ঢাকা: ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) ভুল চিকিৎসার অভিযোগে চিকিৎসককে মারধরের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আবারও কর্মবিরতিতে গেছেন চিকিৎসকরা।
গতরাতে (শনিবার) ঢামেকের জরুরি বিভাগে ভাঙচুর ও চিকিৎসকদের হত্যার হুমকির প্রতিবাদে এ কর্মবিরতি চলছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
এই কর্মবিরতির কারণে নিয়ম অনুযায়ী, সকাল থেকে অপেক্ষায় থাকা রোগীদের অস্ত্রোপচার কক্ষের সামনে থেকে ওয়ার্ডে ফিরে যেতে দেখা যায়।
এছাড়া কোনো চিকিৎসা না পেয়ে মুমূর্ষু ও অন্তঃসত্ত্বা রোগীদের অন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেখা যায় তাদের স্বজনদের।
এদিকে এক সূত্র দাবি করেন, চিকিৎসকদের ধর্মঘটে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন হাসপাতালের নার্স ও অনেক কর্মচারী।
রোববার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুর দিকে হাসপাতাল পুরাতন ভবনে ঘুরে ঘুরে এসব চিত্র দেখা যায়।
জরুরি বিভাগে লক্ষ্য করা যায়, গুরুতর আহত রোগীদের কোনো চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। নেই কোনো ডাক্তার। তালা ঝুলছে ডাক্তারের কক্ষে, টিকিট কাউন্টারেও তালা ঝুলছে, অবজারভেশন ওয়ার্ড ৭ নম্বর কক্ষের বাতি নেভানো, দরজাও বন্ধ। এ সময় দেখা যায় অনেক রোগী চিকিৎসার জন্য জরুরি বিভাগে প্রবেশ করছে কিন্তু টিকিট পাচ্ছে না।
হাসপাতালের পুরাতন ভবনের তৃতীয় তলায় জেনারেল ওটিতে গিয়েও মিলল একই স্থবিরতা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খুব সকালে দু-একজন রোগীর অস্ত্রোপচার করা হলেও এরপর অস্ত্রোপচার বন্ধ ঘোষণা করা হয় জেনারেল ওটিতে। এই কারণে সেখানে অপেক্ষায় থাকা রোগীরা এক এক করে ওয়ার্ডের দিকে ফিরে যান। প্রতিদিনের মতো বেশ কয়েকজন রোগী চিকিৎসকের আগের নির্দেশ অনুযায়ী গতকাল রাত থেকেই না খেয়ে ওটির সামনে সকাল থেকে অবস্থান করেন অস্ত্রোপচারের জন্য। অবশেষে তাদের ফিরে যেতে হয় চিকিৎসকদের কর্মবিরতির কারণে।
গাজীপুর থেকে সাইমন আক্তার (২২) আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক নারীকে নিয়ে হাসপাতালে প্রবেশ করেন তার স্বজনরা। প্রবেশ করে তারা ভোগান্তিতে পড়েন। কোনো চিকিৎসাসেবাই পাননি তারা।
একপর্যায়ে সাইমন আক্তারকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়। এই অন্তঃসত্ত্বাকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় একটি ট্রলিও পাননি তার স্বজনরা। কোলে করে নিয়েই তারা ঢামেক ত্যাগ করেন।
হাসপাতালে পুরাতন ভবনের তৃতীয় তলায় জেনারেল ওটির সামনে নিয়মমাফিক অস্ত্রোপচারের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থেকেছেন বৃদ্ধ মোহাম্মদ হোসেন (৬০)। লাভ হয়নি তাতে। তাকেও ফিরে যেতে হয় চিকিৎসকদের কর্মবিরতির কারণে।
রোগীর মেয়ে জাহানারা জানান, ১৫ দিন আগে মাথায় সমস্যাজনিত কারণে বাবাকে ২০০ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করি। আজ ছিল অপারেশনের ডেট। চিকিৎসকদের পরামর্শে খুব সকালে বাবাকে অস্ত্রোপচারকক্ষে আনা হয়। সেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষার পর জানতে পারি আজকে আর কোনো অপারেশন করা হবে না। তাই বাবাকে ওয়ার্ডে নিয়ে যাচ্ছি।
শুধু জরুরি বিভাগ ও জেনারেল ওটিই নয়; হাসপাতালের সার্জারি ওটিসহ সব চিকিৎসা বন্ধ।
হাসপাতালের বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, সকালের দিকে কয়েকজন রোগী চিকিৎসা পেলেও দুপুরের পরে কেউ চিকিৎসা পায়নি।
ক্যাজুয়ালিটি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সুবিনয় কৃষ্ণ পাল বলেন, আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া। রোগীদের নিয়েই আমাদের কাজ। কোনো মুমূর্ষু রোগী চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল থেকে যখন সুস্থ হয়ে বাড়ি যায় তখন রোগীদের পরিবার-স্বজনদের মতোই আনন্দ লাগে চিকিৎসকদের। চিকিৎসকরা শপথ নিয়ে এই পেশায় এসেছেন যে, রোগীদের বাঁচানোই চিকিৎসকদের ধর্ম । অথচ গতকাল চিকিৎসকদের মারধর করা হয়েছে। তাদের টেনেহিঁচড়ে নেওয়া হয়েছে। আবার রাতেও জরুরি বিভাগে ভাঙচুর করা হয়েছে। চিকিৎসকদের হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। এসব তো কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। শুধু আমাদের নিরাপত্তা নয়; রোগীদেরও নিরাপত্তার একটি বিষয় আছে। গতকাল তো রোগীদেরও মারধর করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১, ২০২৪
এজেডএস/এসএএইচ