সদ্যই বার্সেলোনা ছেড়ে অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদে নাম লেখিয়েছেন লুইস সুয়ারেস। তবে তার আগে ক্লাবের ইতিহাসের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় বলার ব্যবস্থা করেছিল বার্সেলোনা।
আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় বলার আগে ক্যাম্প ন্যুয়ে বার্সার হয়ে জেতা সব শিরোপা নিয়ে ছবি তোলেন সুয়ারেস। এরপর ধূসর স্যুট পরে ক্লাব কর্তৃক আয়োজিত বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন তিনি। সেখানে উরুগুইয়ান ফুটবল তারকার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন তার সহধর্মিণী সোফিয়া এবং সন্তান।
প্রিয় ক্লাবকে হয়তো হাসিমুখেই বিদায় বলতে চেয়েছিলেন সুয়ারেস। কিন্তু ৬ বছরের বন্ধন ছিন্ন হওয়ার কষ্টে এক মিনিটেরও কম সময়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন বার্সার ইতিহাসের তৃতীয় সর্বোচ্চ গোল স্কোরার।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে কান্নাজড়িত কণ্ঠে সুয়ারেস বলেন, ‘এটা (বিদায় বলাটা) খুব কঠিন আমার জন্য। পুরো ব্যাপারটাই অনাকাঙ্ক্ষিত, আমি কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই এসেছি। আমি শুধু আমাকে দলে ভেড়ানোয় ক্লাবকে (বার্সা) ধন্যবাদ জানাতে পারি। ’
৩৩ বছর বয়সী স্ট্রাইকার বলেন, ‘তারা (বার্সা) আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছে। এটা মোটেই সহজ কিছু নয়। কোচ, আমার সতীর্থ সবাই আমার সঙ্গে দারুণ আচরণ করেছেন। আমি সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকব। সবাই জানে স্বপ্ন পূরণের জন্য কত চেষ্টা করেছি। আমি সবসময় বলে এসেছি, এটাই বিশ্বের সেরা ক্লাব। ’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি জানি একটা পর্ব শেষ হচ্ছে। অনেক বছর হলো এবং আমি অনেক বন্ধুত্ব সঙ্গী করে যাচ্ছি। ক্লাবের সবাইকে বিদায় বলতে পারছি এবং সবার সামনে দিয়ে চলে যাচ্ছি, এটা আমাকে আনন্দ দিচ্ছে। কিন্তু মানুষ হিসেবে আবেগও ভর করছে। ’
‘আমার পরিবার জানে আমি কীসের ভেতর দিয়ে গেছি। আমার সন্তান আমাকে শিরোপা হাতে এবং গোল করতে দেখেছে। তারা দেখেছে আমি ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড়ের পাশে খেলেছি। এসব স্মৃতি হয়ে থাকবে। সমর্থকদের ধন্যবাদ জানাতেই হবে,’ যোগ করেন তিনি।
ছয় বছর আগে লিভারপুল ছেড়ে বার্সায় নাম লেখানোর পর যা কিছু অর্জন করেছেন তা নিয়ে সন্তুষ্ট সুয়ারেস, ‘এখানে (বার্সায়) আসা আমার জন্য স্বপ্ন পূরণের মতো ব্যাপার। আমি এতগুলো গোল করতে পারব কখনো ভাবিনি। ধারাবাহিক না হলে এটা সম্ভব নয়। আমি এই ছয়টি বছর নিয়ে গর্ব এবং সন্তুষ্টি নিয়েই যাচ্ছি। ’
অ্যাতলেটিকোয় গিয়ে নতুন কি অর্জন করতে চান এমন প্রশ্নের জবাবে সুয়ারেস বলেন, ‘আমি এখনও নিজেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার যোগ্য বলে মনে করি, এমনকি গত বছরের চেয়েও বেশি। আমি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে যাব এবং আমার যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে যাব। ’
কোচ কোম্যানের সিদ্ধান্তে ক্যাম্প ন্যু ছাড়তে হলেও তা নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই সুয়ারেসের, ‘অনেক সময় ক্লাবে পরিবর্তন দরকার হয় এবং কোচ আমাকে পরিকল্পনায় রাখেননি। বিদায়বেলায় আমার মনে হয় আমি সফল এবং ক্লাবের ইতিহাসের তৃতীয় সেরা গোলদাতা হওয়া সহজ কথা নয়। ’
কোম্যানের সিদ্ধান্ত নিয়ে সুয়ারেস বলেন , ‘আমি জানতাম এমন কিছু হবে। এমনকি তিনি বলার আগেই। এক পা পেছনে যেতে আমার আপত্তি ছিল না। কিন্তু আমি অনুশীলন চালিয়ে যেতে চেয়েছিলাম, তবে সমাধান হোক সেটাও চেয়েছিলাম। কোম্যান তাতে একমত হয়েছিলেন। ’
এত ক্লাব থাকতে অ্যাতলেটিকোকে বেছে নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে সুয়ারেস বলেন, ‘এটা শুনতে অদ্ভুত লাগলেও… বার্সা যখন আমাকে বেচে দিতে চাইলো, অনেক ক্লাব থেকে ডাক পেয়েছি। কিন্তু আমি আমি এমন ক্লাবে যেতে চেয়েছিলাম যারা বার্সা এবং রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে লড়াই করতে সক্ষম। আমি এমন ক্লাবে যাচ্ছি যারা খুবই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দল এবং যারা শেষ পর্যন্ত শিরোপার লড়াইয়ে টিকে থাকে। সেই দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে এবং সাফল্য পাইয়ে দিতে সহায়তা করাই আমার লক্ষ্য। ’
সুয়ারেস ও মেসির বন্ধুত্বের কথা সবারই জানা। আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড যে তাকে নতুন ঠিকানা খুঁজতে পরামর্শ দিয়েছিলেন সেটাও স্বীকার করলেন তিনি, ‘আমরা একে অন্যকে ভালোভাবে জানি। সে জানে আমি কী ভাবছি এবং একে অন্যকে পরামর্শ দেওয়ার মতো আমাদের যথেষ্ট বয়স হয়েছে। যখন ক্লাব জানিয়ে দিল যে আমাকে আর তাদের দরকার নেই, তখন সেটা মেনে নিতে বলেছিল মেসিই। ’
এতদিন একই দলে খেললেও আগামীতে একে অন্যের বিপক্ষে খেলতে নামবেন মেসি ও সুয়ারেস। কিন্তু এ নিয়ে মোটেই ভাবতে রাজি নন উরুগুইয়ান তারকা, ‘ভবিষ্যতে কি হবে সেড়া তখনই দেখা যাবে। কিন্তু আমি এর আগেও তার বিপক্ষে আর্জেন্টিনা ম্যাচে খেলেছি। তার বিপক্ষে খেলা আমাদের বন্ধুত্বে কোনো প্রভাব ফেলবে না। ’
যাওয়ার আগে ক্লাবের প্রতি কোনো অভিযোগ না অনুযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে সুয়ারেস বলেন, ‘আজ আমার বিদায়ের দিন। কারো প্রতি আমার কোনো অভিযোগ বা রাগ নেই। আমি বার্সায় যেমন গ্রেট খেলোয়াড় ছিলাম সেভাবেই মাথা উঁচু করে বিদায় নিচ্ছি। ’
বাংলাদেশ সময়: ২১২৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২০
এমএইচএম