মঙ্গলবার (৩১ মার্চ) ইউরোপের প্রায় সব বড় বড় সংবাদমাধ্যমের প্রথম পাতায় স্থান করে নিয়েছেন মেসি। মূলত বোর্ডের সঙ্গে বেতন কাটা নিয়ে তার বিবৃতি দেওয়া এবং এরপর ক্লাবের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করার পর থেকেই মেসিকে নিয়ে জোর আলোচনা চলছে।
ফরাসি সংবাদমাধ্যমটির ফ্রন্ট পেজে মেসির একটি ফটোশপ করা ছবি ব্যবহার করা হয়েছে, যেখানে চে'র চেহারার সঙ্গে মেসির অনেকটাই মিল রাখা হয়েছে। ক্লাবের সিদ্ধান্তের বিপক্ষে দাঁড়ানোয় তাকে এই তুলনা করা হয়েছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, আর্জেন্টিনায় মেসির শহর রোজারিওতেই জন্ম হয়েছিল বিপ্লবী চে'র।
এর আগে ২০১১ সালে একবার নিজ শহরে জন্মগ্রহণকারী বিপ্লবী চে'র ব্যাপারে নিজের আগ্রহের কথাও প্রকাশ করেছিলেন মেসি। বিশেষ করে টি-শার্টের গায়ে চে আর দিয়েগো ম্যারাডোনার পাশাপাশি তার নিজের ছবি দেখে কতটা রোমাঞ্চিত হয়েছিলেন সেটাও জানিয়েছিলেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চে আর ম্যারাডোনার পাশাপাশি অসংখ্য টি-শার্টে যে তার নিজের ছবিও ব্যবহার করা হয় এটা ভেবে বেশ উত্তেজিত অনুভব করতেন মেসি।
শুধু তাই নয়, করোনা ভাইরাসের কারণে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বার্সাকে রক্ষা করতে নিজেদের বেতনের ৭০ শতাংশ কেটে রাখার ব্যাপারে পুরো দলকে বুঝিয়ে রাজি করিয়েছেন মেসিই। আর এজন্য স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম 'মার্কা'র প্রথম পাতায় জায়গা করে নিয়েছেন তিনি, যেখানে ব্যবহার করা ছবিতে তার জার্সি নাম্বারের জায়গায় ৭০% লেখা হয়েছে। ওই সংবাদের হেডলাইনে লেখা: বার্সেলোনা মেসির ধৈর্যচ্যুতি ঘটাচ্ছে।
আরেক স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম 'এসএস' কভার ফটো হিসেবে পুরো বার্সা স্কোয়াডকে তুলে ধরেছে। হেডলাইনে লেখা 'তারা বলছে যথেষ্ট হয়েছে'। সোমবার প্রকাশিত বিবৃতির দিকেই ইঙ্গিত করেছে তারা, যেখানে ক্লাবের প্রতি খেলোয়াড়দের স্পষ্ট ক্ষোভ ঝরে পড়েছে। মূলত বেতন কাটার ব্যাপারে শুরুতে খেলোয়াড়রা রাজি ছিলেন না বলে যে গুঞ্জন ছড়ানো হয়েছিল তা নিয়েই ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল।
কাতালান দৈনিক 'স্পোর্ত' তাদের ফ্রন্ট পেজে মেসির ছবি দিয়ে শুধু 'ধন্যবাদ' লেখেছে। ওই দৈনিক অবশ্য মুন্দো দেপোর্তিভোকে দেওয়া হোসে মারিয়া বার্তমেউ'র একটি সাক্ষাৎকারও ছেপেছে, যেখানে বার্সা প্রেসিডেন্ট স্বীকার করেছেন যে, শুরু থেকেই বেতন কাটার ব্যাপারে ইতিবাচক ছিলেন মেসি। তিনি বরং যেসব সমালোচনা হয়েছে তার জন্য বাইরের লোকজনকে দায়ী করেছেন।
কিন্তু মেসি ইনস্টাগ্রাম পোস্টে এক বিবৃতি প্রকাশ করে জানান যে, ক্লাবের সব খেলোয়াড় করোনার কারণে লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকেই বেতনের ৭০ শতাংশ কেটে নেওয়ার ব্যাপারে রাজি। মূলত ক্লাবের কর্মীরা যাতে শতভাগ বেতন নিয়ে ঘরে ফিরতে পারেন সেকথা চিন্তা করেই তারা ক্লাবের সঙ্গে সমঝোতা করেছেন। কিন্তু তার ক্ষোভ এখানেই যে, ক্লাব খেলোয়াড়দের অযথা বেতন কেটে নেওয়ার ব্যাপারে চাপ দিচ্ছিল। আর এ নিয়ে মিথ্যা প্রচারণাও চালিয়ে যাচ্ছিল।
ক্লাবের আচরণের সমালোচনা বার্সা অধিনায়ক ইনস্টাগ্রাম পোস্টে লেখেন, 'আমরা একটুও অবাক হইনি, যখন আমাদেরকে সবার সন্দেহের দৃষ্টিতে ফেলল ক্লাব এবং আমাদের এমন কিছু করতে বাধ্য করল যা আমরা এমনিতেই করতাম। আমরা বরং ইচ্ছা করেই সিদ্ধান্ত কিছুদিন পিছিয়েছি। কারণ আমরা এই কঠিন সময়ে ক্লাব ও কর্মীদের সবার যেন উপকার হয় এমন একটি পদ্ধতি বের করতে চেয়েছিলাম। এতদিন এ নিয়ে কথা বলিনি কারণ আমাদের মনে হয়েছে, ক্লাবকে সাহায্য করার সবচেয়ে বাস্তব উপায় খুঁজে বের করা এবং যাদের বেশি দরকার তাদের সাহায্য পাওয়া নিশ্চিত করাটা বেশি জরুরি। '
তবে এবারই প্রথম নয়, এর আগেও ক্লাবের আরও অনেক বিষয়েই মুখ খুলেছেন মেসি। যেমন, খেলোয়াড়দের নিয়ে ক্লাবের ক্রীড়া পরিচালক এরিক আবিদালের নেতিবাচক বক্তব্য, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সিনিয়র খেলোয়াড়দের নিয়ে গুজব ছড়ানোর অভিযোগ এমনকি নেইমারের ট্রান্সফার ইস্যুতে বার্সার ভূমিকা নিয়েও মুখ খুলেছেন মেসি। আর্জেন্টাইন জাদুকরকে তাই 'বিপ্লবী' বলাই যায়।
বাংলাদেশ সময়: ২০১০ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০২০
এমএইচএম/এমএমএস