ঢাকা: ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে প্রতিদিন ডেঙ্গু পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ছেই। গত এক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালের বহির্বিভাগের পাশাপাশি সব মিলে চার থেকে পাঁচশ জনের ডেঙ্গু পরীক্ষা করা হচ্ছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নতুন করে ভর্তি হয়েছেন ৬৭ জন। সর্বমোট হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ২৩৩ ডেঙ্গুরোগী।
বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) হাসপাতালে নতুন ভবনে গিয়ে দেখা যায় ষষ্ঠ তলা থেকে অষ্টম তলা পর্যন্ত সাধারণ রোগীর পাশাপাশি ডেঙ্গু আক্রান্তদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আলাদাভাবে ডেঙ্গুরোগীদের জন্য কোনো কর্নার না করলেও দায়িত্বরত নার্সরা ডেঙ্গুরোগীদের বিশেষভাবে নজর রাখছেন। একই রুমে সাধারণ রোগীদের পাশাপাশি ডেঙ্গুরোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন।
হাসপাতালের নতুন ভবনে ৮০১ নম্বর ওয়ার্ডেও দেখা যায় ডেঙ্গুরোগীরা সাধারণ রোগীদের পাশাপাশি চিকিৎসা নিচ্ছে।
ঢাকার কামরাঙ্গীরচর থেকে গত তিনদিন আগে শামসুন্নাহার নামে এক নারী ওই ওয়ার্ডে ভর্তি হন। তিনি পাঁচ থেকে ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা।
তিনি জানান, তার শরীর খুবই দুর্বল। তবে হাসপাতালের সবাই তার দিকে লক্ষ্য রাখছে। তবে তার শারীরিক তেমন কোনো সমস্যা নেই।
হাসপাতালের ৮০১ নম্বর ওয়ার্ডের ইনচার্জ সিনিয়র স্টাফ নার্স নাসরিন হোসেন বাংলানিউজকে জানান, খাদিজা নামে আরও এক অন্তঃসত্ত্বা নারীকে আজ সকালে ওই ভবনের পাঁচ তলায় আইসিইউতে পাঠানো হয়েছে। তার শ্বাসকষ্ট হচ্ছিলো। চিকিৎসকের নির্দেশে তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ওই ওয়ার্ডে ১৮ জন ডেঙ্গুরোগী ভর্তি রয়েছেন। তবে আলাদাভাবে ডেঙ্গু কর্নার খোলা না থাকলেও সাধারণ রোগীদের সঙ্গে তারা চিকিৎসা নিচ্ছেন। রোগীদের প্রচুর চাপ থাকা সত্ত্বেও ডেঙ্গুরোগীদের দিকে বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে।
তিনি জানান, ডেঙ্গুরোগীদের হাসপাতাল থেকে মশারি দেওয়া হচ্ছে। অনেকে মশারি টানাতে চায় না। আবার কেউ কেউ একটু সুস্থ হলেই না বলে ফাইলপত্র নিয়ে হাসপাতাল থেকে চলে যায় নিজের ইচ্ছায়।
এছাড়া নতুন ভবনের দ্বিতীয় তলায় প্যাথলজি বিভাগের প্রবেশ পথে দেখা যায়, ডেঙ্গু পরীক্ষার টাকা জমা দেওয়ার জন্য ব্যাংকের সামনে দীর্ঘ লাইন। সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা এক রোগীর স্বজন আবুল জানান, ব্যাংকের দুই পাশে নারী ও পুরুষের আলাদা লাইন। আমার এক আত্মীয়র জ্বর হয়েছে। চিকিৎসক ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে বলেছেন। তাই ডেঙ্গু পরীক্ষার টাকা জমা দিতে লাইনে দাঁড়িয়েছি।
ঢামেক হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল প্যাথলজি বিভাগের প্রধান ডা. আজিজ আহমেদ খান বাংলানিউজকে বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে ডেঙ্গু পরীক্ষার রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ জন রোগী আসছে ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য। এদের মধ্যে থেকে ডেঙ্গু পজিটিভ রোগী পাওয়া যাচ্ছে।
সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বল্প মূল্যে আমাদের এখানে সিবিসি, ডেঙ্গু শনাক্তের জন্য এনএসওয়ান ও আইজিজি/আইজিএম পরীক্ষা করা হয়। রাত-দিন ২৪ ঘণ্টায় প্যাথলজি বিভাগ খোলা থাকে। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক এর সার্বিক সহযোগিতার পাশাপাশি সব বিষয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে নজরদারি করা হচ্ছে। আমাদের এখানে কোনো কিছুর ঘাটতি নেই। পর্যাপ্ত কিট ও টিউব রয়েছে। এছাড়া প্যাথলজি বিভাগে দৈনিক মজুরিতে নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের ছাড়া এখানে ১২ জন চিকিৎসক ১৪ জন টেকনোলজিস্ট ও ১০ জন এমএলএসএস শিফটিং ভিত্তিতে রাত ও দিন ২৪ ঘণ্টা কাজ করছেন।
ডা. আজিজ আহমেদ আরও বলেন, সরকারের পাশাপাশি ঘরে ঘরে সবাইকে ডেঙ্গু রোধে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। যেখানে মশার লার্ভার সম্ভাবনা সেগুলো ধ্বংস করতে হবে। কোথাও পানি জমতে দেওয়া যাবে না। আশা করি সবার সম্মিলিত উদ্যোগে ডেঙ্গু মোকাবিলা সম্ভব।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিদিন বাড়ছে ডেঙ্গুরোগী। আমাদের হাসপাতালে রোগীর তুলনায় বেড সংখ্যা সীমিত। এরমধ্যে ডেঙ্গুরোগীর বাড়তি চাপ। তবে ডাক্টর ও নার্সদের সহযোগিতায় রোগীরা ভালো চিকিৎসা পাচ্ছেন। ডেঙ্গুরোগীদের জন্য আলাদা ডেঙ্গু কর্নার খোলা হয়নি। সেরকম কোনো সমস্যা হলে ডেঙ্গু কর্নার খোলা হবে। তবে প্রতিটি ইউনিটেই কর্নার করা হয়েছে। জায়গা স্বল্পতার কারণে অনেক সময় হয়ে উঠে না।
তিনি বলেন, ঘরে ঘরে ডেঙ্গু হচ্ছে। আমাদের আগে ব্যক্তিগতভাবে সচেতন হতে হবে। সচেতন না হলে ডেঙ্গু আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে যাবে। যার যার এলাকা বাড়ি-ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। মানুষকে সচেতন হতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
এদিকে হাসপাতালের এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, গত জুন মাসে সর্বমোট ডেঙ্গুরোগী চিকিৎসা নিয়েছে ৫৮৫ জন। অথচ ২০ জুলাই মাসেই এ পর্যন্ত ডেঙ্গুরোগী চিকিৎসা নিয়েছে ৯৭৫ জন। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দু’জন মারা গেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩০ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০২৩
এজেডএস/আরআইএস