কাতার বিশ্বকাপের আগে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন নেইমার জুনিয়র। কারণ তার বিরুদ্ধে আনা প্রতারণা ও দুর্নীতির অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন প্রসিকিউটররা।
২০১৩ সালে সান্তোস থেকে বার্সেলোনায় দলদবলের সময় নেইমার ও আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও কর ফাঁকির অভিযোগ ছিল। সেই অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি হতে হয় পিএসজির ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডকে। শুরুতে প্রসিকিউটররা ৩০ বছর বয়সী ফুটবল তারকার দুই বছরের জেল ও ১০ মিলিয়ন ইউরো জরিমানা চেয়েছিলেন।
তবে এবার প্রসিকিউটররা সব অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এই মামলায় বাকি অভিযুক্তরা হলেন নেইমারের বাবা-মা, দুই ক্লাব সান্তোস ও বার্সেলোনা, বার্সার সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসে মারিয়া বার্তেমেউ ও সান্দ্রো রোসেল এবং সাবেক সান্তোস প্রেসিডেন্ট ওদিলিও রদ্রিগেস।
এর আগে গত ১৮ অক্টোবর এই মামলার শুনানিতে আদালতে হাজির হয়ে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন নেইমার। আদালতে তিনি দাবি করেন, দলবদলের সব ব্যাপার দেখেন তার বাবা এবং এজেন্ট নেইমার সিনিয়র।
শুনানিতে নেইমার বলেন, 'আমার বাবা সবকিছু দেখেন। আমি কোনো আলোচনায় জড়িত ছিলাম না। তার কথামতোই আমি চুক্তিতে স্বাক্ষর করি। '
শুনানিতে নেইমার বাবা ও মা দুজনেই হাজির ছিলেন। তার মা'র দাবি, সান্তোস ও বার্সেলোনার মধ্যকার আলোচনার কিছুই জানতেন না তিনি।
২০১৭ সালে রেকর্ড ২২২ মিলিয়ন ইউরো ট্রান্সফার ফি'তে বার্সা ছেড়ে পিএসজিতে নাম লেখানোর পর থেকেই মূলত বিষয়টি সামনে আসে। এর আগে কাতালুনিয়ায় যতদিন ছিলেন বিষয়টি নিয়ে তেমন নাড়াচাড়া করেনি ক্যাম্প ন্যু। কিন্তু যেই তিনি প্যারিসে পাড়ি জমালেন, এরপরই তার বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ তোলা হলো, যা প্রমাণিত হলে এমনকি পাঁচ বছরের জন্য জেলেও যেতে হতে পারে তাকে।
ঘটনার শুরু ২০১১ সালে। বার্সেলোনার পক্ষে সাবেক সভাপতি সান্দ্রো রোসেল নেইমার ও তার সেসময়ের ক্লাব সান্তোসের সঙ্গে একটি চুক্তি করেন। সে সময়ে নেইমারের মূল্যের ৪০ ভাগ মালিকানা ছিল ডিআইএসের। প্রকাশ হয়, সান্তোস থেকে ১৭.১ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে নেইমারকে কিনে নেয় বার্সেলোনা। যার ফলে ওই অর্থের ৪০ ভাগ পায় ডিআইএস। কিন্তু পরে জানা যায় নেইমারকে কিনতে আসলে ৫৭.১ মিলিয়ন খরচ হয়েছে। এই সত্য জানতে পেরে ব্রাজিলিয়ান বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানটি অভিযোগ করে দলবদলের আসল অঙ্ক গোপন করে তাদের ঠকানো হয়েছে।
অর্থের হেরফের এখানেও শেষ হয়নি। পরবর্তীতে প্রকাশ হয়, রিয়াল মাদ্রিদ নয়, বার্সেলোনাকেই বেছে নেওয়া নিশ্চিত করতে নেইমার ও তার বাবাকে আরও বড় অঙ্কের অর্থ দিয়েছে রোসেল। যার ফলে নেইমারকে আনতে বার্সেলোনার প্রায় ৮৩.৩ মিলিয়ন ইউরোর মতো খরচ হয়! আর এই অর্থের পরিমাণ গোপন রাখার ফলে বিশাল অঙ্ক হাতছাড়া হয় সান্তোসেরও। ব্রাজিলিয়ান ক্লাবটি নেইমার ও তার বাবার বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করে। ২০১৮ সালে সেই মামলাতেই প্রথমে দুই বছরের শাস্তির কথা উঠলেও তা বেড়ে ছয় বছর হতে যাচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছিল।
স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম 'মার্কা' জানিয়েছিল, স্পেনের ট্যাক্স কর্তৃপক্ষ নেইমারকে দুই বছর জেল খাটাতে চেয়েছিল। সেই সঙ্গে আর্থিক জরিমানা হিসেবে তারা ১০ মিলিয়ন ইউরো দাবি করেছিল। অন্যদিকে ব্রাজিলিয়ান কোম্পানি ডিআইএস নেইমারের পাঁচ বছরের সাজার আবেদন করেছিল। সেই সঙ্গে আর্থিক ক্ষতির কথা উল্লেখ করে তারা ১৫০ মিলিয়ন ইউরো দাবি করে। নেইমারের সঙ্গে তার বাবা-মা, বার্সার সাবেক দুই প্রেসিডেন্ট রোসেল ও বার্তমেউ, সান্তোসের সাবেক কোচ এবং বার্সেলোনা ক্লাবের বিপক্ষেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছিল।
অপরাধ প্রমাণিত হলে নেইমারের বাবাকে দুই বছর এবং তার মাকে এক বছর জেলের শাস্তি ভোগ করতে হতো। তবে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেওয়ায় এখন সবাই মুক্ত। ফলে ফুরফুরে মেজাজে কাতারে বিশ্বকাপ খেলতে যেতে পারবেন নেইমার।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০২২
এমএইচএম