ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার ৫০০ রোগীকে নিখরচায় চক্ষু চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) উপজেলার বাদৈর ইউনিয়নের মান্দারপুর গ্রামের মা আমেনা গফুর চেরিটেবল হাসপাতাল ও বসুন্ধরা আই হসপিটালের যৌথ উদ্যোগে বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসা রোগীদের দিনব্যাপী চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়।
বসুন্ধরা আই হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সিনিয়র চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. মজুমদার গোলাম রাব্বী, অপটোমেট্রিস্ট রুবেল রানাসহ ছয়জনের একটি দল সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত রোগী দেখে।
ভিশন কেয়ার ফাউন্ডেশনের মানবসম্পদ বিভাগের সহকারী ব্যবস্থাপক মো. আবু তৈয়ব জানান, ৫০০ রোগীর নাম আগে থেকেই লিপিবদ্ধ করা ছিল। মঙ্গলবার প্রায় ৮৬ জন রোগীকে ছানি অপারেশনের জন্য বাছাই করা হয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে অনেককে ব্যবস্থাপত্রের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া হয়েছে। বাছাই করা রোগীদের নিখরচায় অস্ত্রোপচার (অপারেশন) করবে বসুন্ধরা আই হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট।
এসময় সেখানে মান্দারপুর গ্রামের মো. শাহ আলম সরকার স্মরণে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন খাড়েরা শিক্ষাকল্যাণ ফাউন্ডেশনের সভাপতি সেলিম মাস্টার। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকাস্থ কসবা উপজেলা সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম. এ কাইয়ূম সরকার, মান্দারপুর সরকারি বাড়ি তরুণ সংঘের উপদেষ্টা কাউসার সরকার, সংগঠনটির সভাপতি মো. ইসহাক সরকারসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। এ উপলক্ষে এ চক্ষুসেবার আয়োজন করা হয়।
মান্দারপুরের পার্শ্ববর্তী খাড়েরা গ্রাম থেকে চিকিৎসা নিতে আসা পারুল আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, আমার স্বামী কৃষি কাজ করে। কোনো রকমে সংসার চলে। গত দুই বছর ধরে দুই চোখে কম দেখছি। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছিলাম না। আজ বসুন্ধরা চক্ষু হাসপাতালের ডাক্তাররা আমাদের গ্রামে আসায় ফ্রিতে চিকিৎসা করাতে পারছি। এখন আমাকে ঢাকায় নিয়ে নিখরচায় চোখের ছানি অপারেশন করে দেবে। এতে আমার অনেক উপকার হলো।
নিবরা গ্রামের অটোরিকশাচালক আব্দুল হামিদ মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, চার বছর আগে সন্ধ্যায় অটোরিকশা নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে কয়েকজন ছিনতাইকারী আমার চোখে কিল-ঘুষি মারে। এরপর থেকে চোখে ঝাপসা দেখি। মাস তিনেক আগে ঢাকা আগারগাঁওয়ের একটি বেসরকারি চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে ওরা আমাকে প্রচুর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করায়। ওরা আমার অনেক টাকা খরচ করাইছে। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। আজ মান্দারপুর গ্রামে বসুন্ধরা চক্ষু হাসপাতালের ডাক্তাররা আমাকে ফ্রিতে চিকিৎসা দিয়েছে। ছানি অপারেশনের জন্য তারা আমাকে বাছাই করেছে। ঢাকায় নিয়ে নিখরচায় অপারেশন করে দেবে। এতে আমার মতো হতদরিদ্রের অনেক উপকার হবে।
অন্যের সাহায্য নিয়ে লাঠিতে ভর করে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন বৃদ্ধ বারেক মিয়া। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, টাকার অভাবে আমার চোখের চিকিৎসাই হতো না। নিজের গ্রামে বসুন্ধরা চক্ষু হাসপাতালের কারণে ফ্রিতে চোখের চিকিৎসা পাইছি। এ সেবা সব সময় দিলে গ্রাম পর্যায়ে আমাদের মতো অনেক দরিদ্র লোকের উপকার হবে।
মান্দারপুর গ্রামে স্থাপিত হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ও ফ্রি চক্ষু চিকিৎসার সার্বিক আয়োজক এম. এ কাইয়ূম সরকার বাংলানিউজকে বলেন, আমরা বছরে কয়েকবার সংগঠনের পক্ষ থেকে ফ্রি চক্ষু চিকিৎসার আয়োজন করে থাকি। এক্ষেত্রে আমাদের সবচেয়ে বড় সহায়তাটি করে থাকে ঢাকার বসুন্ধরা চক্ষু হাসপাতাল। বসুন্ধরা এভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় বলে দরিদ্র মানুষেরা তাদের চোখের ছানি ও রেটিনা অপারেশন করাসহ নানা চক্ষু চিকিৎসাসেবা ঘরে বসেই পাচ্ছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০২৩
এসআই