ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

তীব্র তাপদাহের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতেও সুস্থ থাকবেন যেভাবে

রেজাউল করিম রাজা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০২৩
তীব্র তাপদাহের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতেও সুস্থ থাকবেন যেভাবে

ঢাকা: তীব্র তাপদাহে পুড়ছে দেশ। রাজধানীসহ সারাদেশে তীব্র গরমে বিপর্যস্ত জনজীবন।

রোদ এবং গরমের তীব্রতার সঙ্গে বাড়ছে মানুষের বিভিন্ন রোগ এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকি।

শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) সকালে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, দেশের ৮ জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ ও বাকি জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ হচ্ছে। তা অব্যাহত থাকতে পারে। সেই সঙ্গে সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৪১.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।  

এছাড়া মোংলায় ৪০.৮, রাজশাহী ও ঈশ্বরদীতে ৪০.৫, যশোরে ৪০.৪, ফরিদপুরে ৪০.৩, কুমারখালীতে ৪০.০, খুলনায় ৩৯.৮, সাতক্ষীরায় ৩৯.৭, ঢাকায় ৩৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

জীবিকার তাগিদে কিংবা ঈদের কেনাকাটাসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের হতে হচ্ছেন সবাই। রোজাদার ব্যক্তিরা রোজা রেখে বাইরে যাচ্ছেন।  

কিন্তু চলমান তীব্র গরমে বেশি ঘাম হলে শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দিতে পারে। হিটস্ট্রোকে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। আবার যারা রোজা রাখছেন না, তারা বাইরের অস্বাস্থ্যকর তেলে ভাজা খাবার, শরবত, দূষিত ঠাণ্ডা পানি খেয়ে আক্রান্ত হচ্ছেন বিভিন্ন রোগে।

স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তীব্র খরতাপে খুব বেশি প্রয়োজন না হলে বাইরে বের না হতে। খুব প্রয়োজনে বাইরে বের হলেও ছাতা নিয়ে বের হওয়া, সঙ্গে বিশুদ্ধ পানি রাখা। এসময় শিশু, গর্ভবতী মা এবং বৃদ্ধদের ঘরে থাকার পরামর্শও দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।

তীব্র তাপদাহে কী ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা হচ্ছে, জানতে চাইলে হেলথ অ্যান্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, এই গরমে আমরা সাধারণত ডিহাইড্রেশন বা পানি শূন্যতার রোগী বেশি পাচ্ছি। বিশেষ করে যারা বৃদ্ধ এবং বিভিন্ন রোগে ভুগছেন, তারা পানি শূন্যতায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে আসছেন। পানি শূন্যতা দীর্ঘমেয়াদী হলে কিডনির সমস্যা হতে পারে। পাশাপাশি ডায়রিয়াজনিত রোগেও চিকিৎসা নিতে আসছেন অনেকে। শিশুদের ক্ষেত্রে আমরা ডায়রিয়া এবং নিউমোনিয়া জাতীয় রোগী বেশি পাচ্ছি।

এমন পরস্থিতিতে সুস্থ থাকতে করণীয় কী? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘরের বাইরে এখন তীব্র গরম এবং বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণও কম, তাই শরীর থেকে দ্রুত পানি বেরিয়ে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে প্রথম পরামর্শ হচ্ছে, যারা রোজা রাখতে পারছেন না, তারা প্রয়োজনীয় পানি এবং তরল জাতীয় খাবার খাবেন। দ্বিতীয়ত শিশু, বৃদ্ধ এবং গর্ভবতী নারী খুব বেশি প্রয়োজন ব্যতীত বাইরে বের হবেন না। যারা রোজা রাখেন এবং রাখেন না, কিংবা বাইরে যারা শারীরিক পরিশ্রম করেন, তারা এই সময় যতটা সম্ভব কম পরিশ্রম করতে পারেন, ততই ভালো। যারা বাইরে যাবেন, তারা ছাতা সঙ্গে নেবেন।  

পাশাপাশি পানির বোতল সঙ্গে রাখবেন, যেন প্রয়োজন হলে পান করতে পারেন। রোজাদার যারা বাইরে ইফতার করেন এবং পানি বা শরবত কিনে খান, তাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে- বাইরের খোলা অস্বাস্থ্যকর পানি কিংবা তরল খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ এগুলো নিরাপদ নয়। এসব কারণেই ডায়রিয়া, টাইফয়েড এবং জন্ডিস হতে পারে। বাংলাদেশের অধিকাংশ বরফকলে বরফ বানানোর সময় নিরাপদ পানির ব্যবহার করা হয় না। গরমের সময় আমরা বরফ মিশ্রিত পানি কিংবা শরবত খেতে পছন্দ করি। তাই বাসায় তৈরি বরফ ব্যবহার করাই উত্তম।

এ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, এই গরমে বাইরে বের হলে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। আমাদের চারপাশে যদি কাউকে এমন দেখি যে, সে অবসন্ন বোধ করছে, মাথা ঘোরা বা বমি বমি ভাব দেখা দিচ্ছে, প্রচণ্ড ঘামছে এবং শরীর নিস্তেজ হয়ে আসছে, এমন হলে দ্রুত তাকে ছায়া ঘেরা একটি স্থানে নিয়ে যেতে হবে। টাইট জামা কাপড় পড়া থাকলে, তা যতটা সম্ভব আলগা করে দিতে হবে। শরীর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুছে দিতে হবে। ঠাণ্ডা পানি এবং ওর স্যালাইন খেতে দিতে হবে। যদি কেউ জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন, তাহলে তাকে দ্রুত চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে। এই গরমে সুতি এবং ঢিলেঢালা পোশাক পরতে হবে। সিনথেটিক বা কৃত্রিমভাবে বানানো কোনো কাপড় পরা যাবে না। এতে গরম বেশি লাগে, হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

তীব্র গরমে সুস্থ থাকতে আমাদের কেমন খাদ্য গ্রহণ করা উচিত? জানতে চাইলে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. নিয়াতুজ্জামান বলেন, এই গরমে সুস্থ থাকতে হলে পর্যাপ্ত তরল খাবার খেতে হবে। চর্বি এবং মাংস জাতীয় খাবার, যেগুলো হজমে অনেক বেশি সময় লাগে, সেসব না খাওয়াই ভালো। এখন বাজারে প্রচুর রসালো ফলমূল পাওয়া যায়, এগুলো খেতে হবে। গরমে মানুষের শরীর থেকে ঘামের মাধ্যমে প্রচুর ইলেকট্রোলাইটস বের হয়, তাই এ সময় বেশি বেশি মৌসুমি ফল খেতে হবে। পোলাও, বিরিয়ানি এসব এড়িয়ে সহজপাচ্য খাবার খেতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০২৩
আরকেআর/এনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।