২০১৬ সালে দ্বিতীয় বিভাগে অবনমন হওয়া দোরাদোস ক্লাবকে প্রথম বিভাগে তোলার দায়িত্ব এখন আর্জেন্টাইন কিংবদন্তীর। নতুন দায়িত্ব নিয়ে বেশ আশাবাদী তিনি।
ম্যারাডোনার নতুন ক্লাব দোরাদোসের অবস্থান নিয়ে দেখা দিয়েছে নানান প্রশ্ন। এই ক্লাবের অবস্থান মেক্সিকোর মাদক চোরাচালানের জন্য কুখ্যাত সুলিসান শহরে। এ অঞ্চলেই ‘ড্রাগ ট্রাফিকিং’য়ে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সংগঠনের অবস্থান। এই গ্রুপের সাবেক প্রধান ও কুখ্যাত ‘ড্রাগ মাফিয়া’ চাপো গুসমানের বিচারপ্রক্রিয়া চলছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে।
মেক্সিকোর সুলিসানের সঙ্গে মাদকের সম্পর্ক থাকায় আলোচনায় ওঠে এসেছে ম্যারাডোনার কোকেন আসক্তি। দীর্ঘ সময় এই আসক্তির কারণে ভুগতে হয়েছে তাকে। ১৯৯১ সালে ইতালিতে ড্রাগ টেস্টে কোকেনের জন্য ধরা পড়ায় ১৫ মাসের জন্য ফুটবল থেকে নিষিদ্ধ হন তিনি।
১৯৯৪ বিশ্বকাপে ইফিড্রিন টেস্টে ইতিবাচক ফলাফলের জন্য তাকে প্রতিযোগিতা থেকেই বাদ দেওয়া হয়। এরপর আরও অনেকবার অ্যালকোহল ও কোকেন আসক্তির কথা স্বীকার করেছেন তিনি। গত রাশিয়া বিশ্বকাপেও তার কোকেন গ্রহণের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল।
কিন্তু, এবার নিজের মাদকাসক্তি নিয়ে কোনো লুকোছাপা না করে বরং সব স্বীকার করে নতুন ক্লাব দোরাদোসের জন্য নিজেকে উজাড় করে দেওয়ার কথা জানালেন ম্যারাডোনা।
'অসুস্থ থাকাকালীন আমি যা হারিয়েছি তা আমি দোরাদোসকে দিতে চাই। আমি ১৪ বছর অসুস্থ ছিলাম। এখন আমি সূর্য দেখতে চাই, আমি রাতে বিছানায় যেতে চাই। '
'আমি এমনকি বিছানায় যেতাম না। আমি এটাও জানতাম না যে বালিশ কেমন। এজন্যই আমি দোরাদোসের অফার গ্রহণ করেছি। '
'মানুষ অনেককিছু বলতে পারে, কিন্তু আমি নিজে নিচে নেমে যাচ্ছিলাম, আমি নিজেই নিজেকে খেয়ে ফেলছিলাম, আমি পিছিয়ে যাচ্ছিলাম এবং ফুটবল একধাপ এগিয়ে। '
'সব পাল্টে গেছে, ধন্যবাদ আমার কন্যাদের। '
'আমি কপর্দকশূন্য হয়ে গিয়েছিলাম, আমি আবার কাজে ফিরলাম। আমার চার বছর বয়সী কন্যা, আমি যখন কোমায় ছিলাম, সে বিছানার চাদর টেনে আমাকে জাগানোর চেষ্টা করেছে। '
নতুন দায়িত্ব নিয়ে আশাবাদী ম্যারাডোনা বলেন, 'আমি (দোরাদোসে) দীর্ঘদিন কাটাতে চাই। '
'ফুজাইরাহতে যেমন করেছি, আমি এখানে আমার হৃদয় উজাড় করতে এসেছি। ফুজাইরাহতে আমি প্রতিদিন ৩০০ কিলোমিটার ড্রাইভ করে কাজে যেতাম। যখন আপনি জানবেন যে ক্লাবের কোনো শিরোপা নেই, নিশ্চিত হতে হবে তাদের উত্তরণ নিয়ে। '
মেক্সিকোর দ্বিতীয় বিভাগের লিগে ১৩তম অবস্থানে আছে দোরাদোস। গত ছয় বছর ধরে শিরোপাশূন্য এই ক্লাবকে প্রথম বিভাগে তোলার মতো কঠিন কাজ হাতে নেওয়া ম্যারাডোনা বলেন, 'এখন আমাদের একটি হাতিকে নিজেদের কাঁধে তুলে নিতে হবে এবং এটা সহজ নয়। '
'আমি লুকাই না, মারি না এবং মিথ্যা বলি না। '
মেক্সিকোর দোরাদোসের দায়িত্ব নেওয়ার আগে বেলারুশের ক্লাব দিনামো ব্রেস্টের প্রেসিডেন্ট ছিলেন ম্যারাডোনা। তারও আগে কোচ হিসেবে আর্জেন্টিনা, আল-ওয়াসল, রেসিং এবং দেপোর্তিভো ম্যান্দিউ’র মতো ক্লাবের দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। শেষমেশ আবার কোচিংয়েই ফিরলেন।
মেক্সিকোতে নিজের ফুটবল ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় অর্জন তথা বিশ্বকাপের শিরোপা জেতার স্বাদ পেয়েছিলেন ম্যারাডোনা। ১৯৮৬ সালের মেক্সিকো বিশ্বকাপেই তার বিতর্কিত ‘হ্যান্ড অব গড’ গোলের সাক্ষী হয়েছিল ফুটবল বিশ্ব। এই বিশ্বকাপ থেকেই সারা বিশ্বে তুমুল জনপ্রিয়তা পান তিনি। আর এবার সেই মেক্সিকোতেই ফিরেছেন ম্যারাডোনা, কোচ হয়ে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৮
এমএইচএম