মেসির এই গোল নিয়ে লাখো শিরোনাম হবে। প্রশংসা হবে।
আবার, যে খেলাটা হয়ে থাকতে পারতো বিশ্বকাপ ইতিহাসে একটি দলের (ইরান) সেরা ডিফেন্ডিং-এর এক নম্বর উদাহরণ তা হলো না শেষমেশ ওই একজনের কারণেই। আগের দিন যেমন লিখেছিলাম ইরানের গোলকিপিং আর রক্ষণভাগ যথেষ্ট ভালো। ওদের বিরুদ্ধে যখন-তখন গোল করা মোটেও সহজ না, আবার মেসির কথাও মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছিলো এই বলে যে, যতোই সন্তোষজনক ইতিহাস থাক ইরানের গোলরক্ষণ আর রক্ষণভাগের- মেসির মতো খেলোয়াড় বিপক্ষে থাকলে যে কোনো অংকই পালটে যেতে পারে। হলো তো তা-ই!
২০০৯ থেকে ’১২ একটানা চার বছর ফিফার বিশ্বসেরা খেলোয়াড়, স্প্যানিশ লা লিগায় সাড়ে তিন শ‘ গোল করা মেসি গত দুই ওয়ার্ল্ড কাপে ৮ ম্যাচে করেছিলেন ১টা মাত্র গোল। বিশ্বকাপে মেসিকে খুঁজে পাওয়া যায় না- এই অপবাদ মাথায় নিয়ে ব্রাজিলে এসে নেমেছিলেন আর্জেন্টাইন এই সুপারস্টার। তারপর প্রথম খেলায় জয়সূচক গোল করার পর গতরাতে ইরানের সঙ্গে দলবাঁচানো যে গোলটা করলেন তিনি এরপর তো আর সমালোচক-নিন্দুকদের মুখে কথা থাকার কথা না।
সারা খেলায় ৬৯ ভাগ সময় বল দখলে ছিলো আর্জেন্টিনার। ৩১ ভাগ ইরানের। প্রথমার্ধের পুরো সময়টাই খেলা চলেছে অর্ধেক মাঠে। ইরানের হাফে। দ্বিতীয়ার্ধে যদিও পাল্টা আক্রমণে যায় ইরান। বেশ টেনশনে ফেলে দেয় তারা আর্জেন্টিনা আর এর সাপোর্টারদের। ইঊরোপিয়ান লিগে খেলা, ১৬ নম্বর জার্সির রেজা ঘুচানেজাদ আর হাতে ট্যাটু আঁকা চাপদাড়ির আসকেন দেজাঘ ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছিলেন আর্জেন্টাইন ডিফেন্সের জন্য। যদিও গোলরক্ষক রোমেরোর দৃঢ়তায় অন্তঃত দু’বার বেঁচে যায় আর্জেন্টিনা। মাঠের অন্যপ্রান্তে অন্য যে গোলকিপার পোস্টে নেওয়া আর্জেন্টিনার সব শটকে পাঞ্চ আর ফিস্ট করে উড়িয়ে দিচ্ছিলেন তার নাম আলি রেজা হেগিগি।
তবে পৃথিবীর তাবৎ ফুটবল দর্শক যখন প্রায় বা সম্পূর্ণ বিশ্বাস করে ফেলেছেন, পয়েন্টে ভাগ বসিয়ে দিয়েছে ইরান তখন অন্য এক বিশ্বাসে মগ্ন অন্য একজন। রেফারি যখন ৯০ মিনিট শেষ করে অতিরিক্ত চার মিনিটের ইনজুরি টাইম শুরু করেছেন তখন আর কী-বা বাকি খেলার।
বাকি ছিলো মেসির বাঁ পায়ের চিরচেনা সেই যাদু। পেনাল্টি বক্সের বাইরে বলটা পেয়ে আউটসাইড একটা ডজ নিলেন মেসি। সামনে তার ইরানি দু'তিন ডিফেন্ডার, তাদের পেছনে গোলকিপার। ভালো করে বোধহয় দেখারও দরকার মনে করলেন না গোলরক্ষকের পজিশন। সবাইকে ফাঁকি দিয়ে বাঁ পায়ে হাওয়ায় ভাসিয়ে দিলেন বল। মেসির নেওয়া এই ‘মুখস্থ’ শর্টটা সবশেষ ফাঁকি দিলো সাইড বার আর ডাইভিং গোলরক্ষকের হাত।
এমন কাজ পারেন বলেই তো তিনি মেসি।
এক এবং একমাত্র!
বাংলাদেশের আধুনিক স্পোর্টস সাংবাদিকতার পথিকৃৎ মনে করা হয় তাকে। বর্তমানে কানাডার মন্ট্রিয়লে থাকেন। তবে এখনও স্পোর্টস এবং লেখালেখি তার হ্রদস্পন্দনের সাথেই যেনো মিশে আছে। বিশ্বকাপ ফুটবলের এবারের আয়োজনে ফরহাদ টিটো লিখছেন বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪০ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০১৪