বাগেরহাট: বাগেরহাটে উপকূলবাসীর সুপেয় পানির চাহিদা পূরণ করছে সোলার পিএসএফ (পন্ডস অ্যান্ডস ফিল্টার)।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের স্থাপিত সোলার পিএসএফ থেকে বিনামূল্যে সুপেয় পানি পাচ্ছেন লবণাক্ত এলাকার বাসিন্দারা।
সুপেয় পানির সংকট নিরসনে নানা পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী জয়ন্ত মণ্ডল।
উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের বেশিরভাগ এলাকার পানি লবণাক্ত হওয়ায় সুপেয় পানির জন্য বৃষ্টি ও বদ্ধ পুকুরের পানির ওপর নির্ভর করতে হয়। বিশেষ করে শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ, মোংলা, কচুয়া, বাগেরহাট সদর ও রামপাল উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ সারা বছরই সুপেয় পানির সংকটে ভোগেন। কেউ কেউ পুকুরের পানি ফুটিয়ে, কেউ বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে জীবন চালায়। শুস্ক মৌসুমে এ সংকট আরও তীব্রতর হয় এসব এলাকায়। এলাকাবাসীর সুপেয় পানির সংকট পূরণে এক বছর আগে পানি সংরক্ষণ ও নিরাপদ পানি সরবরাহের লক্ষ্যে জেলা পরিষদের পুকুর, দিঘি, জলাশয় পুনঃখনন বা সংস্কার নামক প্রকল্পের আওতায় বাগেরহাটের ২০০টি পুকুর খনন ও সোলার পিএসএফ স্থাপনের উদ্যোগ নেয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।
ইতোমধ্যে ১৫০টি পুকুরে সোলার পিএসএফ স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে। আরও ৫০টি খুব তারাতারি চালু হবে। ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত প্রতিটি পিএসএফ থেকে দিনে ১০ হাজার লিটার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে সুপেয় পানির সংকট পূরণ হচ্ছে ২০০-২৫০টি পরিবারের। আধুনিক এই পিএসএফ-এ সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে চালিত মোটর দিয়ে পুকুর থেকে পানি ওঠানো হয় ট্যাংকিতে। কখনও যদি স্বয়ংক্রিয় সোলার প্যানেল ও মোটর কাজ না করে তখন হস্তচালিত টিউবওয়েল দিয়েও পানি ওঠাতে পারবেন ট্যাংকিতে। সেখান থেকে বালু ও খোয়ার মাধ্যমে ফিল্টারিং হয়ে ট্যাবের মাধ্যমে উপকারভোগীদের মধ্যে সরবরাহ করা হয়। বিনামূল্যে বাড়ির পাশেই বিশুদ্ধ পানি পেয়ে খুশি স্থানীয়রা।
মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) বিকেলে শরণখোলা উপজেলার খোন্তাকাটা ইউনিয়নের বানিয়াখালী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, পুকুরপাড়ে স্থাপিত সোলার পিএসএফ থেকে কলসে করে পানি নিচ্ছেন অনেকেই।
প্লাস্টিকের পট ভরে পানি নেওয়া বৃদ্ধ মো. সরোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের চারপাশেই নদী ও খাল রয়েছে। পানির কোনো অভাব নেই, কিন্তু মিষ্টি ও সুপেয় পানির খুব অভাব আমাদের। বৃষ্টির মৌসুম ছাড়া সারা বছরই পানির কষ্ট পাই। তবে সোলার পিএসএফে আমাদের পানির সেই কষ্ট সামান্য কমেছে।
বানিয়াখালী চেয়ারম্যান বাড়ি জামে মসজিদের ইমাম মো. হারুন অর রশীদ বলেন, সোলার পিএসএফ স্থাপনের মাধ্যমে এলাকার অনেকের পানির চাহিদা মিটছে। কিন্তু এটা খুবই সীমিত। কারণ অনেক দূরে দূরে একেকটা পুকুর, একেকটা পুকুরে একেকটা পিএসএফ। এই পিএসএফের উৎপাদন ক্ষমতাও সীমিত। এই অঞ্চলের মানুষের পানির চাহিদা মেটাতে আরও বেশি পিএসএফ এবং পুকুর খনন করার দাবি করেন এই ইমাম।
একই স্থান থেকে পানি নেওয়া ১০ বছর বয়সী কিশোরী রুবিনা আক্তার বলেন, আমরা প্রতিদিন এখান থেকে পানি নেই। পানিও অনেক ভালো, এই পানিতেই আমাদের রান্না ও খাওয়া হয়।
শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. বাচ্চু মুন্সি বলেন, পানির কারণে এলাকার লোকজনের নানা ধরনের রোগ লেগে থাকে। স্থানীয়দের স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমাতে তাই বেশি বেশি পুকুর খনন ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য ট্যাংকি সরবরাহের দাবি জানাই।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, শরণখোলার উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মেহেদী হাসান বলেন, সোলার প্যানেল থেকে পাওয়ার নিয়ে সাবমার্সিবল পাম্পের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্যাংকিতে পানি উত্তোলন করা হয়। এখানে একটি সেন্সর বসানো রয়েছে, যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই পানি উঠে বন্ধ হয়ে যায়। বালু ও পাথরের বেড আছে, সেখানে ফিল্টার হয়ে ট্যাবে যায়।
এছাড়া আমাদের ইউভি ফিল্টার সংযুক্ত আছে, সেখানেও ফিল্টারিং হয়। খুব বেশি মেইন্টেন্যান্সেরও প্রয়োজন হয় না। ৩-৬ মাস পরে একবার পরিষ্কার করলে হয়। এক কথায় অনেক সুবিধা রয়েছে এ সোলার পিএসএফের।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী জয়ন্ত মণ্ডল বলেন, সোলার পিএসএফের মাধ্যমে সুপেয় পানির চাহিদা অনেকাংশে কমেছে। এছাড়া উপকূলবাসীর সুপেয় পানির চাহিদা মেটাতে সরকারের নানা পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৪, ২০২৩
এসআরএস