ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফুটবল

১ হাজার শিশুর অপারেশনের দায়িত্ব নিচ্ছেন ওজিল

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৯
১ হাজার শিশুর অপারেশনের দায়িত্ব নিচ্ছেন ওজিল .

আর্সেনাল মিডফিল্ডার মেসুত ওজিলের লন্ডনের বিলাসবহুল বাড়ির রান্নাঘরের দেয়ালে একটি চিঠি বাঁধানো অবস্থায় আছে। ৪২.৫ পাউন্ড ট্রান্সফার ফি’তে ছয় বছর আগে এই জার্মান তারকা যখন রিয়াল মাদ্রিদে পাড়ি জমান তখন তার মা গুলিজার ওজিল চিঠিটি নিজ হাতে দেয়ালে ঝুলিয়ে রেখেছিলেন।

চিঠিতে লেখা, ‘মেসুত, ভুলে যেও না, বাকি সবার মতো তুমিও এই পৃথিবীতে একজন অতিথি। সৃষ্টিকর্তা তোমাকে কিছু প্রতিভা দিয়ে পাঠিয়েছেন কিন্তু এটা শুধু তোমার নিজের দেখভাল করার জন্য নয়।

সৃষ্টিকর্তা তোমাকে যে সম্পদ দিয়েছেন তুমি যদি তার একটা অংশ অভাবীদের মাঝে বিলিয়ে না দাও তাহলে তুমি আমার সন্তান নও। ’

কেন সপ্তাহে সাড়ে ৩ লাখ পাউন্ড আয় করা ওজিল বিশ্বের অভাবী, অসুস্থ এবং গৃহহীনদের জন্য নিজের অর্থ-সম্পদ দান করেন এই চিঠি তার সেরা ব্যাখ্যা। সম্প্রতি জার্মান সুপার এজেন্ট, আইনজীবী এবং শিক্ষক ড. এরকুত সগুত যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘সানস্পোর্ট’র সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বিশ্বের অন্যতম ধনী ফুটবলারের গোপন জীবনের একটা অধ্যায় উন্মুক্ত করেছেন।  

গত গ্রীষ্মে মিস তুর্কি এমাইন গুলসের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার দিনে বিশ্বের ১ হাজার দরিদ্র শিশুর কিডনির অপারেশনের দায়িত্ব নেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেন ‍ওজিল।  

ড. এরকুত বলেন, “গত বিশ্বকাপ চলাকালীন, সে (ওজিল) আমাকে বলেছিল ‘আমি এটা বড় আকারে করতে চাই। চলো ১ হাজার শিশুর জীবন বদলে দিই, চলো ১ হাজার অপারেশন করাই’। আমি বললাম ‘এটা তো মিলিয়ন পাউন্ডের ব্যাপার’। কিন্তু সে উত্তরে বলল ‘এখন যদি আমি আমার অর্থ-সম্পদ দান না করি তাহলে কবে করব? আর কার সঙ্গে করব?”

তার এজেন্ট আরও বলেন, “মেসুত খুব দরিদ্র পরিবার থেকে এসেছে। তার মা দিনে দু’বার পরিচ্ছনতার কাজ করতেন। সে (ওজিল) জানে কিছু না থাকার যন্ত্রণা কতটা। সে আমাকে বলল, ‘দেখ এরকুত, আমার আয় অনেক বেশি। আমি সবটা নিজের পেছনে ব্যয় করতে পারব না। ফলে আমি অনেক বেশি দান করতে পারি’। ”

বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার দিনে ওজিল আরও একটি বড় সিদ্ধান্ত নেন। আর তা হলো, তুরস্ক ও সিরিয়ার ১৬টি শরণার্থী শিবিরের ১ লাখ মানুষকে খাওয়ানোর দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিতে চান। ৩১ বছর বয়সী ওজিল শুধু সিদ্ধান্ত নিয়েই বসে থাকেননি, খাদ্য বিতরণের জন্য পুরো অর্থ তিনি এরকুতের হাতে তুলে দেন। পরে এরকুতের আয়োজনে এই খাদ্য বিতরণ করে রেড ক্রস।

৩৯ বছর বয়সী এরকুত বলেন, “মেসুত সেদিন আমাকে বলেছিল, ‘এটা বিশ্বের জন্য আমার বিয়ের উপহার। ’ এই আয়োজনের পেছনে ওজিলের অনেক অর্থ খরচ হলেও ওজিল এটা করতে পেরে খুব খুশি হয়েছিল। ”

জার্মানির হয়ে ২০১৪ বিশ্বকাপ জেতার পর পুরস্কার হিসেবে পাওয়া ২ লাখ ৪০ হাজার পাউন্ডের পুরোটাই আয়োজক দেশ ব্রাজিলের ২৩ জন শিশুর অপারেশনের জন্য খরচ করেন ওজিল। এছাড়া নিজের পূর্বপুরুষদের দেশ তুরস্কে প্রায়ই দরিদ্রদের মাঝে অর্থ-সম্পদ দান করতে দেখা যায় তাকে। তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারার কয়েকজন ক্ষুধার্ত শিশু তাদের অভাব দূর করার জন্য ওজিলকে ‘থ্যাঙ্ক ইউ’ ম্যাসেজ পাঠিয়েছিল।

গত মাসে তুরস্কের ডেভরেকে অবস্থিত ওজিলের পিতৃভূমিতে শহরের উদীয়মান ফুটবলারদের জন্য পাঁচতলা বিশিষ্ট একটি ফুটবল একাডেমি নির্মাণ করেছেন। এছাড়া শিশুদের নিয়ে কাজ করে এমন একাধিক চ্যারিটির সঙ্গেও যুক্ত ওজিল। শুধু কি তাই, আর্সেনালের ঘরের মাঠ ‘এমিরেটস স্টেডিয়াম’র বক্সে অবস্থিত ১৫টি সিটের মধ্যে ৫টিই চ্যারিটির জন্য নির্ধারিত থাকে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৯
এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।