সামনে ব্যস্ত সূচি অপেক্ষা করছে বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের জন্য। আগামী ২৩ এবং ২৬ জুন সিলেটে মালয়েশিয়ার বিপক্ষে ফিফা টায়ার-১ ফ্রেন্ডলি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ।
নিজেদের প্রস্তুত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন জাতীয় নারী দলের ফুটবলাররা। ক্যাম্পে পুরোদমে অনুশীলন চলছে তাদের। নিজেদের প্রস্তুতি এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোরকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক এবং বসুন্ধরা কিংস নারী দলের ফরোয়ার্ড সাবিনা খাতুন।
বাংলানিউজ: সামনে ফিফা ফ্রেন্ডলি ম্যাচ রয়েছে; এরপর সাফ। প্রস্তুতি কেমন হচ্ছে?
সাবিনা: আমাদের সামনের মাসে দুটি ফিফা টায়ার-১ ফ্রেন্ডলি ম্যাচ আছে। এরপর আগস্ট-সেপ্টেম্বরে সাফ গেমসের খেলা রয়েছে। আমরা এখন এই দুই ম্যাচকে সামনে রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছি। ম্যাচগুলকে সাফের প্র্রস্তুতি ম্যাচ হিসেবে নিয়েছি আমরা। প্রস্তুতি আলহামদুলিল্লাহ ভালো। কারণ এখন লংটার্ম ক্যাম্প করছি আমরা। সবাই একসঙ্গে অনেক দিন থেকেই অনুশীলন করছি। এটা অনেক ইতিবাচক একটা দিক। এতে খেলোয়াড়দের দলগত পারফরম্যান্সের অনেক উন্নতি হয়।
বাংলানিউজ: সবশেষ কোন টুর্নামেন্টে আপনারা অংশ নিলেন এবং এটার ফলাফল?
উত্তর: আমরা এশিয়ান কোয়ালিফারে খেলেছি। এটা আমরা উজবেকিস্তানে খেলেছিলাম। ইরান এবং জর্ডানের বিপক্ষে আমাদের খেলা ছিল। যেখানে আমরা দুটো ম্যাচেই ৫ গোলে হেরেছিলাম। এর আগে আমরা নেপালের বিপক্ষে দুটো ফ্রেন্ডলি ম্যাচ খেলেছিলম। একটা ড্র হয়েছিল। একটা আমরা হেরেছিলাম।
বাংলানিউজ: করোনার কারণে দীর্ঘ সময় খেলায় বিরতি ছিল। ২০২০ এর পর এখন করোনার প্রকোপ কম। এই দুই আড়াই বছরে আপনাদের কি কি কার্যক্রম হলো?
সাবিনা: করোনার সময় তো কোনো খেলাই হয়নি। করোনা পরবর্তী সময়েও তেমন খেলা হয়নি। করোনার পর গত বছর আমরা খেলার পর এ বছর আমরা সাফ পচ্ছি। তার আগে মালয়েশিয়ার বিপক্ষে তো দুটো টায়ার-১ ম্যাচ খেলছি।
বাংলানিউজ: আপনি তো দীর্ঘদিন থেকেই জাতীয় দলে খেলছেন। দলের অন্যতম ফিট খেলোয়াড় আপনি। করোনার পর দলের বাকিদের ফিটনেস নিয়ে কি মনে করছেন?
সাবিনা: করোনার পরে তো আমাদের বয়সভিত্তিক কিছু খেলা হয়েছে। নেপালে সঙ্গে আমাদের যে পারফরম্যান্স ছিল, তা আগের চাইতে অনেক ভালো ছিল। আমার মনে হয়যে ফিটনেসের দিক থেকে আমাদের মেয়েদের কোনও সমস্যা নেই। বড় বড় দলগুলোর বিপক্ষে আমরা অভিজ্ঞতার দিক থেকে কিছুটা পিছিয়ে থাকি। এছাড়া ফিটনেসের দিক থেকে আমাদের কোনও সমস্যা নাই।
বাংলানিউজ: আপনি বিভিন্ন লিগে খেলেছেন। শেষ কোন ফ্রাঞ্চাইজিভিত্তিক লিগে খেলেছেন?
সাবিনা: গত বছর আমি মালদ্বীপের ফ্রাঞ্চাইজি লিগে খেলেছি, ফুটসাল টুর্নামেন্টে।
বাংলানিউজ: দেশের বাইরের টুর্নামেন্টেও আপনি টপ স্কোরার হন। মালদ্বীপেও নিশ্চয়ই এর ব্যাতিক্রম হয়নি।
সাবিনা: গতবছরও আমি মালদ্বীপে টপ স্কোরার হয়েছিলাম। আসরে ২১ গোল করেছিলাম।
বাংলানিউজ: দেশের বাইরে এটা কিভাবে সম্ভব হয়? ওখানে তো নতুন খেলোয়াড়দের সঙ্গে খেলতে হয়। তাদের সঙ্গে কম্বিনেশনটা কিভাবে হয়?
সাবিনা: এটা আসলে বলতে পারেন ঈশ্বর প্রদত্ত। আমি যে টিমে থাকি তাদের সঙ্গে আমি দ্রুতই মানিয়ে নিতে পারি। টিম বন্ডিং ছাড়া আপনি যত ভালো খেলোয়াড়ই হন সফল হতে পারবেন না। আমি যেখানেই যাই আমি চেষ্টা করি দলের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে।
বাংলানিউজ: আপনার ফুটবলার হিসেবে উঠে আসার গল্পটা যদি বলতেন..
সাবিনা: বাংলাদেশে তো ফুটবলার হিসেবে উঠে আসা অনেক কঠিন। আমি যখন খেলা শুরু করেছিলাম আমার বয়স ছিল ১৩-১৪ বছর। বাচ্চাদের আসলে খেলার বয়সই থাকে ঐটা। আমার যে কোচ ছিলেন আকবর স্যার, তার অনেক অবদান আছে। সাতক্ষীরাতে তিনি আমার কোচ ছিলেন। আমার উঠে আসার পেছনে ওনার অবদান সবথেকে বেশি। তারপর আমার পরিবার। ২০০৯ সালে প্রথম আমি জাতীয় দলে সুযোগ পাই। সাউথ এশিয়ান গেমসে আমার জাতীয় দলে অভিষেক হয়। এরপর ২০১৬ সালেই জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব পাই। এখনো এভাবেই চলছে।
বাংলানিউজ: আপনি অনেক দিন থেকেই ফুটবলে টিকে আছেন। আপনার সঙ্গে খেলেছেন এমন অনেকে ফুটবল খেলা ছেড়ে দিয়েছেন। আপনার টিকে থাকাটা কিভাবে হলো?
সাবিনা: আমার প্যাশন থেকেই আমি এখনো টিকে আছি। আর আমার মনে হয়েছে আমার গোলের রেকর্ডটা আরও একটু ভারী করা প্রয়োজন। এজন্যই আমি এখনো এখানে রয়েছি। নিজের পরিচয় তৈরি করতেই আমি খেলা চালিয়ে যাচ্ছি। আর দিন দিন যখন খেলার উন্নতি হচ্ছিল, তখন আমার মনে হয়েছে এখানে আরও ফোকাস করা প্রয়োজন।
বাংলানিউজ: পার্বত্য অঞ্চলের মেয়েরা ফিজিক্যালি ফিট অন্যদের তুলনায়। তাদের সঙ্গে লড়াই করে কিভাবে টিকে রইলেন?
সাবিনা: বাই বর্ন ওরা ফিজিক্যালি ফিট। গ্রোথটা ওদের ভালো হয়। আমি আসলে ফুটবলটাকে ভালোবাসতাম। ওরাও ভালোবাসে। ওরা যখন দেখে অনেক পরিশ্রম করছে কিন্ত আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারছে না, তখন হয়তো ভেবেছে ফুটবলের পেছনে সময় ব্যয় করে লাভ নেই। আমি ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা থেকেই এখনো খেলে যাচ্ছি।
বাংলানিউজ: পরিবারের কাছ থেকে কেমন সমর্থন ছিল?
সাবিনা: উআমার পরিবার থেকে সবসময়ই সমর্থন পেয়েছি। মা-বোন-বাবা সকলেই সাপোর্ট দিতেন। বাবা দুই বছর আগে মারা গেছেন।
বাংলানিউজ: পরিবারে কে কে আছেন?
সাবিনা: পাঁচ বোন আর মা।
বাংলানিউজ: আপনার ফ্যামিলিতে আর কোনও খেলোয়াড় রয়েছেন?
সাবিনা: না আর কোনও খেলোয়াড় নেই।
বাংলানিউজ: ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার ভাবনা কি আপনার?
সাবিনা: আমার ইচ্ছা আছে খেলায়াড় হিসেবে অবসর নেয়ার পরও ফুটবলের সঙ্গেই থাকা। আপাতত আমি কোচিংয়ের ‘এ' ডিপ্লোমা করছি। বাংলাদেশে কোচিংয়ের জন্য সবচেয়ে বড় ডিপ্লোমা। মেয়েদের ক্ষেত্রে 'এ' ডিপ্লোমা হচ্ছে অনেক বড় কিছু। আমি চেষ্টা করছি কোচিং লাইসেন্সগুলো সব কমপ্লিট করার।
বাংলানিউজ: দেশের ফুটবলের ভবিষ্যৎ কেমন হতে পারে বলে মনে হচ্ছে?
সাবিনা: এখন যেভাবে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, এভাবে এগিয়ে যেতে থাকলে সেই দিন আর বেশি দূরে নাই যখন আমরা মেয়েদের বিশ্বকাপে খেলবো। গত চার-পাঁচ বছরের পারফরম্যান্স যদি দেখেন, আমরা আগের চাইতে অনেক বেশি উন্নতি করেছি।
বাংলানিউজ: মেয়েদের ফুটবলে আপনার আইডল কে?
সাবিনা: ব্রাজিলের মার্তার খেলা আমার ভালো লাগে।
বাংলানিউজ: প্রতিটি মেয়েরই তো খেলাধুলার বাইরে একটা স্বপ্ন থাকে। আপনি এই বিষয়ে কি বলতে চান?
সাবিনা: আমার ইচ্ছা আছে অবসরের আগে বাংলাদেশের ফুটবলকে ভালো অবস্থানে দেখার।
বাংলানিউজ: এছাড়া আর কোনও ব্যাক্তিগত স্বপ্ন নেই?
সাবিনা: আপতত নেই, তবে পরে দেখা যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৭ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০২২
এআর/এমএইচএম