ওল্ড ট্রাফোর্ডে বুধবার (১০ এপ্রিল) রাতে চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগের শুরুতে অগোছালো আক্রমণ করে ফল পাচ্ছিল না বার্সা। বিশেষ করে দলের দুই প্রধান তারকা মেসি ও সুয়ারেজের জুটি ঠিক জমছিল না।
বল জালে ঢোকার ঠিক আগ মুহূর্তে তা ইউনাইটেড ডিফেন্ডার লুক শ’র পা ছুঁয়ে যায়। সুয়ারেজ উদযাপনে মাতেন। কিন্তু লাইন্সম্যান অফ-সাইডের ইশারা করলে তাতে সাময়িক ছেদ পড়ে। পরে ভিডিও রেফারির সহায়তা নিয়ে গোলের বাঁশি বাজান মাঠের রেফারি। নিজেদের জালে বল জড়িয়ে বার্সাকে গোল উপহার দেন লুক শ।
গোল খাওয়ার যেন তেঁতে উঠে স্বাগতিকরা। একের পর এক কাউন্টার অ্যাটাক করে বার্সা রক্ষণকে তটস্ত করে রাখেন পল পগবা-মার্কাস রাশফোর্ডরা। মাঝে জেরার্ড পিকের বাজে পাস পগবার দখলে চলে গেলে তাকে ঠেকাতে গিয়ে ফাউল করে বসেন সার্জিও বুসকেতস। তাতে হলুদ কার্ডও দেখতে হয় তাকে। এদিকে মেসিকে ঠেকাতে মরিয়া ম্যানইউ’র ডিফেন্ডাররা তাকে বেশ কয়েকবার কঠিন ট্যাকল করে বসেন। বিশেষ করে লুক শ দু’বার মেসিকে ফাউল করে শেষে হলুদ কার্ড দেখে পরের লেগ মিস নিশ্চিত করেছেন।
২৩তম মিনিটে ডালোটের বাড়িয়ে দেওয়া বলে জোরালো শট নেন রাশফোর্ড। কিন্তু অনেকটা সময় ও জায়গা পেলেও গোলবারের উপর দিয়ে মেরে বসেন ইউনাইটেড ফরোয়ার্ড। ৩০তম মিনিটে নিজেদের ডি-বক্সে ম্যাকটমিনিকে ফাউল করেন বার্সা সেন্টার-ব্যাক পিকে। পেনাল্টির আবেদন করে ইউনাইটেড। কিন্তু রেফারি তাতে সাড়া দেননি। এদিকে যখন এসব ঘটছে মাঝ মাঠে তখন ইউনাইটেড সেন্টার-ব্যাক ক্রিস স্ম্যালিংয়ের আঘাতে নাক ভেঙে কাতরাচ্ছেন মেসি। অনেকটা রক্ত নির্গত হলেও অবশ্য প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে ফের মাঠে নামেন বার্সা অধিনায়ক।
৭৩ শতাংশ সময় বল দখলে থাকলেও ম্যাচের ৩৬তম মিনিটে সত্যিকারের আক্রমণ শানায় বার্সা। মেসির বাড়িয়ে দেওয়া বলের বাউন্স থামাতে ব্যর্থ স্ম্যালিংয়ের কাছ থেকে বল নিজের দখলে নিয়ে ফিলিপ্পে কৌতিনহোর দিকে বাড়ান সুয়ারেজ। কৌতিনহোর জোরালো শট পা দিয়ে ঠেকিয়ে দেন ম্যানইউ গোলরক্ষক দাভিদ দে গিয়া।
দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচে ফিরতে মরিয়া ম্যানইউ বেশ কিছু সুযোগ হারায়। এর সঙ্গে যোগ হয় দুর্ভাগ্য। ৫৪তম মিনিটে নিজেদের ডি-বক্সে ইউনাইটেডের মিডফিল্ডার পগবাকে ফাউল করেছিলেন বার্সা ডিফেন্ডার বুসকেতস। কিন্তু তা রেফারির চোখ এড়িয়ে যায়। তারপরও সুবিধাজনক অবস্থানে বল পেয়ে যান রাশফোর্ড। কিন্তু গোলরক্ষকের দৃঢ়তায় গোল হজম করা থেকে বেঁচে যায় বার্সা। ম্যাচের সময় যত বাড়তে থাকে খেলার নিয়ন্ত্রণ ততোই বার্সার হাতে চলে যায়। ৬৫তম মিনিটে নেলসন সেমেদোর পাস থেকে বল পেয়ে অল্পের জন্য লক্ষ্য মিস করেন সুয়ারেজ।
ম্যাচে ফিরতে না পেরে ক্রমেই আক্রমণাত্বক খেলতে শুরু করে ম্যানইউ। ৭৬তম মিনিটে আর্তুরো ভিদালকে পেছন থেকে আঘাত করে হলুদ কার্ড দেখেন জেসে লিনগার্ড। ৮৩ মিনিটে এর রেশ দেখা যায় পগবার মাঝেও। বার্সার সেমেদোর বুটে আঘাত করেন ফরাসি তারকা, তাও নিজেদের ডি-বক্সের কাছে। অথচ সেখানে তার দলের ডিফেন্ডাররা প্রস্তুত ছিলেন। রেফারি ফ্রি-কিকের বাঁশি বাজালে শট নেন মেসি, কিন্তু অল্পের জন্য তা দে গিয়ার কাছে পরাস্ত হয়। ৮৮ মিনিটে সুয়ারেজকে আঘাত করে হলুদ কার্ড দেখেন স্ম্যালিং।
নির্ধারিত সময়ের পর যোগ করা সময়ে শেষ সুযোগ পেয়েছিল ওলে গানার সুলশারের শিষ্যরা। কিন্তু স্ম্যালিংয়ের শট ঘুরে ক্রসবারের ওপর দিয়ে গ্যালারিতে ঠাই নেয়। স্বাগতিক দর্শকদের হতাশা নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয়। যদিও দল হিসেবে বার্সার চেয়ে স্বাগতিকরাই বেশি সুযোগ তৈরি করেছিল। কিন্তু লুক শ’র শুরুর ওই ভুলের খেসারত গুনে হার সঙ্গী করেই দ্বিতীয় লেগে খেলতে নামতে হবে তাদের। অপরদিকে ওল্ড ট্রাফোর্ডে উপস্থিত মাত্র ১৭০০ বার্সা সমর্থক উৎসবের আমেজ নিয়েই বাড়ি ফিরবেন। কারণ পরের ম্যাচ তো ঘরের মাঠে।
বাংলাদেশ সময়: ০৩৩৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০১৯
এমএইচএম/