ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফুটবল

ডিএনএ পরীক্ষার জন্য সংরক্ষণ করা হবে ম্যারাডোনার দেহ

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০২০
ডিএনএ পরীক্ষার জন্য সংরক্ষণ করা হবে ম্যারাডোনার দেহ ম্যারাডোনা এবং ম্যাগলি গিল/ছবি: সংগৃহীত

বিশ্ব ফুটবলকে কাঁদিয়ে গত ২৫ নভেম্বর পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন তর্কসাপেক্ষে সর্বকালের সেরা ফুটবলার দিয়েগো ম্যারাডোনা। কিন্তু মরেও যেন শান্তি নেই এই আর্জেন্টাইন কিংবদন্তির।

তার মরদেহ তোলা হতে পারে কবর থেকে। কারণ ডিএনএ পরীক্ষা।  

এমন কিছু ঘটতে যাচ্ছে তা আগেই ধারণা করা হচ্ছিল। কারণ মৃত্যুর আগে নিজের সম্পত্তির কোনো উত্তরাধিকারী ঠিক করে যাননি ম্যারাডোনা। আর কে না জানে, ম্যারাডোনার সন্তান-সন্ততির সংখ্যা নিয়ে বিতর্কের অন্ত নেই। সর্বশেষ তাতে যোগ হয়েছে আরও এক নাম। ২৫ বছর বয়সী ম্যাগলি গিল নামের এক নারী দাবি করেছেন, আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক তার বাবা! এ নিয়ে আদালতেও হাজির হয়েছেন তিনি।

ম্যাগলি গিলের দাবি, তার মা নাকি তাকে জানিয়েছেন ম্যারাডোনাই তার বাবা। যদিও ম্যাগলি নিজে নিশ্চিত নন। এজন্যই আদালতে ম্যারাডোনার ডিএনএ পরীক্ষা করানোর দাবি তুলেছেন তিনি। আর্জেন্টিনার আদালতও তার দাবির যৌক্তিকতা প্রমাণ করতে ফুটবল রাজপুত্রের মরদেহ দাহ করার আগে ডিএনএ পরীক্ষার পক্ষে রায় দিয়েছেন।  

ম্যারাডোনার মৃত্যুর পর থেকেই তার সম্পত্তির ভাগ নিয়ে অনেকে বিভিন্ন দাবি তুলেছেন। সাবেক স্ত্রী ক্লদিয়ার ঘরে তার দুই মেয়ে দালমা ও জিয়ানিনার কথা সবাই জানে। এছাড়া মৃত্যুর অনেক আগেই আরও এক মেয়ে জানা, দুই ছেলে দিয়েগো ফার্নান্দো এবং দিয়েগো সিনাগ্রার কথাও স্বীকার করে গেছেন তিনি। কয়েক বছর আগে কিউবায় তার চার সন্তানের থাকার কথাও প্রকাশ্যে আসে। এখন আবার ম্যাগলি নামের ওই নারী দাবি করে বসলেন।  

সবকিছু দেখেশুনে ম্যারাডোনার আইনজীবী অবশ্য বলছেন, ম্যারাডোনার মৃত্যুর পর কিছু ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছি। এগুলো পরীক্ষা করলেই  পিতৃত্বের দাবি প্রমাণ করা যাবে। ফলে কবর থেকে দেহ তোলার দরকার নেই। তবে তার এই যুক্তি কতটা ধোপে টিকবে তা নিশ্চিত নয়। তবে তিনি এও জানিয়েছেন, ম্যারাডোনার সম্পত্তির উত্তরাধিকারী নির্বাচন খুব জটিল ব্যাপার হতে যাচ্ছে। কারণ নাপোলির সাবেক আর্জেন্টাইন অধিনায়ক উইল করে যাননি। 'ম্যারাডোনা' ব্র্যান্ড নিয়ন্ত্রণ করেন তার আইনজীবী মাতিয়াস মোরলা, অন্তত যুক্তরাষ্ট্র এবং আর্জেন্টিনায়। ফলে তার আইনজীবীও অন্যতম উত্তরাধিকারী।

ম্যারাডোনার মৃত্যুর পর তাঁর আইনজীবী জানিয়েছিলেন, জীবনের শেষ দিনগুলো ১৯৮৬ বিশ্বকাপজয়ী তারকা খুবই নিঃসঙ্গ অবস্থায় কাটিয়েছেন। মৃত্যুর আগের রাতেও তাঁর পাশে পরিবারের কোনও লোককে দেখা যায়নি। কিন্তু তার মৃত্যুর পর সম্পত্তির ভাগীদার হতে একাধিক ব্যক্তি হাজির। মৃত্যুর কিছু দিন আগে, মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচারের পর পরিবারের সদস্যদের এক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন ম্যারাডোনা। কিন্তু তার মৃত্যুর পর বিষয়টা বদলে গেছে।

ম্যারাডোনার মোট সম্পত্তি নেহায়েত কম নয়। কিন্তু ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নগদ অর্থ ছিল বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮৫ লাখ টাকার মতো। তার মতো ফুটবল ব্যক্তিত্বের কাছে এই টাকা তেমন আহামরি কিছুই নয়। তবে নগদ অর্থ কম হলেও মোট সম্পদ আছে অনেক। এর মধ্যে চীনে রয়েছে তাঁর ফুটবল স্কুল, বুয়েনস আইরেসের অভিজাত অঞ্চলে বিশাল বাড়ি।

বেশ কিছু অ্যাপার্টমেন্ট, বিএমডব্লিউ, অডি, রোলস রয়েসের মতো বিলাসবহুল ৬টি গাড়ির মালিক ছিলেন ম্যারাডোনা। এছাড়া ইতালি ও কিউবায়ও তার কিছু বিনিয়োগ রয়েছে। উপহার হিসেবে পেয়েছেন বিপুল পরিমাণ পদক ও অলংকার। খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে বিভিন্ন দেশে অনেক আয় করেছেন তিনি। ছিলেন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি উপার্জনকারী ফুটবলারও। কোকাকোলা, পিউমাসহ বড় বড় ব্র্যান্ডের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে কামিয়েছিলেন কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ।  

সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে ফুজাইরা ক্লানের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করার সময় দুটি বিলাসবহুল গাড়ি এবং বেলারুশের ক্লাব ডায়নামো ব্রেস্টের চেয়ারম্যান হিসেবে একটি উভচর ট্যাংক (পানিতে চলতে সক্ষম) উপহার পেয়েছিলেন তিনি। এছাড়া তার ছবি স্বত্ব ও জার্সি, পদকগুলোকে মূল্যবান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ক্যারিয়ারে তার মোট আয় ছিল ৫০০ মিলিয়ন ইউরোর কাছাকাছি। কিন্তু এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মতো।  

ক্যারিয়ারে এত আয় সত্ত্বেও শেষদিকে ম্যারাডোনার কাছে নগদ অর্থ কম কেন? কারণ হিসেবে তাকে অনেকে ঠকিয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তার আইনজীবী আনহেলো পিসানি জানিয়েছেন, উদারতার সুযোগ নিয়ে ম্যারাডোনাকে অনেকে বিপথে চালিত করেছেন। তার অর্থ তাকে না জানিয়ে সরিয়ে নিয়েছেন কেউ কেউ। এছাড়া মাদক, নারী আর বিলাসী জীবনে ডুবে থাকার কারণে বহু অর্থ নষ্ট করেছেন তিনি নিজেই। তার বিরুদ্ধে কর ফাঁকির অভিযোগে মামলাও হয়েছিল।

'সেলিব্রিটি নেট ওর্থ' -এর দাবি অনুযায়ী, ম্যারাডোনার একজন উত্তরাধিকারী পাবেন প্রায় ৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এটি ম্যারাডোনার সব সম্পদ, ছবি, জার্সি ও পদকের সম্মিলিত মূল্য হিসাব করে দেখানো হয়েছে। তবে পরিমাণ কমবেশি হতে পারে। এ ব্যাপারে ম্যারাডোনার মৃত্যুর সংবাদ সবার আগে প্রকাশ করা কিংবদন্তি সাংবাদিক হুলিও চিয়াপেত্তা বলেন, 'কোনো সন্দেহ নেই, এটা ম্যারাডোনাকে ঘিরে নতুন এক নাটক হতে যাচ্ছে। '

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০২০
এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।