ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

যে কারণে প্রশংসা কুড়াচ্ছে জয়পুরহাট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র

শাহিদুল ইসলাম সবুজ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৯ ঘণ্টা, মে ৩, ২০২৩
যে কারণে প্রশংসা কুড়াচ্ছে জয়পুরহাট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র

জয়পুরহাট: দেশে কম খরচে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা কঠিন। যদিও জয়পুরহাটের ২০ শয্যার সরকারি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটি এর ব্যতিক্রম।

মধ্য ও নিম্নাবিত্তদের সন্তান প্রসবসহ মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবায় এরই মধ্যে আস্থা অর্জন করেছে এ কেন্দ্রটি।

জানা গেছে, ১৯৭৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি জয়পুরহাট শহরের ধানমন্ডিতে চালু হয় মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র। বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। আর অন্তঃবিভাগে ১০-১২ জন রোগী ভর্তি থাকেন।

সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিদিন সকাল হলেই এ কেন্দ্রটি মুখর হয়ে ওঠে মা, শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের পদচারণায়। এখানে চিকিৎসক, নার্স ও ওয়ার্ড বয় সবাই রোগীদের প্রতি সহানুভূতিশীল। বহির্বিভাগ ও অন্তঃবিভাগে টাকা ছাড়াই মেলে সব ধরনের স্বাস্থ্যসেবা। নিখরচায় সেবা পাওয়া যায় বলেই মধ্য ও নিম্নবিত্তদের পছন্দের হাসপাতাল এটি।

জয়পুরহাট সদর উপজেলার চকশ্যাম গ্রাম থেকে আসা আয়েশা নামে এক মা তার ছয় মাসের সন্তানকে নিয়ে এসেছেন এ কেন্দ্রে। তিনি বলেন, আমার স্বামী একজন ভ্যানচালক। অভাবের সংসারে দুই সন্তানের মা হয়েছি। দামি কোনো ক্লিনিকে যেতে পারি না। এ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় এখানেই দ্বিতীয় সন্তান প্রসব করেছি। তারা সব কিছুই বিনামূল্যে দিয়েছেন।

জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার বড়াইল গ্রামের বাসিন্দা আলেফা বেগম বলেন, গর্ভে সন্তান আসার কয়েক মাস পর থেকেই এ কেন্দ্র থেকে নিয়মিত খোঁজ খবর নিয়েছেন। মাসে মাসে আমার মোবাইল ফোনে তারা এসএমএস কিংবা কল করে ডেকে আনেন। প্রসব ব্যথা উঠলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানা মাত্র আমার বাসায় অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়ে দিয়ে আমাকে এ কেন্দ্রে নিয়ে এসে বিনামূল্যে প্রসব করার ব্যবস্থা করেছে। সেই সঙ্গে ওষুধপত্রও দিয়েছে ফ্রি। এছাড়া প্রসবের একদিন পর আবার আমাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে বাসায় রেখে এসেছে।

জয়পুরহাট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের বিষয়ে জেলা সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের সভাপতি মো. নূর ই আলম হোসেন বলেন, এমন চিত্র দেশের যে কয়েকটি সরকারি হাসপাতালে দেখা যায়, তার একটি এ কেন্দ্রটি। এখানে সেবার মান এতো ভালো যে প্রশংসা না করে থাকা যায় না।  

হাসপাতালের পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকা জ্যোতি ও এটেনডেন্ট নার্স সাবিরা সুলতানা জানান, সারা দেশেই যেখানে সিজারিয়ান প্রসব বাড়ছে, সেখানে জয়পুরহাট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র গর্ভবতী মা ও তার পরিবারকে স্বাভাবিক সন্তান জন্মদানে উৎসাহিত করে। এছাড়া এখানে ভর্তির ২৪ ঘণ্টাই মা ও শিশুকে বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া হয়।

জয়পুরহাট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের মেডিক্যাল অফিসার (ক্লিনিক) ডা. শাহানা পারভীন বলেন, হাসপাতালে শিশুদের টিকা দেওয়া, প্রজনন, পরিবার পরিকল্পনা পরামর্শ, সন্তান প্রসব এবং বিনামূল্যে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস দেওয়া হয়ে থাকে। এছাড়া আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল মায়েদের অটোমেশনের মাধ্যমে মোবাইল ফোনে ম্যাসেজ কিংবা কল করে ডেকে এনে সেবা দেওয়া হয়।

আর জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক ডা. কেএম জোবায়ের গালিব বলেন, জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে যে সব মা আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল, তাদের মোবাইল ফোনে কল করে কিংবা এসএমএস দিয়ে ডেকে এনে আমরা নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে থাকি। সরকারের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী মাতৃমৃত্যু রোধে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে এ কেন্দ্রটি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৯ ঘণ্টা, মে ০৩, ২০২৩
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।