ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ পৌষ ১৪৩১, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফুটবল

ক্লপ বনাম গার্দিওলা: আরও একবার, হয়তো শেষবার

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৯ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০২৪
ক্লপ বনাম গার্দিওলা: আরও একবার, হয়তো শেষবার

‘এটা হচ্ছে যার যার পছন্দের ব্যাপার’ 

পেপ গার্দিওলার ফুটবলের সঙ্গে তার দর্শনের তফাৎ বলতে গিয়ে এমন বলেছিলেন ইয়ুর্গেন ক্লপ। বহুদিন ধরেই ফুটবল খেলা হয় ম্যানেজারদের কল্পিত ছবির মতো করে।

এখানে তাদের দাবার ঘুঁটিতে, ছকে বাধা পরিকল্পনাতে এগিয়ে চলে ছোট গোলক।

কোচদের দর্শন, ব্যক্তিত্বের ধরনের তফাৎ বদলে দেয় খেলার কৌশল; অনুমিতভাবেই ফলও। যখন ক্লপ বনাম গার্দিওলার লড়াইয়ের কথা আসবে, তখন আসবে দুজনের ব্যক্তিত্ব, শূন্য থেকে ইউরোপের শীর্ষে উঠার পথচলা কিংবা বছরের পর বছর ধরে তাদের নিজস্ব জাহাজ টিকিয়ে রাখার ভিন্ন গল্প।  

গার্দিওলা বেড়ে উঠেছিলেন বার্সেলোনার বিখ্যাত লা মাসিয়াতে। ছিলেন ইয়োহান ক্রুইফের ‘ড্রিম টিমের’ ফুটবলারদের একজন। স্বাভাবিকভাবেই খেলাটা নিয়ে তার ভাবনার গভীরতা ছিল অনেক। তিনি যখন কোচিংয়ে এলেন, সেটিও তাই কোনো ধরনের চমক তৈরি করেনি। কোচ হিসেবে পজেশন বেজড ফুটবলের তর্কযোগ্যভাবে সেরা প্রদর্শনী এখন দেখাচ্ছে তার ম্যানচেস্টার সিটি।

আরেকদিকে ইয়ুর্গেন ক্লপের যাত্রাটা একদমই আলাদা। খেলোয়াড়ি জীবনে ‘গড়পড়তা’ মানের ছিলেন স্বীকার করেন তিনি নিজেই। ফলে তার পরের জীবনও ছিল অনিশ্চিত। তবুও ফুটবলের প্রতি থাকা আবেগ, ব্যক্তিগত টান কোচ হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত করেছে ক্লপকে; হয়তো টেকটিক্যালি খুব গোছানো না হওয়ার পরও।  

তাদের কাছে যা কিছুই থাকুক না, ক্লপের মতো মানুষের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তারা এমন একটা ফুটবল তৈরি করবেন- যা হবে সবকিছুর চেয়ে আলাদা। দিনশেষে আসল ব্যাপার হচ্ছে, যখন একটা দল নিয়ন্ত্রণ করতে চাইবে সবকিছু, তখন আরেক দল চাইবে ওই শৃঙ্খলা ভেঙে দিতে। এর ফল কী হবে? দুনিয়া সাক্ষী হবে বহু স্মরণীয় ম্যাচের।

ফুটবল সমর্থকরা সৌভাগ্যবান ভাবতে পারেন এখন- গত ১১ বছর ধরে তারা এমন কিছুর সাক্ষী হয়েছেন বহুবার; ইয়ুর্গেন ক্লপ ও পেপ গার্দিওলার বদৌলতে। শুরুটা হয়েছিল ১১ বছর আগে জার্মানিতে; গার্দিওলা বায়ার্ন মিউনিখ ও ক্লপ তখন বরুশিয়া ডর্টমুন্ডে। পরে ওই লড়াই দিন দিন কেবল জমজমাটই হয়েছে। কারণ? সম্ভবত তাদের একজন অন্যজনের কাছ থেকে শিখতে চেয়েছেন বলে।

লিভারপুলের ম্যানেজার হিসেবে এই মৌসুমই শেষ ক্লপের জন্য। শুক্রবার যখন ম্যানচেস্টার সিটির গার্দিওলার কাছে জানতে চাওয়া হলো তার ‘রাইভালকে’ নিয়ে; তিনি তখন বললেন, ‘ক্লপ যেভাবে তার দলকে খেলায়, সবসময়ই শেখার আছে ওখান থেকে। ’

সিটিতে আসার পর থেকেই গার্দিওলা ছিলেন পজেশন নিয়ে আচ্ছন্ন। যদিও সেই চেষ্টা ২০১৮ সালের চ্যাম্পিয়নস লিগে অ্যানফিল্ডে মনে হচ্ছিল একদমই নির্বোধের মতো। এ মৌসুমে এসে চারজন সেন্টার ব্যাকের সঙ্গে আর্লিং হালান্ডের মধ্যে আদি ‘নম্বর নাইন’ খুঁজে বেড়ানো হয়তো এটাই বোঝায়; একজন ক্ষুদ্র টেকটিশিয়ানের পক্ষে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।

একইভাবে, ক্লপও লিভারপুলে তার কাটানো দুই বছর সময়ের মধ্যেই বুঝতে পেরেছিলেন; কেবল আক্রমণাত্মক প্রেসিংই প্রিমিয়ার লিগ জেতার জন্য যথেষ্ট হবে না। বিশেষত যখন তার কিছু প্রতিপক্ষ আছে এমন, যারা বলই চায় না। এজন্য তিনি দলকে আরও পরিণত, কিছুটা পজেশন বেজড খেলানো শুরু করেন; এমন কিছুর পেছনে অনেকটা নিশ্চিতভাবেই গার্দিওলার প্রভাব আছে।

অবশ্যই, ক্লপ ও গার্দিওলার কেউই শেকড় ভুলে যাননি তাদের। এ সপ্তাহেই ট্রেন্ট অ্যালেক্সান্ডার আর্নোল্ডের কথার পর দুজনের ভাষ্যেই যার প্রমাণ হয়েছে। আর্নোল্ডের কথাটা ছিল এমন- এই যুগে আমরা যা কিছু অর্জন করেছি সেটা সিটির চেয়ে বেশি।  

তার কথার সুরেই সিটি ম্যাচের আগে ক্লপ ঘোষণা দিয়েছেন, ‘‘আমাদের একটা স্লোগানই হচ্ছে, যেটা ভাবতে আমি ভালোবাসি, ‘ইট মিনস মোর...’- আমাদের কাছে এর (যেকোনো অর্জনের) অর্থ আসলেই বড়। যদি আমরা এমন মনেই করি, তাহলে কেন বলতে পারবো না?’’

এমন মন্তব্য একজন ম্যানেজার এটা জেনেই করেন- সিটির বিপক্ষে ম্যাচে নিজেদের সেরাটা দেওয়ার জন্য তার খেলোয়াড় ও সমর্থকদের সবটুকু আবেগ উজাড় করে দিতে হবে আগে। তার দলের ক্ষেত্রে সবসময় যেমন কিছু কাজ করে থাকে।

গার্দিওলার ব্যাপারটা আবার আলাদা। তার ব্র্যান্ডের ফুটবলের জন্য সবকিছু থাকত হবে বরফের মতো ঠান্ডা। কথার লড়াই অল্পতে থামিয়ে দিতে হবে। এজন্যই হয়তো গার্দিওলা বলেন, ‘আমি আর্নোল্ডকে দ্রুত সুস্থ হওয়ার জন্য শুভকামনা জানাই। যত দ্রুত সম্ভব সে মাঠে ফিরবে বলেও আশা করি। ’ 

শেষ অবধি মানসিক খেলার বিজয়ী হিসেবে তিনিই আবির্ভূত হবেন যার দল মাঠে জিতবে। এজন্য ম্যাচ পূর্ব সংবাদ সম্মেলন নিয়ে আলাপ বাড়ানোর সুযোগও খুব একটা নেই। তবুও অ্যানফিল্ডে রোববার ম্যানচেস্টার সিটি ও লিভারপুলের হয়ে ডাগ আউটে গার্দিওলা ও ক্লপের দাঁড়ানোর আগে এসব আছে আলোচনায়।

মুখোমুখি লড়াইয়ে ১১ ম্যাচ জিতেছেন গার্দিওলা, ক্লপ একটি বেশি- তাদের দুজনের লড়াইয়ের গল্পের শেষেই পরিসংখ্যান আনতে হলো। কেন? কারণ সংখ্যাতত্ত্ব, প্রভাব কিংবা টেকটিকসের লড়াই ছাপিয়ে ক্লপ বনাম গার্দিওলা এখন ‘কাল্ট ক্লাসিক’ কোনো সিনেমার মতো। বারবার দেখেও যার রেশ কাটিয়ে উঠা যায় না কখনোই। রোববার রাতে যখন ডাগ আউটে দাঁড়াবেন দুজন- তখন তাই প্রশ্নটা এসেই যাবে, আরও একবার ক্লপ-গার্দিওলা; কিন্তু এটাই কি শেষবার?

বাংলাদেশ সময় : ১৬১০ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০২৪
এমএইচবি/এএইচএস
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।