চীন সরকারের বিরুদ্ধে জিনজিয়াং প্রদেশের মুসলিমদের ওপর দমন-পীড়ন চালানোর অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি বন্দিশিবিরে আটক ও নির্যাতনের বিষয়ে সরকারি একটি গোপন নথি ফাঁস হওয়ার পর সারা বিশ্বে নিন্দার ঝড় বয়ে যায়।
এ নিয়ে পশ্চিমা মিডিয়া অনেকদিন থেকেই সরব থাকলেও মুসলিম বিশ্ব অনেকটা নীরব ভূমিকা পালন করছে। এ নিয়েই ক্ষোভ প্রকাশ করে তুর্কি বংশোদ্ভুত মুসলিম ফুটবলার ওজিল টুইটারে লিখেছেন, ‘পূর্ব তুর্কিস্তান (শিনজিয়াং) মুসলিম উম্মাহর রক্তে রঞ্জিত হচ্ছে। অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো জনতাকে তাদের নিজ ধর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ’
ওজিল আরও লিখেছেন, ‘তারা (চীন সরকার) কোরআন পুড়িয়ে দিচ্ছে। তারা মুসলিমদের মসজিদ বন্ধ করে দিচ্ছে। তারা স্কুল বন্ধ করে দিচ্ছে। তারা মুসলিমদের ধর্মীয় নেতাদের মেরে ফেলছে। পুরুষদের জোর করে বন্দি শিবিরে আটকে রাখা হচ্ছে আর নারীদের চীনা পুরুষদের সঙ্গে থাকতে বাধ্য করা হচ্ছে। নারীদের জোর করে চীনা পুরুষদের বিয়ে করতে বাধ্য করা হচ্ছে। ’
‘কিন্তু মুসলিম বিশ্ব নীরব। তারা একটা কথাও বলছে না। তারা তাদের (উইগুরদের) ত্যাগ করেছে। তারা কি জানে না যে, অন্যায় করা আর অন্যায় সহ্য করা সমান কথা?’
ওজিলের বিতর্কিত টুইটের কারণে রোববার (১৫ ডিসেম্বর) রাতে আর্সেনাল বনাম ম্যানচেস্টার সিটির মধ্যকার প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ না দেখানোর সিদ্ধান্ত নেয় চীনের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত টেলিভিশন চ্যানেল ‘সিসিটিভি’। আর এবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, গুজবে কান দিয়ে উইগুরদের বিষয়ে ভুল পথে হাঁটছেন ওজিল।
চীনের ‘দ্য গ্লোবাল টাইমস’র ওজিলের মন্তব্যকে ‘মিথ্যা’ বলে বর্ণনা করেছে। এবং তার এই মন্তব্যের কারণে চীনে আর্সেনালের সমর্থক ও ফুটবল কর্তাদের হতাশ করেছে বলে দাবি করেছে। শুধু তাই না, ‘দ্য চাইনিজ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন’ ওজিলের টুইটকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে মন্তব্য করেছে।
সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জেং শুয়াং ওজিলের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘পূর্ব তুর্কিস্তান নামে কোনো দেশের অস্তিত্বই নেই। আমি জানি না সে (ওজিল) কখনো জিনজিয়াং প্রদেশে ভ্রমণ করেছে কি না, কিন্তু আমি এটা বলতে পারি যে সে গুজবে কান দিয়ে ভুল পথে পরিচালিত হয়েছে। ’
জেং শুয়াং এমনকি ওজিলকে জিনজিয়াং প্রদেশ পরিদর্শনের আহবানও জানিয়েছেন।
চীনের অনলাইনভিত্তিক ক্রীড়া বিষয়ক প্ল্যাটফর্ম ‘সিনা স্পোর্টস’ এক ভিডিও বার্তায় জানিয়েছে, ‘শুধুমাত্র জনপ্রিয় ক্রীড়াবিদ হয়েছেন বলেই অন্য দেশের জাতীয় ইস্যুতে মন্তব্য করতে পারেন না এবং এর ব্যাখ্যা তাকে দিতে হবে। ’
এদিকে ওজিলের মন্তব্যের জেরে বিতর্ক দেখা দেওয়ার পর এ নিয়ে নিজেদের অবস্থান করতে এক টুইটে আর্সেনাল এক বিবৃতিতে লিখেছে, ‘সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে মেসুত ওজিল যে মন্তব্য করেছে, তা তার একান্তই নিজস্ব। ফুটবল ক্লাব হিসেবে আর্সেনাল কখনোই কোনো রাজনৈতিক বিষয়ের সঙ্গে নিজেকে না জড়ানোর নীতিতে অটল। ’
ওজিলের পাশে না দাঁড়ানোয় এরইমধ্যে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছে আর্সেনাল। কিন্তু পশ্চিমা দেশের ক্লাব হয়েও কেন এমনটা করলো আর্সেনাল, তারও ব্যাখ্যা আছে। মূলত ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের বিশাল এক বাজার এখন চীন। তিন বছরের জন্য মিডিয়া স্বত্ব কিনে নিতে দেশটি ৫৬৪ মিলিয়ন পাউন্ড ব্যয় করেছে।
এছাড়া ওলভাহ্যাম্পটন ক্লাব পুরোপুরি চীনা মালিকানাধীন। আর ম্যানচেস্টার সিটির ১৩ শতাংশ শেয়ারের মালিকও চীনের একটি প্রতিষ্ঠান। প্রিমিয়ার লিগের প্রায় সব ক্লাবেই বিপুল পরিমাণ চীনা বিনিয়োগ আছে। ক্লাবগুলোর প্রাক-মৌসুম প্রস্তুতির একটা অংশ এ বছর সাংহাই এবং নানজিংয়ে আয়োজিত হয়েছে।
তবে এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ওজিলের পাশে দাঁড়িয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশলান। আর্সেনালের প্রতি ওজিলের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করার আহবান জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থাটি।
আরও পড়ুন- উইগুর মুসলিমদের সমর্থনে ওজিলের টুইটে চীনের ক্ষোভ
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৯
এমএইচএম