ফরিদপুর: ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নার্সের অবহেলায় মফিজুর মোল্লা (৬০) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
মৃত মফিজুর মোল্লা ওই উপজেলার রুপাপাত ইউনিয়নের সহস্রাইল গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় তিনি ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের চালক ছিলেন।
হাসপাতাল ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা গেছে, মফিজুর মোল্লা মাসখানেক ধরে শ্বাসকষ্টজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে গত ২০ মার্চ প্রথমে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। এরপর তিনি কিছুটা সুস্থ হলে গত ২৯ মার্চ তাকে বাড়িতে আনা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে তার শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়। চিকিৎসক তাকে ভর্তি করে অক্সিজেন দেন। পরে মিতু নামে একজন নার্স এসে অক্সিজেন খুলে ফেলার ৪-৫ মিনিটের মধ্যে রোগী মারা যান।
মফিজুর মোল্লার স্ত্রী তহমিনা বেগম বলেন, নার্স মিতুকে আমরা বার বার অনুরোধ করেছিলাম অক্সিজেন না খোলার জন্য। কিন্তু তিনি আমাদের কথা শোনেননি বরং খামখেয়ালি আচরণ করেছেন এবং জোর করে অক্সিজেন খুলে ফেলার কিছু সময় পরই আমার স্বামীর মৃত্যু হয়। নার্স মিতুর অবহেলার কারণেই আমার এই সর্বনাশ হলো। আমরা এর বিচার চাই।
মফিজুর মোল্লার ছেলে মো. শামিম মোল্লা অভিযোগ করে বলেন, শ্বাসকষ্টজনিত কারণে আমার বাবাকে হাসপাতালে ভর্তি করে অক্সিজেন দেওয়া হয়। আমি ওষুধ আনতে গেলে নার্স মিতু এসে অক্সিজেন খুলে ফেলার কিছু সময় পরই বাবা মারা যান।
মফিজুর মোল্লার ভাই হাফিজুর মোল্লা বলেন, আমি আমার ভাইয়ের বেডের পাশেই ছিলাম। তাকে ভর্তির পর অক্সিজেন দেওয়া হয়। কিছু সময় পর নার্স এসে বলেন রোগীর অক্সিজেন লাগবে না। আরও রোগী আছে তাদের অক্সিজেন দিতে হবে এই বলে তিনি অক্সিজেন খুলে ফেলেন। এর কিছু সময় পরই আমার ভাইয়ের মৃত্যু হয়।
পাশের বেডের রোগী উপজেরার বিশ্বাসপুর গ্রামের বাসিন্দা কালাম শেখ বলেন, আমি পাশের বেডে ভর্তি আছি। নার্স এসে অক্সিজেন খুলে ফেলার কিছু সময় পরই তিনি মারা যান।
পাশের বেডে চিকিৎসারত চতুল গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা কাসেম মোল্লা বলেন, ডাক্তারের নির্দেশনা ছিল অক্সিজেন দিয়ে রাখা কিন্তু নার্স এসে বলেন আপনাদের কথা মতো আমাদের অক্সিজেন দিতে হবে? এই বলে তিনি অক্সিজেন খুলে ফেলার কিছু সময় পর রোগী মারা যান।
এ বিষয়ে বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা এম এম নাহিদ আল রাকিব বলেন, যতটুকু জেনেছি নার্সের কোনো অবহেলা নেই। তিনি নিয়ম অনুযায়ী দ্বায়িত্ব পালন করেছেন। তারপরও এ বিষয়ে যদি রোগীর স্বজনদের কোনো অভিযোগ থাকে এবং নার্সের যদি কোনো অবহেলা থেকে থাকে তাহলে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অবহেলায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগের বিষয়ে বোয়ালমারী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ছানোয়ার বলেন, রোগীর স্বজনদের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করার পর তদন্তপূর্বক সত্যতা পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আব্দুল ওহাব বাংলানিউজকে বলেন, মৃত রোগীর স্বজনরা প্রথমে নার্সের অবহেলায় মৃত্যুর অভিযোগ তুললেও পরে তারাই আবার বলেছেন- কোনো অভিযোগ নেই।
বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০২৩
এসআরএস