ঢাকা: ক্ষমতায় থাকলে এক সপ্তাহের মধ্যে দেশের অর্ধেক ডেঙ্গু কমাতে পারবে বলে মনে করেছেন গাইবান্ধা-১ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী।
তিনি বলেন, আমাকে যদি দায়িত্ব দেন তাহলে আমি মনে করি এক সপ্তাহের মধ্যে আমি দেশের অর্ধেক ডেঙ্গু কমিয়ে দেব।
সোমবার (২৪ জুলাই) ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে 'পানি, স্যানিটেশন ও জলবায়ু পরিবর্তনে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব এবং করনীয়' শীর্ষ এক গোলটেবিল আলোচনায় এসব কথা বলেন তিনি।
গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অব দ্য রুরাল পুওর- ডরপ এবং ঢাকা ইন্টারনেশনাল ইউনিভার্সিটি।
ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, যে কোনো বিষয়েরই সহজ সমাধান করা যায় কিন্তু আমরা কেউই এটি করি না। বর্তমানে বাংলাদেশ ডেঙ্গুর রেড জোনে অবস্থায় আছে। ডাক্তাররাও হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে দুইজন মেয়র কতটা সচেতন সেটি আসলে বলতে পারি না। তবে সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, যখন ডেঙ্গু বেড়ে যায় তখন এক মেয়র বলেন মশা অন্য সিটি থেকে আসছে। আর অন্য মেয়র বলেন মশা তাদের এখানে নেই অন্য জায়গা থেকে আসছে। তবে যৌথভাবে কাজ করলে কিভাবে মশা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে এ বিষয়ে কেউ কখনো নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করেন না। কথায় আছে মশা মারতে কামান লাগে না। কোনো এক সময় মশা মারতে কামান লেগেছিল বলে এ প্রবাদ প্রচলিত আছে।
তিনি বলেন, আমি মনে করি ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন আছে। পাশাপাশি ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে বিজ্ঞান ভিত্তিক সাধানেরও প্রয়োজন আছে। একই সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তারা সমালোচনা সহ্য করে হলেও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন সেমিনারে অংশগ্রহণ করা উচিত। তা না হলে এসি রুমে বসে কখনো দেশের সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হবে না। এর জন্য সবার সঙ্গে মিলে মিশে কাজ কাজ করতে হবে।
গোলটেবিল আলোচনার এ সময় বিষয় ভিত্তিক আলোচনায় সিপিআরডি প্রধান নির্বাহী মো শামসুদ্দোহা বলেন, ডেঙ্গু বাড়ার সঙ্গে জলবায়ুর পরিবর্তন অনেক অংশে জড়িত। বর্তমানে দেখা গেছে উষ্ণ আবহাওয়ায় ডেঙ্গুর প্রজনন হার বাড়ে। এর সঙ্গে জমে থাকা পানি ডেঙ্গুর বিস্তারে সহযোগিতা করে। তাই বলা যায় পানি, স্যানিটাইজেশন এবং জলবায়ু পরিবর্তন সব কিছু মিলেই বর্তমানে ডেঙ্গুর প্রভাব বাড়ছে। এগুলো ঠিক করা ছাড়া ডেঙ্গুর প্রভাব কমানো যাবে না। পাশাপাশি ডেঙ্গুর প্রভাব কমাতে চাইলে আমাদের করণীয় হচ্ছে যতটা পরিকল্পিতভাবে আমরা আমরা পানি ও স্যানিটাইজেশন ব্যবহারের ব্যবস্থা নিব ডেঙ্গুর প্রভাব তত কমবে। বর্তমানে ডেঙ্গু আমাদের মাঝে দুর্যোগ আকারে দেখা দিয়েছে।
বিষয় ভিত্তিক আলোচনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিডিসি বিভাগের সাবেক প্রধান কীটতত্ববিদ মো. খলিলুর রহমান বলেন, আমাদের দেশে বর্তমানে প্রথম প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে ডেঙ্গুর প্রতি। ২০০০ সালে বাংলাদেশে প্রথম ডেঙ্গুর প্রভাব দেখা দেয়। বর্তমানে এ ডেঙ্গু অনেক বেশি জটিল আকার ধারণ করেছে। ফলে অভিজ্ঞ ডাক্তাররাও ডেঙ্গুর লক্ষণ সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাচ্ছে না। যদিও আমাদের দেশ থেকে ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছি। দেশে বর্তমানে ম্যালেরিয়া নেই বললেই চলে।
তিনি বলেন, এডিস মশা সাধারণত ৩৩ বা ৩৪ ডিগ্রি তাপমাত্রায় এত বেশি বংশ বিস্তার করতে পারে না। কিন্তু ইদানিং তাপমাত্রা ৩৭ বা ৩৮ ডিগ্রিতে পৌঁছালেও আমরা দেখছি ডেঙ্গুর বিস্তার বাড়ছে। তার মানে ডেঙ্গু এখন উচ্চ তাপমাত্রায়ও অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। এডিস মশা অনেক বেশি বুদ্ধিমান পতঙ্গ। তারা ছোট পাত্রে কম ডিম পারে, বড় পাত্রে যেমন ড্রামে বা চৌবাচ্চায় একসঙ্গে ত্রিশ থেকে চল্লিশ হাজারের বেশি ডিম পাড়ে। এ এডিসের প্রভাব কমাতে হলে নির্দিষ্ট সময়ে ফগিং এবং কার্যকরী কীটনাশক ছিটাতে হবে। পাশাপাশি সলিড ওয়েস্টের ম্যানেজমেন্টও ভালোভাবে করতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বি বলেন, ডেঙ্গু নির্মূল করতে হলে আমাদের এর প্রধান উৎস খুঁজে বের করতে হবে। তাহলেই ডেঙ্গুর প্রভাব কমানো সম্ভব হবে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সরকারকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রণালয়ের উপ-পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখা) ডা. দাউদ আদনান বলেন, এখন আর আগের মত নেই যে ডেঙ্গু শুধু আগস্টে আসে ডিসেম্বরে চলে যায়। বিষয়টি এমন নয় ডেঙ্গু এখন এপ্রিল মে মাসেও হয়। পাশাপাশি তাপমাত্রা বাড়লে মশার কামড়ানোর হারও বেড়ে যায়। মশা তার প্রতি কামড়ে ডেঙ্গুর জীবাণু মানুষে প্রবেশ করায়, আর যে ভাইরাসটা আদের শরীরে দ্রুত সংক্রমণ ঘটায়। যার ফলে ডেঙ্গুর হার দিন দিন বাড়ছে। পাশাপাশি অন্য আরেকটি বিষয় হচ্ছে মশা এখন কামড়ানোর ক্ষেত্রেও অনেক বেশি সিলেকটিভ। যেমন একটি ঘরে যদি কয়েকজন থাকে তখন দেখা যায়, যেকোনো এক বা দুইজনকে মশা বেশি কামড়ায়।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু প্রকোপ বাড়ার পেছনে পরোক্ষভাবে দায়ী হচ্ছেন একজন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগী নিজেই। কারণ তিনি ডেঙ্গু হলে গরমের কারণে মশারির নিচে যেতে চান না। কিন্তু সে রোগী বুঝেন না যে তাকে যদি কোনো স্বাভাবিক মশা কামড়ায় তাহলে সেই মশাও ডেঙ্গু ভাইরাস বহন করবে। পরবর্তীতে সেই মশা ডেঙ্গু বহন করে অন্য জায়গায় ছড়াবে। তাই এ ডেঙ্গুর সাইকেল ভাঙতে হলে আমাদের সচেতন হতে হবে এবং ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগীকে মশারির মধ্যে থাকতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে ডরপ এর নির্বাহী উপদেষ্টা মো আজহার আলী তালুকদার বলেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে সবাইকে সচেতন হতে হবে। যার যার নিজ নিজ বাড়ির আঙিনা পরিষ্কার করলে ডেঙ্গুর বিস্তার অনেকটাই কমানো সম্ভব। তাই সচেতন হওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।
গোলটেবিল আলোচনার সভাপতিত্ব করেন ডরপ এর নির্বাহী উপদেষ্টা মো আজহার আলী তালুকদার।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে বিআইআইএসএস এর গবেষণা পরিচালক মাহফুজ কবীর।
গোলটেবিল আলোচনায় বিষয় ভিত্তিক আলোচনা করেন সিপিআরডি প্রধান নির্বাহী মো শামসুদ্দোহা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিডিসি বিভাগের সাবেক প্রধান কীটতত্ববিদ মো. খলিলুর রহমান।
গোলটেবিল আলোচনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপ-পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখা) ডা. দাউদ আদনান ও বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বি।
বাংলাদেশ সময়:১৫০৪ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০২৩
ইএসএস/জেএইচ