয় না, নষ্ট হাত দেয় না। হাজার বছর ধরে আমাদের দেশের নারীরা তাদের অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে এসব রন্ধনকলাকৌশল জানেন। এই লোকাল প্রেসটিসটা তাদের রয়েছে।
জলপাইয়ের ‘তেল’ সম্পর্কে এই কৃষিবিদ বলেন, আমাদের দেশে জলপাইয়ের কদর আছে আচার হিসেবেই। তবে জলপাইয়ের কমার্শিয়ালি চাষ এখন আমাদের দেশে হয়নি। কোনো কোনো দেশে জলপাইয়ের অন্য ভ্যারাইটি রয়েছে যেটা দিয়ে অলিভওয়েল তৈরি হয়। এই তেলটি অত্যন্ত সমৃদ্ধ এবং মূল্যবান এক ধরনের তেল। এগুলোর ইউরোপের অনেক দেশে আছে। যেমন- ফান্স, ইতালি, সুইজারল্যান্ড প্রভৃতি দেশে জলপাইয়ের ওই ভ্যারাইটিটা আছে। ওরা কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে জলপাইয়ের চাষ করে। ওগুলো ছোট ছোট গাছ হয়।
আমাদের দেশ থেকে জলপাই যেন হারিয়ে না যায় সেজন্য আমরা প্রতি বছর বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে অন্যান্য গাছের সঙ্গে জলপাইয়ের চারাও বিতরণ করেছি। এই জলপাই আমাদের দেশে একটি ‘মাইনর ক্রপ’। এখনো আম, কাঁঠাল, লেবু প্রভৃতি ফলের মতো সেটা ‘মেজর ক্রপ’ হয়ে উঠতে পারেনি। ওই ফলগুলো দেশের বড় এরিয়া কাভার করে কমার্শিয়ালি অনেক বেশি চাষ হচ্ছে। তবে জলপাই কিন্তু আমাদের দেশের অনেক পুরানো ফল।
জলপাই যেহেতু টক জাতীয় ফল তাই অনেকগুলো ভিটামিন সেখানে আছে। যে ভিটামিনগুলো আমরা সব সময় পর্যাপ্ত পাই না। জলপাইয়ের খোসায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ। এই আঁশ নিয়মিত খাবার হজমে সাহায্য করে। পাশাপাশি পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত, বৃহদন্ত্র ও কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে এই ফল। ত্বক ও চুলের যত্নে, হাড়ের ক্ষয়রোধে, চোখের যত্নে, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোসহ আরো শারীরিক উপকারে সরাসরি কাজ করে থাকে এই ফলটি। একে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা দরকার। তাতে করে আরো বেশি পরিমাণে আচার তৈরি, মূল্যবান তেল তৈরি করা যেতে পারে বলে জানান এই কৃষিবিদ।
‘ক্যানসার এবং জলপাই’ সম্পর্কে তিনি বলেন, একেকটা মৌসুমী ফল আমাদের শরীরে একেক রকম উপকার বয়ে আনে। জলপাই এবং এরূপ টকজাতীয় ফল কিন্তু ক্যান্সারকে প্রিভেন্ট করে। অনেকেই ভুল জানেন যে, জলপাই খাইলে ক্যানসার ভালো হয়। তা কিন্তু নয়। এটা খেলে ক্যানসার ভালো হয় না। জলপাই ক্যানসারকে প্রিভেন্ট করে অর্থাৎ ক্যানসার হতে দেবে না। ক্যানসারের ‘কার্সিনমিক সেল’ যদি কারো শরীরে তৈরি হয়ে যায় তবে কিন্তু যেতে হবে চিকিৎসায়।
আমরা যদি লাইফস্টাইল সুশৃংখলভাবে মেনটেইন করি এবং এই সব মৌসুমি ফলসহ প্রাকৃতিক খাবারগুলো বেশি বেশি করে খেতে চেষ্টা করি তাহলে কিন্তু ওগুলো সহজেই এই ক্যানসার জাতীয় রোগে প্রিভেন্টিভ হিসেবে কাজ করবে অর্থাৎ আমাদের শরীরে ক্যানসার হতে দেবে না। আর ক্যানসারকে সবচেয়ে বেশি ‘অ্যাংকারেজ’ করে স্মোকিং (ধূমপান), ফাস্টফুড (হোটেল এবং খাবারের দোকানে বিক্রি করা খাবার) এবং অ্যালকোহল (মদ) বলে জানান কাজী লুৎফুল বারী।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৭, ২০২২
বিবিবি/এএটি