রাশিয়া বিশ্বকাপে ব্যর্থতার পর জার্মান ফুটবল ফেডারেশনের (ডিএফবি) প্রেসিডেন্ট রেইনহার্ড গ্রিন্দেলের বিরুদ্ধে তার সঙ্গে বর্ণবাদী আচরণের অভিযোগ আনেন আর্সেনাল মিডফিল্ডার মেসুত ওজিল। সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম টুইটারে দেয়া এক বিবৃতিতে ওজিল লিখেন, ‘জিতলে আমি জার্মান, আর হারলে আমি শরণার্থী’।
ওজিলের ওই ঘোষণার পর মুখ খোলেন জার্মানির ক্লাব ফুটবলের জায়ান্ট বায়ার্ন মিউনিখের প্রেসিডেন্ট উলি হোনেস। ওজিলের বিবৃতির জবাবে তিনি তীব্র আক্রমণাত্মক ভাষায় বলেন, ‘গত কয়েক বছর সে দলের জন্য কিছুই করেনি। ’
বায়ার্ন প্রধানের ওই মন্তব্যে হতাশা প্রকাশ করে ওজিলের এজেন্ট সগুত গোল ডট কমকে বলেন, ‘হোনেসের ওই মন্তব্য মূল পয়েন্টকে পুরোপুরি মিস করে গেছে। তার মন্তব্য ফুটবলের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। তিনি মূল প্রসঙ্গ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। তিনি বর্ণবাদ ও বৈষম্য যা প্রতিনিয়ত জার্মান সমাজে বেড়ে চলেছে সেই প্রসঙ্গ এড়িয়ে গেছেন। ’
ওজিলের বিবৃতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘মেসুত তার বিবৃতিতে যেমনটা বলেছেন, ফুটবল এবং এই সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে প্রাসঙ্গিক ও সঠিক সমালোচনাকে তিনি সাদরে গ্রহণ করেন। যাই হোক, হোনেস তার মূর্খতাপূর্ণ মন্তব্য যা এরইমধ্যে ক্ষতিকারক সাব্যস্ত হয়েছে, তার সপক্ষে কোনো যুক্তি দাঁড় করাতে পারেননি। এই ক্ষেত্রে সব একদম দিবালোকের মতো পরিস্কার। ’
‘২৩ গোল, ৪০ অ্যাসিস্ট, যা জার্মান রেকর্ড এবং পাঁচবারের বর্ষসেরা জার্মান ফুটবলার- যার তিনবারই ২০১৪ সালের পরে। অথচ, বায়ার্ন প্রধান দাবি করেছেন যে, মেসুত নাকি কয়েক বছর ধরেই “ভূত” হয়ে আছেন, কিন্তু একজন “ভূত” কি করে এইসব পুরস্কার জেতে আর এতো সাফল্য পেতে পারে? ২০১৮ সালের বিশ্বকাপেও মেসুত প্রতি ৯০ মিনিটে যেকোনো খেলোয়াড়ের চেয়ে বেশি সুযোগ তৈরি করেছেন। কিন্তু তিনি (হোনেস) শুধু তাকেই টার্গেট করেছেন। বায়ার্নের মতো ক্লাবের প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার নিজের ক্লাবের খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সের দিকেই নজর দেওয়ার কথা কেননা বিশ্বকাপের দলে তার ক্লাবের ৮জন সদস্য ছিল। ’
‘মেসুত যদি এতোই খারাপ খেলোয়াড় হয় তাহলে তাকে নিয়ে জোয়াকিম লো, আর্সেন ওয়েঙ্গার ও হোসে মরিনহোর করা মন্তব্যের তিনি কি জবাব দেবেন? এই তিন শীর্ষ ম্যানেজার মেসুতকে তার পজিশনে সেরাদের একজন বলে মন্তব্য করেছেন। এটা হাস্যকর যে, তিনি নিজেকে এই তিনজনের চেয়ে বেশি ফুটবল বিষয়ে জ্ঞানী মনে করেন। এটা ঠিক যে মেসুতকে নিয়ে তার মন্তব্য পুরোই বানানো এবং মিথ্যা। আর মেসুতকে নিয়ে কথা বলার তিনি কে? তার বলা মিথ্যা খুবই সস্তা, গৎবাঁধা আর ভিত্তিহীন। ’
ওজিলের এজেন্ট তার ক্লায়েন্টের প্রতি বর্ণবাদ আর বৈষম্যমূলক আচরণ নিয়েও কথা বলেন। তিনি দাবি করেন বায়ার্ন প্রধান “অস্বস্তিকর সত্য” যার মুখোমুখি তিনি কখনও হননি, তার সম্মুখীন হতে ভয় পান। নিজ জাতিসত্তা আর ধর্ম নিয়ে যে ওজিলকে ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার হয়ে হয়েছে তা অনুধাবন করতে বায়ার্ন প্রধান ব্যর্থ হয়েছেন বলেও দাবি করেন তিনি।
বর্ণবাদ ও বৈষম্য নিয়ে ওজিলের বক্তব্যের প্রশংসা করে তার এজেন্ট আরও বলেন, ‘জার্মানিতে যারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে তাদের জন্য ওজিলের বক্তব্য অনেক বড় সাহসিকতা। অভিবাসী, মুসলিম এবং আরও যারা আছেন। এরা তারাই যাদের বায়ার্ন প্রধান প্রতিনিধিত্ব করেন না। হোনেস নিশ্চিতই তাদের অন্তর্ভূক্ত যারা তাদের সামনে থাকা এই সমস্যার মুখোমুখি হতে পারেন না এবং যারা এই বিষয়কে লুকিয়ে রাখতে মিথ্যার আশ্রয় নেন। '
হোনেস মূল প্রসঙ্গকে আড়াল করতে ইচ্ছে করেই মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছেন বলে দাবি সগুতের। তবে বায়ার্ন প্রধানকে মিথ্যের সাহায্যে জয়ী হতে দেবেন না বলেও জানিয়েছেন তিনি। ‘যাই হোক, আমি তাকে জয়ী হতে দেবো না। মেসুত জার্মানির জন্য মাঠে ও মাঠের বাইরে নিজের সেরাটা দিয়েছে-তা এতোই বেশি যা তিনি (হোনেস) কল্পনাও করতে পারবেন না’।
২০০৯ সালে জার্মানির হয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিষিক্ত হয়ে ৯২ ম্যাচে ওজিলের গোল ২৩টি। জার্মানির ২০১৪ সালের বিশ্বকাপ জয়েও অন্যতম ভূমিকা ছিল এই আর্সেনাল প্লে-মেকারের।
বাংলাদেশ সময় ১৫৫৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০১৮
এমএইচএম/এমএমএস