ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

গরম চায়ে দাঁত ক্ষয়, ব্যায়াম ঠাণ্ডাপানি বেশিকথা আর নয়

স্বাস্থ্য ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০২৩
গরম চায়ে দাঁত ক্ষয়, ব্যায়াম ঠাণ্ডাপানি বেশিকথা আর নয় সংগৃহীত ছবি।

মিষ্টি খাবার আর বেশি বেশি ফলের জুস খেলে দাঁতের ক্ষয় হয় সে কথা সবাই জানে। কিন্তু কিছু কিছু কাজ আপাত নির্দোষ মনে হলেও এগুলো দাঁতের বড় ক্ষতির কারণ।

গরম চায়ের অভ্যাসসহ প্রাত্যহিক অভ্যাসের নানা দিক পরিবর্তন না করলে দাঁতের ক্ষয় রোধ কঠিন হয়ে পড়বে,  জানিয়ে দিয়েছেন গবেষকরা।

২০১৪ সালে জার্মানির হাইডেলবার্গ ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের গবেষকরা এ তথ্য প্রকাশ করেছিলেন।  তারা জানান, শরীরচর্চায় দাঁতের ক্ষয় হয়।  

গবেষকরা দেখেছেন, শরীরচর্চার সময় অ্যাথলেটদের মুখে লালা (স্যালাইভা) জমে কম, আর (ক্ষার) অ্যালকালাইন জমে বেশি হারে। এতে অনিবার্যভাবেই দাঁতের ক্ষয় হয়। কারণ ক্ষারে দন্তমল বা প্ল্যাক (দাঁতের ওপরে জমে ওঠা সাদা নরম পদার্থ বিশেষ) জমে যা ওই ক্ষয় তরান্বিত করে।  
এর বাইরেও আমরা প্রতিদিন যেসব কাজে অভ্যস্ত তার অনেকগুলোই দাঁত ক্ষয়ের কারণ হিসেবে দেখেছেন গবেষকরা। যেমন ধরুন চা পান।

চায়ের কতই না রকম ফের। বেড টি, রেড টি, গ্রিন টি, র’টি কিংবা গরুর দুধের চা! শীতের সকালে, কিংবা বাইরে ঠাণ্ডা থেকে ঘরে ফিরে এক কাপ গরম চা মনকে চনমনে করে দেয়। কিন্তু মনে রাখবেন ঠাণ্ডা দাঁতে গরম কোন কিছুই খেলেই আপনার দাঁতে ক্ষয় হবে। দাঁতের ওপরে আঁচড় পড়ে যাবে।

উপরিতলের এই আঁচড় খালি চোখে হয়তো চোখেই পড়বে না। কিন্তু দাঁতে তাপমাত্রার হঠাৎ পরিবর্তন বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে।

গবেষকরা বলেছেন, দাঁত ডেন্টাইন নামের এক ধরনের হলদেটে পদার্থ দিয়ে তৈরি যা এনামেল দিয়ে ঢাকা। আর দাঁত যখন হঠাৎ করে পরিবর্তিত তাপমাত্রার মধ্যে পড়ে যায় তখন এই এনামেল ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তৈরি হয় ফাটল। সাধারণত এই ফাটলকে কসমেটিক সমস্যা হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু সে ফাটল যতই গাঢ় হবে ততই সেগুলো ডেন্টাইনকে আক্রান্ত করার সুযোগ তৈরি হবে। তখন দাঁতে গরম কিছু লাগলেই এক ধরনের সংবেদনশীলতা তৈরি হবে। আর ধীরে ধীরে তা হয়ে উঠবে দাঁতক্ষয়ের অন্যতম কারণ।

ঠাণ্ডা পানীয় আরও ঠাণ্ডা বা চিল্ড করতে বরফ কুচি বা টুকরো ব্যবহার কে না করে! কিন্তু এর মধ্য দিয়ে নিজের দাঁতের বারোটা নিজেই বাজিয়ে দিচ্ছেন সে ব্যাপারেও সতর্ক করে দিয়েছেন গবেষকরা।

ব্রিটিশ ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশনের অধ্যাপক ড্যামিয়েন ওয়ামসলে বলেছেন, যখনই আপনি বরফ চুষে খাচ্ছেন, তখনই আপনার দাঁত তাপমাত্রার হঠাৎ পরিবর্তনের প্রভাবের মধ্যে পড়ছে। আর এতে দাঁতে ফাটল ধরে যাওয়া অনেকটাই অনিবার্য।

সাঁতার কাটতে মানা নেই। কিন্তু মুখ খুলে অবশ্যই নয়। সুইমিংপুলে যখন সাঁতার কাটবেন তখনতো নয়ই। কারণ সুইমিংপুলের পানিতে ক্লোরিন ব্যবহার করা হয়। নিয়মিত এই ক্লোরিন দাঁতে লাগলে দাঁতের ক্ষয় হবে। কারণ ক্লোরিন পানিতে মিশলে যে প্রতিক্রিয়া হয় তাতে হাইড্রোক্লোরিক এসিড সৃষ্টি হয়। এই এসিড দাঁতে লাগলে উপরিতলের শক্ত কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে দাঁত তার রঙ হারায় আর ধীরে ধীরে সংবেদনশীলতা সৃষ্টি করে।

শরীরে চুলকানি দেখা দিলে অ্যান্টি হিস্টামিনের ব্যবহার সাধারণ। এতে মুখ শুকিয়ে যায় আর শুকনো মুখ দীর্ঘস্থায়ীভাবে দাঁতের ক্ষয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।  

কেন্ট এর কমিউনিটি ফার্মাসিস্ট স্টিফেন ফস্টারের মতে, শুকনো মুখ দাঁতের মাড়িকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। মারিক্ষয় হলে দাঁত ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে, নড়বড়ে হয়ে যায় এবং এক পর্যায়ে তা পড়েও যেতে পারে। স্টিফেন বলেছেন, চিনিমুক্ত গাম চিবালে মুখ শুকিয়ে যাওয়া থেকে রেহাই পাওয়া যেতে পারে।

মুখে সুতো ছেঁড়া কিংবা সুঁইটিকে দাঁতে চেপে ধরা বাঙালি নারীর অভ্যাস। এতে সামনের দাঁতে বড় ক্ষতি হয় বলে জানিয়েছেন লন্ডনের কিংস কলেজের ওরাল সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক টারা রেনটন।  

আর দাঁতে নখ কামড়ানো কিংবা কোনো প্যাকেট ছিঁড়তে দাঁতের ব্যবহারে নিষেধ করেছেন ম্যানচেস্টারের ডেন্টাল হেলথ কেয়ারের চিকিৎসক নিকোলা ওয়েন।  

তবে ছোট ছোট ফিলিংয়ের মাধ্যমে এ ধরনের ক্ষতিগুলো কাটিয়ে ওঠা যায় বলে জানিয়েছেন তারা।

খাবার খেয়ে দাঁত মাজতে হবে, কিন্তু খাওয়ার পরপরই নয়। লন্ডনের ফ্রেশ ব্রেথ সেন্টারের ডেন্টিস্ট ড. ফিল স্টেমারের মতে, খাওয়ার সময় যে এসিড ও চিনি উৎপাদন হয় তা মুখের এনামেলের সংরক্ষণ ক্ষমতা দুর্বল করে। খাবার খাওয়ার পর ধীরে ধীরে এনামেল তার ক্ষমতা ফিরে পায়। কিন্তু খাবার খাওয়ার পরপরই যদি কেউ ব্রাশ করে তাহলে এনামেল শক্ত হয়ে ওঠার আগেই ধুয়ে যায়। খাবারের পরে দাঁত ব্রাশের জন্য অন্তত আধাঘণ্টা অপেক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছেন ড. স্টেমার। তবে সবচেয়ে উত্তম পরামর্শ হচ্ছে খাবারের আগেই দাঁত ব্রাশ করে ময়লা পরিষ্কার করে নেওয়ায় মুখে সেগুলো না যেতে পারে। আর খাবারের পরে মাউথওয়াশ দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে নেওয়া।

জন্মনিয়ন্ত্রণে নারীর মুখে তুলে দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ। এই ওষুধগুলোর কোনো কোনোটি দাঁতের জন্য ভয়াবহ ক্ষতির।  

যুক্তরাজ্যের হার্ডফোর্ডশায়ারের ডেন্টিস্ট ড. জেরেমি হিলের মতে, জন্মনিয়ন্ত্রণের বড়িগুলো শরীরে হরমোনের মাত্রা বাড়ায় ফলে মাড়ি জ্বলে যায় এবং এতে দাঁতের গোড়া থেকে রক্ত বের হয়। কোনো নারী যখন সন্তানসম্ভবা হন তখনও এই হরমোন বেড়ে যায় এবং দাঁতক্ষয় হয় বলে জানিয়েছেন ড. হিল।  

অ্যান্টিসেপটিক মাউথওয়াশ এক্ষেত্রে কিছুটা উপকারী হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।

আকাশপথে যাত্রায় দাঁতের ক্ষতি হয় বলে জানিয়েছেন কেন্টের বিএমআই হাসপাতালের কনসালট্যান্ট সার্জন লিউক ক্যাসকারিনি।  

তিনি জানান, অতি উচ্চতায় যখন উড়োজাহাজ যখন ওঠে তখন বায়ুমণ্ডলের ছোট পকেট তৈরি হয়। এতে মুখের ভেতর চাপ তৈরি হয় এবং মুখে ব্যথারও কারণ হয়ে দাঁড়ায়। একই ঘটনা ঘটতে পারে পর্বত আরোহণে কিংবা স্কিয়িংয়ে।

কথা বলতে অনেকেরই পছন্দ। এতে মুখের চোয়াল বা চাপাব্যথা হতে পারে কিন্তু দাঁতেরও ক্ষতি হয় সে কথা জানালেন লন্ডনের গাই’স হাসপাতালের মি. কাসকারিনি।  
চোয়ালের অবিরাম নড়াচড়া দাঁতের জন্য ঝুঁকির বলেন তিনি।

কাসকারিনি তার এক রোগীর উদাহরণ টেনে বলেন, এই ভদ্র নারীর চোয়ালে আর্থ্রাইটিসে ধরা পড়ার আর কোনো কারণ আমি পাইনি, তার বাচালতা ছাড়া। আর তিনি কথা নিজেই স্বীকার করেছেন।

এছাড়াও ব্যথা নিরাময়ে অ্যাসপিরিন, অ্যাজমায় ইনহেলার ব্যবহার দাঁত ক্ষয়ের অন্যতম কারণ বলে চিহ্নিত করেছেন চিকিৎসকরা।  

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০২৩
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।