আর্জেন্টিনার রোজারিও শহরের এক প্রান্তে, লাস ফ্লোরেস নামে এক শ্রমজীবী পাড়ায়, এক ভবিষ্যৎ ফুটবল তারকার ছেলেবেলার গল্প শুরু হয়েছিল। নাম তার আনহেল কোরেয়া।
বাবার মৃত্যুর পর, মায়ের কাঁধে ভেঙে পড়েছিল পুরো সংসারের ভার। কখনো একবেলা, কখনো তা-ও না — এভাবেই কেটেছে তাদের দিনগুলো। ছোট্ট কোরেয়া দাদির হাত ধরে পায়ে পায়ে হাঁটতেন শহরের অলিগলি, কখনো ট্যাক্সির দরজা খুলে দিতেন, কখনও গোলাপ ফুল বিক্রি করতেন—শুধু সামান্য কিছু খাবারের আশায়।
বন্ধু হারিয়েছেন গুলির আঘাতে, হারিয়েছেন নিজের দুই ভাইকেও। খেলনার জগত ছিল না তার জন্য, ছিল কেবল একটা ফুটবল, তাতেই খুঁজে নিয়েছিলেন নিজের স্বপ্ন।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে নিজের শৈশবের কঠিন সময়ের কথা তুলে ধরেন কোরেয়া। পেশাদার ফুটবলার হওয়ার আগে কতটা দুঃসহ জীবনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে, তা অকপটে জানিয়েছেন তিনি।
"আমরা ছিলাম ১০ ভাই-বোন। আমাদের খাবারও জুটত না। যখন আমার বাবা মারা যান, মা একাই আমাদের সামলাতে থাকেন। কখনও কখনও দিনে মাত্র একবার খেতাম, আবার কখনও একেবারেই না," বলেন সাবেক সান লরেঞ্জোর এই ফুটবলার।
তিনি আরও যোগ করেন, "আমরা শহরের মধ্যে যেতাম, ট্যাক্সির দরজা খুলে দিতাম, গোলাপ ফুল বিক্রি করতাম। আমার দাদী আর আমি মাইলের পর মাইল হাঁটতাম, বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাহায্য চাইতাম। "
তবে কোরেয়া এই কঠিন সময়গুলোকেও এখন গর্বের সঙ্গে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, "আজ যখন আমরা ভাই-বোনেরা একসঙ্গে বসি, তখন সেই দিনগুলোর কথা আনন্দের সঙ্গেই স্মরণ করি। সামান্য জিনিসেই আমরা খুশি ছিলাম। সেই অভিজ্ঞতা আমাদের আজকের অবস্থানে পৌঁছাতে সাহায্য করেছে। এখন আর কোনও কিছুর অভাব নেই—এটাই আমাদের গর্ব। "
রোসারিও শহরের লাস ফ্লোরেস এলাকায় বেড়ে ওঠা কোরেয়ার জন্য ছেলেবেলা ছিল চরম কঠিন। তিনি বলেন, "অনেক বন্ধুদের হারিয়েছি গুলিতে, বা ভুল জায়গায় থাকার কারণে। ছোটবেলায় আমার কোনো খেলনা ছিল না—হয়তো একটা ফুটবল থাকত, সেটাই ছিল আমাদের আনন্দের সবকিছু। "
কোরেয়া কখনও হাল ছাড়েননি। একদিন হোর্হে গার্সিয়া তার প্রতিভা চিনে সান লরেঞ্জো ক্লাবে নিয়ে যান। হুয়ান আন্তোনিও পিসির আস্থায় জায়গা হয় প্রথম দলে। আর সেখান থেকেই আতলেতিকো মাদ্রিদ তাকে ৮ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে দলে নেয়।
কিন্তু ভাগ্য সহজ ছিল না। মেডিকেল পরীক্ষায় ধরা পড়ে হৃদযন্ত্রের সমস্যা। অস্ত্রোপচার হয়। সফল অস্ত্রোপচারের পর, জীবনের আরেক যুদ্ধ জিতে যান কোরেয়া।
আজ তিনি শুধু আতলেতিকো মাদ্রিদের ভরসাই নন, বরং আর্জেন্টিনার জাতীয় দলের গর্বও — কোপা আমেরিকা (২০২১ ও ২০২৪), ফাইনালিসিমা ও বিশ্বকাপ (২০২২) জয় করা সেই ছেলেটি, যিনি একদিন গোলাপ বিক্রি করতেন পেটের দায়ে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০২৫
এমএইচএম