জিলেটের ৯০ সেকেন্ডের ভিডিওতে সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বিশ্বকাপে নিজের আচরণের কারণে সমালচনার জবাব দেন নেইমার। সেই ভিডিওতে তিনি বিশ্বকাপে ফাউল আদায়ের জন্য নিজের অভিনয়ের কথা স্বীকার করার পাশাপাশি নিজেকে নতুন এক মানুষ হিসেবে উপস্থাপন করেন।
পায়ের ইনজুরি থেকে সেরে ওঠার পর বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে ২ গোলও করেন নেইমার। কিন্তু বেলজিয়ামের বিপক্ষে হেরে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে হতাশাজনক বিদায় ঘটে সেলেসাওদের। বিদায়ের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত ব্রাজিলের জয়-পরাজয় ছাপিয়ে আলোচনায় উঠে আসে নেইমারের ডাইভ আর ব্যথার অভিনয়। সারা বিশ্বে সমালোচনা আর ইন্টারনেটে ট্রলের শিকার হন তিনি।
বিশ্বকাপের পর প্রকাশিত ফিফার সেরা খেলোয়াড়দের সংক্ষিপ্ত তালিকা থেকেও বাদ পড়ে ২৬ বছর বয়সী বিশ্বের সবচেয়ে দামি ফুটবলার নেইমারের নাম।
বিজ্ঞাপনের এক পর্যায়ে নেইমারকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনি মনে করেন আমি অতিপ্রতিক্রিয়া দেখাই, কখনও কখনও আমি তা করি। কিন্তু সত্যিটা হচ্ছে, আমাকে মাঠে ভুগতে হয়। আপনার কোনো ধারণাই নেই আমাকে কিসের ভেতর দিয়ে যেতে হয়। '
'যখন আমি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা না বলেই বের হয়ে যাই, এটা এইজন্য নয় যে আমি এটা জিততে চাই, এটা এইজন্য যে, আমি এখনও আপনাদের হতাশ করতে শিখিনি। '
সেই বিজ্ঞাপনে নিজের ‘ভেতরের শিশু’কে মাঠের বাইরে রাখার প্রতিজ্ঞা করেন নেইমার। তবে তার এমন প্রচেষ্টা সবই বিফলে যাওয়ার পথে। ব্রাজিলের ও গ্লোবো পত্রিকা জানিয়েছে, বিজ্ঞাপনে অভিনয় আর বিজ্ঞাপনী সংস্থা গ্রে’র তৈরি করে দেয়া লিখিত পাণ্ডুলিপি পাঠ জন্য এক মিলিয়নের বেশি ব্রাজিলীয় মুদ্রা নিয়েছেন তিনি, যা প্রায় ২ লাখ পাউন্ডের সমান।
পত্রিকাটি জানিয়েছে, বহু বছর ধরেই জিলেটের হয়ে বিজ্ঞাপন নির্মাণ করে গ্রে। তাদের আইডিয়া খুব দ্রুত জিলেট এবং নেইমারের সহকারীরা লুফে নেয়। যেসব বক্তব্য বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলো লেখায় নেইমারের নিজের কোনো ভূমিকা ছিল না। তিনি শুধুই সেই বক্তব্যগুলোকে তাকে যেভাবে বলা হয়েছে সেভাবে বলে গেছেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও নেইমারের ভিডিওটি নিয়ে তুমুল সমালোচনা চলছে। বিজ্ঞাপনে আবেগাপ্লুত বক্তব্যটি বিজ্ঞাপনী প্রচারণা আর বানানো বক্তব্য ছাড়া আর কিছু নয় বলে অনেকে মন্তব্য করছে। এর পেছনে তাদের যুক্তি, বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার ২০ দিন পরও মিডিয়ার মুখোমুখি না হওয়া নেইমার শুধু তার স্পন্সর কোম্পানির বিজ্ঞাপনে হাজির হয়েছেন তাও এক সাজানো চিত্রনাট্য নিয়ে।
নেইমারকে ধুয়ে দিয়ে জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার ড্যানিয়েল পেরোনে লিখেছেন, ‘একবার ভাবুন তো সেই শ্রমিকের কথা যে ভোর ৫টায় ঘুম থেকে ওঠে কাজে যায় সে যদি শোনে বিশ্বের সবচেয়ে দামি ফুটবলারটি কঠিন জীবনের অভিযোগ করছে, তাহলে তার কেমন লাগবে? এবং এর বিনিময়ে যদি অর্থও আয় হয়? এটা মোটেই ঠিক নয়। ’
তবে নেইমারের পাশে দাঁড়িয়েছেন তার মা নাদিনে সান্তোস। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি লিখেছেন, ‘আমি তোমার সবচেয়ে বড় হিতাকাঙ্ক্ষী এবং পুরো সম্মান রেখেই বলছি, যারা তোমাকে ভালবাসে না তাদের ব্যবহার করা শব্দ আর অভিযোগের তীরে নিজেকে বিদ্ধ করো না। ’
বিজ্ঞাপনে নেইমারকে বলতে শোনা যায়, 'যখন আমাকে রুঢ দেখায়, তার মানে এই নয় যে আমি বখে যাওয়া ছেলে। এটা এইজন্য যে, আমি এখনও হতাশার সঙ্গে বোঝাপড়া করতে শিখিনি। '
'আমি আপনাদের সমালোচনা গ্রহণ করতে সময় নিয়েছি। আমি আমার চেহারা আয়নায় দেখার জন্যও সময়ে নিয়েছি এবং নতুন মানুষ হিসেবে তৈরি হয়েছি। কিন্তু এখন আমি এখানে, আমার হৃদয়ের দরজা উন্মুক্ত করে। '
'আমি অনুভব করেছি যারা পড়ে যায় তারাই উঠে দাঁড়াতে পারে। আপনি আমার দিকে পাথর নিক্ষেপ করতে পারেন কিংবা আপনি আপনার পাথর দূরে ছুড়ে ফেলতে পারেন এবং আমাকে উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করতে পারেন কারণ আমি যখন উঠে দাঁড়াই, পুরো দেশই আমার সঙ্গে উঠে দাঁড়ায়। '
কিন্তু তার ভক্তদের মাঝেই তার এই বক্তব্য গ্রহনযোগ্যতা পাচ্ছে না। তারা এই বিজ্ঞাপনকে কল্পিত ও কৃত্রিম বলে উল্টো সমালোচনায় মুখর হয়েছে। তার এটাই বলছে, নেইমার অধিকাংশ সময় তার স্পনসরদের কাছ থেকে অর্থ পাওয়ার পর মুখ খোলেন। আর এজন্য তার ভক্তরা তার রেখেছেন ‘নেইমার্কেটিং’।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলেকজান্ডার বারি লিখেছেন, ‘লোকটা নিজেকে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রকাশ করছে? সত্যি অবিশ্বাস্য। ’
ব্রাজিলে বিজ্ঞাপনটি নিয়ে এমন নেতিবাচক মন্তব্যের ঝড় দেখে জিলেট আর গ্রে কর্তৃপক্ষও জরুরি বৈঠক ডেকেছে। তারা নেইমারের সাফাই গেয়ে বক্তব্যও দিয়েছে। যদিও তাতে এখনও কাজ হয়নি। উল্টো সমালোচনা এখন ব্রাজিল ছাড়িয়ে বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। এখন দেখা যাক, কোথাকার জল কোথায় গিয়ে গড়ায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ১, ২০১৮
এমএইচএম/এমএমএস