বিশ্বকাপের খেলা দেখতে স্পেন থেকে হেঁটেই কাতারে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন স্পেনের সান্তিয়ানো সানচেজ। হেঁটে অনেকটা পথে পেরিয়েও গিয়েছিলেন এই ফুটবলভক্ত।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম 'বিবিসি'-এর এক প্রতিবেদনে এমনটাই জানানো হয়েছে। জানুয়ারিতে কাতারের উদ্দেশে দেশ ছাড়েন সানচেজ। ইউরোপ ও তুরস্ক হয়ে ইরাকে প্রবেশ করেন তিনি। গত ১ অক্টোবর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে বেশকিছু ছবি পোস্ট করে এই স্প্যানিশ ট্রেকার লিখেছিলেন, 'উত্তর ইরাকের শেষ গ্রাম, ইরান যাওয়ার পথে আমার সামনে আছে মাত্র একটি পাহাড়; যে দেশ পেরোলেই কাতার। '
ইরান পৌঁছানোর একদম শেষ পর্যায়ে গিয়ে এটাই সানচেজের শেষ ইনস্টাগ্রাম পোস্ট। ২ অক্টোবর থেকে তার আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। কয়েক সপ্তাহ অপেক্ষার পর তার পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের কাছে খবর আসে, ইরানের রাজধানী তেহরানের কোনো এক জেলে আটকে রাখা হয়েছে ৪১ বছর বয়সী সানচেজকে।
এদিকে স্পেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিবিসি-কে জানানো হয়েছে, তেহরানে অবস্থিত দেশটির দূতাবাস ইরানি সরকারের সঙ্গে এ ব্যাপারে যোগাযোগ রাখছে। কিন্তু এর বেশি আর কিছু জানানো হয়নি। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে মুখ খোলেনি। ফলে সাবেক প্যারাট্রুপার ও রিয়াল মাদ্রিদের একনিষ্ঠ ভক্ত সানচেজের ভাগ্যে কি ঘটেছে তা পরিষ্কার নয়। অথচ তেহরানে এক টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দেওয়ার কথা ছিল তার। এরপর দক্ষিণ ইরানের বন্দর আব্বাস থেকে বোটে করে কাতারে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল সানচেজের।
ইরানে যাওয়ার আগে পরিবারকে ফোন করে সানচেজ জানিয়েছিলেন, ইরানে নেটওয়ার্কের সমস্যা থাকতে পারে। তাই নিয়মিত যোগাযোগ করতে পারবেন না। এ নিয়ে দুশ্চিন্তা করতেও করে মানা করেন তিনি। কিন্তু ১০ দিন অপেক্ষার পরও তার দিক থেকে কোনো প্রকার যোগাযোগ করা হয়নি। এরপর ১৭ অক্টোবর মিসিং রিপোর্ট করে তার পরিবার।
ইরাকের কুর্দিস্তানের সীমান্ত অঞ্চলভিত্তিক একটি মানবাধিকার সংগঠন বিভিন্ন সূত্রের বরাতে দাবি করেছে, হিজাবনীতি ভাঙার অভিযোগে 'পুলিশি নির্যাতনে' মৃত মাসা আমিনির কবর পরিদর্শনে যাওয়ার কারণে আটক করা হয়েছে সানচেজকে।
সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে হিজাবনীতি ভাঙার অভিযোগে ইরানের পুলিশ মাসাকে আটক করে। তাদের হেফাজতে থাকা অবস্থায় গত ১৬ সেপ্টেম্বর মাসার মৃত্যু হয়। তার পরিবারের দাবি, মাসাকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। তারা এ ঘটনায় মামলাও করেছে। কিন্তু পুলিশ দাবি করে, হেফাজতে থাকলেও হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মাসার মৃত্যু হয়েছে। এরপর ইরানজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
মাসার মৃত্যু ২০১৯ সালের পর ইরানে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভের সূত্রপাত করে। বিক্ষোভ ঠেকাতে দমন-পীড়ন চালায় দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। তারা ২৯ শিশুসহ ২৩৪ জন বিক্ষোভকারীকে হত্যা করে বলে জানায় নরওয়েভিত্তিক ইরান হিউম্যান রাইটস।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০২২
এমএইচএম