লিঁও আক্রমণ শানাতে পারেনি, কিন্তু তাদের জমাট রক্ষণ ভাঙতে দেয়নি মেসিদের। এরমধ্যে কমপক্ষে তিনবার নিশ্চিত গোল ঠেকিয়েছেন লিঁও গোলরক্ষক।
অথচ পরিসংখ্যানে দুই দলের পার্থক্য অনেক। চ্যাম্পিয়নস লিগে গত ছয়বারের দেখায় একবারও বার্সাকে হারাতে পারেনি লিঁও, যার চারটিতেই জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে কাতালানরা। সর্বশেষ দুই দলের দেখা হয়েছিল ১০ বছর আগে। ২০০৮/০৯ মৌসুমের শেষ ষোলোয় দুই লেগ মিলিয়ে ৬-৩ গোলে জিতে সেমিতে পা রেখেছিল বার্সা। তবে এবারের আসরে একদিক থেকে দুই দলই সমান। এখন পর্যন্ত চলতি আসরে কোনো মাচ হারেনি দুই দলই।
২০১১/১২ মৌসুমে শেষবার নকআউট পর্বে পা রেখেছিল ফরাসি ক্লাবটি। গত ছয়বারের পাঁচবারই তাদের লড়াই শেষ ষোলোয় এসে থেমে গেছে। অন্যদিকে বার্সা টানা ১৫বার নকআউট পর্বে পা রেখেছে। তাদের চেয়ে এগিয়ে একমাত্র রিয়াল মাদ্রিদ (২২)। সর্বশেষ ২০০৬/০৭ মৌসুমে তারা লিভারপুলের কাছে হেরে শেষ ষোলো থেকে বিদায় নিয়েছিল।
চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোয় নিজেদের প্রথম ম্যাচের ৬ মিনিটেই গোলরক্ষক আন্দ্রে টের স্টেগানের ভুলে গোল খেতে পারতো বার্সা। লিঁও’র ফরাসি মিডফিল্ডার হওসেম অওয়ারের নেওয়া নিচু শট ঠেকাতে বেশ বেগ পেতে হয় বার্সা গোলরক্ষককে। কর্নারের বিনিময়ে গোল ঠেকান তিনি। কিন্তু তাতে অবশ্য কোনো বিপদ ঘটেনি।
৮ মিনিটে ফের দারুণ সুযোগ পেয়ে গিয়েছিল অলিম্পিক লিঁও। মুসা ডেম্বেলের লম্বা করে বাড়ানো বল পায়ে জড়িয়ে তেরিয়ারের নেওয়া রকেট গতির শট ঠেকাতে রীতিমত নিজের সেরাটা দেখাতে হয় টের স্টেগানকে। ফিরতি শটও ঠেকাতে বেশ বেগ পেতে হয় তাকে।
১৭ মিনিটে বাঁ প্রান্ত থেকে আক্রমণ শানানো আলবার কাট-ব্যাক থেকে বল পেয়েও ফাঁকায় থাকা মেসি প্রথম সুযোগেই গোল করতে পারতেন। কিন্তু আর্জেন্টাইন তারকার সেই প্রচেষ্টা নষ্ট হয়। ১৯ মিনিটে অল্পের জন্য সুযোগ মিস করেন উসমান ডেম্বেলে। লিঁও’র রক্ষণকে ফাঁকি দিয়ে গোলরক্ষক লোপেসকে একা পেয়েও পরাস্ত করতে ব্যর্থ হন এই উইঙ্গার।
স্বাগতিক লিঁও বার্সার রক্ষণকে এই রাতে বারংবার পরীক্ষায় ফেলে দেয়। প্রথমার্ধের একদম শেষদিকে মুসা ডেম্বেলের পাস থেকে পোস্টের একদম কাছ থেকে লক্ষ্যভ্রষ্ট শট নেন তেরিয়ের।
৫২ মিনিটে কাঙ্ক্ষিত গোলের দেখা প্রায় পেয়েই গিয়েছিল লিঁও। ডিপে’র দুর্দান্ত ভলি ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন টের স্টেগান। কিন্তু বাম পোস্টের বাইরে বল মেরে এমন সুযোগ হেলায় হারান ডাচ ফরোয়ার্ড। ৬৩ মিনিটে গোলমুখ খোলার কাছ চলে গিয়েছিলেন লুইস সুয়ারেজ। যদিও ওই দুর্বল শট না নিয়ে মেসির পায়ে ঠেলাই হতো বুদ্ধিমানের কাজ। ৬৫ মিনিটে উসমান ডেম্বেলের সঙ্গে ওয়ান-টু খেলে কঠিন এক কোণ থেকে শট নেন মেসি। কিন্তু নিচু হয়ে তা ঠেকিয়ে দেন লিঁও গোলরক্ষক। ৬৮ মিনিটে ফের গোলমুখে শট নেন মেসি। এবার আলবার পাস এতোই দ্রুত ছিল যে তা থেকে গোল করা প্রায় অসম্ভব।
গোল মিসের মহড়ায় মেসির সঙ্গে সমান তালে পাল্লা দিয়েছেন সুয়ারেজ। ৭৪ মিনিটে আলবার দ্রুতগতির কাট-ব্যাক থেকে বল ফাঁকায় পেয়েও লোপেসকে ফাঁকি দিতে ব্যর্থ হন এই উরুগুইয়ান স্ট্রাইকার। মিনিট চারেক পর ফের সুযোগ মিস। এবারও কালপ্রিট সেই সুয়ারেজ। এবারও তাকে বাঁ প্রান্ত থেকে জায়গা বানিয়ে বল পৌছে দেন আলবা। কিন্তু লোপেসের হাতেই অপমৃত্যু হয় এই প্রচেষ্টার।
লিঁও’র গোলরক্ষক যেন অতিমানব হয়েই মাঠে নেমেছিলেন আজ। নাহলে একের পর এক আক্রমণ যেভাবে ঠেকিয়েছেন তাতে ম্যাচ ড্র হলেও জয়ের আনন্দ নিয়েই মাঠ ছাড়তে পারেন তিনি। ৭৬ মিনিটে বদলি হিসেবে নামা ফিলিপ্পে কৌতিনহোর বক্সের ঠিক বাইরে থেকে নেওয়া শট ডিফেন্সের কারো অপেক্ষায় না থেকে নিজে এগিয়ে এসে ঠেকিয়ে দেন অবিশ্বাস্য খেলতে থাকা এই গোলরক্ষক।
৮৬ মিনিটে শেষ সুযোগটা নষ্ট করেন বুসকেতস। আলবার ক্রস থেকে পাওয়া বলে হেড করে মেসির কাছে পৌছে দেন অ্যালেক্স ভিদাল। বল কাট-ব্যাক করে বুসকেতসকে পাস দেন মেসি। শটও নেন বুসকেতস। কিন্তু এবারও দেয়াল হয়ে দাঁড়ালেন লিঁও গোলরক্ষক। বাকি সময়ে আর কোনো তাৎপর্যপূর্ণ আক্রমণ শানাতে পারেনি কোনো দলই। ফলে ড্র নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় দুই দলকেই। তবে ড্র ম্যাচেও জয়ের আনন্দ নিতে পারে লিঁও। কেননা অন্তত মেসি-সুয়ারেজ-কৌতিনহো সমৃদ্ধ বার্সাকে গোল করা থেকে বিরত রাখতে পারাও কম কিসে!
বাংলাদেশ সময়: ০৪২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৯
এমএইচএম