বার্সেলোনার নতুন কোচ রোনাল্ড কোম্যানের অধীনে মাঠে নতুন ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে লিওনেল মেসিকে। আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডকে ‘ফলস নাইন’ হিসেবে খেলাচ্ছেন ডাচ কোচ।
এদিকে লিওনেল স্কালোনি অবশ্য কোম্যানের সঙ্গে একমত নন। আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের কোচ মেসিকে এই পজিশনে খেলাতে রাজি নন। তিনি বরং মেসিকে আদর্শ ১০ নম্বরেই রাখতে চান।
লুইস সুয়ারেস অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদে পাড়ি জমানোয় বার্সায় এখন সত্যিকারের কোনো নম্বর নাইন নেই। তার বিকল্পও পাওয়া যায়নি। এদিকে উরুগুইয়ান স্ট্রাইকার না থাকায় রোববার রাতে ভিয়ারিয়ালের বিপক্ষে ৪-০ গোলে জেতা ম্যাচে ‘ফলস নাইন’ হিসেবে খেলেন মেসি। ম্যাচে পেনাল্টি থেকে একটি গোলও করেন তিনি।
কোম্যানের এই পদ্ধতি প্রয়োগে আগ্রহী নন স্কালোনি। আর্জেন্টাইন সংবাদমাধ্যম ‘লিবেরো’কে তিনি বলেন, ‘আমাদের পদ্ধতি হলো দলের কাছে বল থাকলে মেসির সামনে সবসময় একজন থাকবে। ২০১৯ কোপা আমেরিকায় এই পদ্ধতি কাজে লেগেছিল। তার সামনে একজন দরকার, যাতে সে অ্যাসিস্ট করতে পারে এবং গভীরে যেতে পারে। ’
অক্টোবরে ইকুয়েডর ও বলিভিয়ার বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের দুই ম্যাচে আর্জেন্টিনা দলে ডাক পেয়েছেন মেসি। পরবর্তীতে ক্লাব থেকে ছাড়পত্র পেলে তাকে আরও বেশি ম্যাচে খেলাতে চান স্কালোনি।
ফলস নাইন কী
‘ফলস’ মানে মিথ্যা কিংবা ধোঁকা। আর নয় নম্বর মানে দলের মূল স্ট্রাইকারকে বোঝায়। স্ট্রাইকারের কাজ প্রতিপক্ষের পেনাল্টি বক্সে, যাকে বলে সতেরো নম্বর জোন।
ফুটবল মাঠকে উল্লম্বভাবে তিন এবং অনুভূমিকভাবে ছয় ভাগে অর্থাৎ সবমিলিয়ে আঠারো ভাগে ভাগ করা হয়। মোট আঠারো জোনের মধ্যে এই জোনের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জোন ধরা হয় জোন নম্বর ১৪। এখানেই খেলেন দলের প্লে-মেকাররা। অর্থাৎ দলের নাম্বার টেন কিংবা অ্যাটাকিং মিডফিল্ডাররা এখান থেকেই স্ট্রাইকারকে পাস দেন।
স্ট্রাইকারদের কাজ তো জানাই আছে। এখন জানা যাক, ফলস নাইনের কাজ কী? স্ট্রাইকাররা মাঝে মাঝে নিচে এসে খেললেও তারা কখনোই মূল প্লেমেকারের ভূমিকায় থাকেন না। এই জায়গায়ই ফলস নাইন আর সাধারণ নাম্বার নাইনের পার্থক্য। ফলস নাইনে থাকা খেলোয়াড় শুরুতে থাকেন নাম্বার নাইনের পজিশনে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারা জোন সতেরো থেকে জোন চৌদ্দতে নেমে আসেন। অর্থাৎ স্ট্রাইকার থেকে তারা অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার কিংবা ফরোয়ার্ডের মতো কাজ করেন।
ফলস নাইনের সুবিধা হলো এতে প্রতিপক্ষকে বোকা বানানো যায়। একজন স্ট্রাইকার সাধারণত দুই সেন্টার-ব্যাকের মাঝখানে থাকেন। তাকে একজন কিংবা মাঝে মাঝে দুজনেই মার্ক করেন। কিন্তু অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারকে সাধারণত একজন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার মার্ক করে থাকেন। ফলে ফলস নাইন হিসেবে কেউ খেললে তাকে মার্ক করা প্রতিপক্ষের সেন্টার-ব্যাক কিংবা ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের পক্ষে কঠিন হয়ে যায়। কারণ তাকে মার্ক করতে আসলে পেছনে ফাঁকা জায়গা তৈরি হয়ে যায়। আবার ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার নিচে নেমে এসে ফলস নাইনকে মার্ক করতে গেলে মিডফিল্ড ফাঁকা হয়ে যায়। তাকে আটকাতে হলে দুজন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার খেলাতে হয়।
ফলস নাইন প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারদের বোকা বানিয়ে নিজে গোল করতে পারেন আবার কাউকে দিয়ে গোলও করাতে পারেন। এটাকে বলে ফ্রি রোল। দলের সেরা খেলোয়াড়রাই মূলত এই ভূমিকায় খেলেন। মেসিকে এই ভূমিকায় খেলিয়ে সফলতা পেয়েছিলেন সাবেক বার্সা কোচ পেপ গার্দিওলা। তারও আগে সেস ফ্যাব্রেসগাসকে এই পজিশনে খেলিয়ে সফল হন স্পেনের বিশ্বকাপজয়ী কোচ ভিসেন্তে দেল বস্ক। রোমার কিংবদন্তি ফ্রান্সেসকো টট্টিও আছেন এই তালিকায়। এমন উদাহরণ অবশ্য আরও অনেক আছে। তবে মেসিকেই আদর্শ ফলস নাইন ধরা হয়। এই পজিশনে খেলেই ২০১২ সালে রেকর্ড ৯১ গোল করেছিলেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২০
এমএইচএম/এমএমএস