ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

নিপাহ ভাইরাসে মৃত্যু ৭১ শতাংশ, বাড়তি সতর্কতার পরামর্শ

রেজাউল করিম রাজা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২৩
নিপাহ ভাইরাসে মৃত্যু ৭১ শতাংশ, বাড়তি সতর্কতার পরামর্শ

ঢাকা: দেশে চলতি বছরে ১০ জনের শরীরে প্রাণঘাতী নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছেন সাত জন।

এ রোগে শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার প্রায় ৭১ শতাংশ, তাই নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে বাড়তি সতর্কতার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, দেশে গত ২২ বছরে ৩৩ জেলায় এ ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এসব জেলাকে এরই মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।  

নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় ঢাকার মহাখালীর ডিএনসিসি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে ২০টি শয্যা প্রস্তুত রাখার নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) জানিয়েছে, চলিত বছরে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত ১০ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এসব রোগী শনাক্ত হয়েছে শরীয়তপুর, রাজবাড়ী, নওগাঁ, রাজশাহী, পাবনা ও নাটোর জেলায়। আক্রান্ত ১০ জনের মধ্যে ছয়জন পুরুষ ও চারজন নারী। এর মধ্যে মারা গেছেন চারজন পুরুষ ও তিনজন নারী। অর্থাৎ মৃত্যুর হার ৭০ শতাংশ।

আইইডিসিআরের পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ২০০১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত নিপাহ ভাইরাসে মোট ৩৩৫ ব্যক্তি সংক্রমিত হয়েছেন। মারা গেছেন ২৩৭ জন। ২০২২ সালে সারা বছরে তিনজন শনাক্ত হন, তাদের মধ্যে দু'জন মারা যান। ২০২১ সালে দু'জন শনাক্ত হলেও কেউ মারা যায়নি। ২০২০ সালে সাতজন শনাক্ত হন, তাদের মধ্যে মারা যান পাঁচজন। ২০১৯ সালে আটজন শনাক্ত হন, তাদের মধ্যে মারা যান সাতজন। ২০১৮ সালে চারজন শনাক্ত হন, তাদের মধ্যে দু'জন মারা যান। ২০১৭ সালে তিনজন শনাক্ত হন, তাদের মধ্যে দু'জন মারা যান। ২০১৬ সালে নিপাহ ভাইরাসে কেউ শনাক্ত হয়নি। ২০১৫ সালে ১৫ জন শনাক্ত হন, তাদের মধ্যে ১১ জন মারা যান। এর আগে ২০১১ সালে দেশে সর্বোচ্চ নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। ২০১১ সালে মোট ৪৩ জন আক্রান্ত হন, তাদের মধ্যে ৩৭ জন মারা যান।

জানা যায়, বাদুড় নিপাহ ভাইরাস রোগের বাহক। তবে বাদুড় এতে আক্রান্ত হয় না। বাদুড় থেকে এ ভাইরাস মানুষের শরীরে আসে। বাদুড় খেজুরের কাঁচা রস খায়, বাদুড়ের লালা বা প্রস্রাবের সঙ্গে ভাইরাস খেজুরের রসের সঙ্গে মিশে যায়। সেই রস খেলে মানুষ নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। বাদুড়ের খাওয়া ফল খেলেও নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

আইইডিসিআর এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন বলেন, সম্প্রতি মানুষের মধ্যে আবারও খেজুরের কাঁচা রস খাওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করছি এবং তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করার প্রয়াসও দেখা যাচ্ছে। এটি যে কি ধরনের বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে, তা না জেনেই মানুষ খেজুরের কাঁচা রস খাচ্ছে। আমরা সবাইকে খেজুরের কাঁচা রস পান করতে নিষেধ করছি, রস সংগ্রহে যত সতর্কতাই অবলম্বন করা হয়ে থাকুক না কেন তবুও এটি অনিরাপদ।

গবেষকেরা বলছেন, নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মৃত্যুহার অনেক বেশি। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত ৩৩৫ জনকে শনাক্ত করেছে আইইডিসিআর। এর মধ্যে মারা গেছেন ২৩৭ জন, অর্থাৎ মৃত্যুর হার ৭১ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞরা জানান, কোনও জায়গায় একবার নিপাহ ভাইরাস আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেলে ওই স্থানকে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করা হয়। কারণ যেখানে নিপাহ ভাইরাসের রোগী পাওয়া যায়, সেখানে বাদুড় ও খেজুরের রসও থাকে। যেহেতু দেশের প্রায় সব অঞ্চলেই খেজুর গাছ রয়েছে, তাই দেশের প্রায় সব অঞ্চল নিপাহ ভাইরাসের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু যেসব জেলায় রোগী পাওয়া গেছে, সেখানে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

নিপাহ ভাইরাস প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক বেনজির আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, নিপাহ ভাইরাস শীতকালেই হয়, এর সঙ্গে বাদুড় এবং খেজুরের রসের সম্পর্ক। এছাড়াও আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকেও অন্য কেউ আক্রান্ত হতে পারে। নিপাহ ভাইরাস সারা দেশেই হতে পারে। যেখানে খেজুরের গাছে রয়েছে এবং কাঁচা রস যেখানে বিক্রি হয় এসব জায়গায় এটা হতে পারে। দক্ষিণাঞ্চলে গাছ বেশি, তাই এসব এলাকাও ঝুঁকি বেশি।

নিপাহ ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে সাবেক পরিচালক বেনজির আহমেদ বলেন, খেজুরের কাঁচা রস পান করা বন্ধ করা গেলে কেউ নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হবে না। আর যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের আইসোলেশনের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি রোগীর সেবা এবং চিকিৎসার সময় যথাযথ স্বাস্থবিধি মেনে মাস্ক এবং গ্লাভস ব্যবহার করতে হবে।

নিপাহ ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে জাতীয় কর্মকৌশলের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে সাবেক পরিচালক বেনজির বলেন, এ ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে জাতীয় কর্মকৌশল প্রণয়ন করা প্রয়োজন, কারণ নিপাহ ভাইরাস খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। যেমন করোনায় আক্রান্তের মধ্যে আমাদের দেশে মৃত্যুর হার এক দশমিক ৪৪ শতাংশ, সেখানে নিপাহ ভাইরাসে মৃত্যুর হার ৭১ শতাংশ এটা থেকেই বোঝা যায় এ ভাইরাস কতটা মারাত্বক। নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে তখন আর চিকিৎসা নেই, তাই আমাদের জোর দিতে হবে মানুষ যেন আক্রান্ত না হয়।

বাংলাদেশ সময়: ২০২১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০২৩
আরকেআর/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।