ফেনী: ফেনীতে ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়েছে জ্বর, সর্দি-কাশির মতো ভাইরাসজনিত রোগ। শনাক্ত বেড়েছে ডেঙ্গুর।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, ফেনীতে চলতি মৌসুমে ২৩৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। সম্প্রতি একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্ত করা হয়েছে ৩৫ জন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ফেনী জেনারেল হাসপাতালের ডেঙ্গু কর্নারের স্থান সংকুলান না হওয়ায় তাদের মেডিসিন বিভাগে অন্য রোগীদের সঙ্গে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
ফেনী জেনারেল হাসপাতাল থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণ।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, গত বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) পর্যন্ত জেলায় ২৩৭ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। তন্মধ্যে চলতি মাসেই আক্রান্ত হয়েছেন ২১৩ জন। হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ১২৭ জন।
ফেনী জেনারেল হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, মেডিসিন বিভাগের পুরুষ ও মহিলা বেডের পশ্চিম দিকে দেয়ালে স্টিকার সাঁটিয়ে একটি ডেঙ্গু কর্নার স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে মশারি টাঙিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে আক্রান্তদের। আক্রান্তদের অনেকেই ঢাকা-চট্টগ্রাম বা জেলার বাইর থেকে সংক্রমিত হয়ে এসেছেন। তবে এখন পর্যন্ত এ রোগে আক্রান্ত হয়ে কারও মৃত্যু হয়নি।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর স্বজনরা বলছেন, হাসপাতালে ভর্তির পর তারা কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না। ওষুধ ও স্যালাইন কিনতে হচ্ছে বাইর থেকে।
আফসানা বেগম নামে একজন জানান, তিনি তার স্বামীকে নিয়ে গত চারদিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি। এ চারদিনে তাদের হাসপাতাল থেকে মাত্র একটি স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। বাকি সব ওষুধ কিনতে হয়েছে বাইর থেকে।
জহির হোসেন নামে আরেকজন জানান, সারা দিনে হাসপাতালে ডাক্তার আসেন মাত্র একবার। রোগীর চাপের কারণে তাও যত্ন সহকারে দেখতে পারেন না। বাকি সব সময় নার্সদের ওপর নির্ভর করেই চিকিৎসা নিতে হয়। কিছু সময় নার্সদের সাড়াও মেলে না।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ফেনীতে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ডেঙ্গুরোগী। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। তৎপর রয়েছে চিকিৎসকরা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, আক্রান্তদের মধ্যে ৬৬ জন ইতোমধ্যে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন। বর্তমানে ফেনী জেনারেল হাসপাতালসহ জেলার অন্যান্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আরও ২৬ জন চিকিৎসাধীন। আক্রান্তদের প্রায় সবাই ঢাকা-চট্টগ্রাম বা জেলার বাইর থেকে সংক্রমিত হয়ে এসেছেন। তবে এখন পর্যন্ত এ রোগে আক্রান্ত হয়ে কারও মৃত্যু হয়নি।
আগামী রোববারের (৩০ জুলাই) মধ্যে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর জন্য আলাদা করে ওয়ার্ড স্থাপন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. শিহাব উদ্দিন।
তিনি জানান, হাসপাতালের নতুন ভবনে ৩০ শয্যা বিশিষ্ট ডেঙ্গু ওয়ার্ড চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ ব্যাপারে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের সঙ্গে কথা হয়েছে।
ডেঙ্গু আক্রান্তদের চিকিৎসার বিষয়ে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কাজ করছে উল্লেখ করে সিভিল সার্জন বলেন, আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য সব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ফেনী জেনারেল হাসপাতালে মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য পৃথক শয্যার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (আরএমও) বলেন, হাসপাতালের নতুন ভবনে পৃথক ডেঙ্গু ওয়ার্ডের জন্য একটি মেডিকেল দল গঠন করা হয়েছে। ডেঙ্গুরোগীদের সেবায় তারা সার্বক্ষণিক দেখভাল করবেন। ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে হাসপাতালে ডেঙ্গু টেস্ট করার পরামর্শ দেন তিনি।
জেলা সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডাক্তার আসিফ উদ-দৌলা সিফাত বলেন, ডেঙ্গুরোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য বিভাগ তৎপর রয়েছে। রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য বাড়ানো হয়েছে ডাক্তার। উপজেলা থেকে চারজন ডাক্তার এনে সংযুক্ত করা হয়েছে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে।
এদিকে ডেঙ্গু সচেতনতা নিয়ে ফেনী পৌরসভার পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। পৌর মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী জানান, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পৌর এলাকায় মাইকিং ও ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। জনসচেতনতায় করা হবে র্যালি। যাতে অংশগ্রহণ করবে কয়েক হাজার মানুষ। নিয়মিত ছিটানো হচ্ছে মশার ওষুধ।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৭ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০২৩
এসএইচডি/আরবি