ঢাকা: পাঁচ বছর আগে বিশ্বজুড়ে ভয়াবহ রূপ নেওয়া করোনাভাইরাস ফের নতুন রূপে ফিরে আসছে। দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় বাংলাদেশে বাড়তি সতর্কতা জোরদার করা হয়েছে।
সম্প্রতি দেশে আবারও নতুন করে বাড়তে শুরু করেছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। করোনাভাইরাসের নতুন একটি ধরন শনাক্ত হওয়ায় এবং করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার ফলে জনমনে উদ্বেগ বাড়ছে।
রোববার (৮ জুন) গত ২৪ ঘণ্টায় চারজনের নমুনা পরীক্ষায় তিনজনের দেহে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তবে এই সময়ে করোনায় কারও প্রাণহানি হয়নি। দেশে এখন পর্যন্ত মোট করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ২০ লাখ ৫১ হাজার ৭৪২ জন।
এর আগে দীর্ঘদিন পর বৃহস্পতিবার (৫ জুন) দেশে নতুন করে করোনায় একজনের মৃত্যু হয়েছিল। দেশে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে মোট ২৯ হাজার ৫০০ জন।
রোববার (৮ জুন) স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক এক বিশেষ বার্তায় বলা হয়, বিশ্বের বেশ কিছু দেশে কোভিড-১৯ এর নতুন ভ্যারিয়েন্ট জেএন.১ এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এমতাবস্থায় উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে যেমন হাসপাতাল/চিকিৎসা কেন্দ্র এবং উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের সতর্ক হিসেবে মাস্ক ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হলো।
উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের চতুর্থ ডোজ ভ্যাকসিন নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হলো। । সার্জারি অথবা অন্য কোন রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে কেবল মাত্র কোভিড-১৯ লক্ষণ/উপসর্গ থাকলে কেভিড-১৯ পরীক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হলো।
চিকিৎসক এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার নতুন একটি ধরন সংক্রমণ বাড়াচ্ছে। নতুন এই ধরনটির সংক্রামিত করার ক্ষমতা অনেক বেশি হলেও রোগেও তীব্রতা কম। তবে অসাবধানতা এবং অচেতনতায় ধরনটি যে কোনো সময় শক্তিশালীও হয়ে উঠতে পারে। তাই আমাদের সবাইকেই যথেষ্ট সাবধান এবং সচেতন থাকতে হবে।
গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে নতুন করে ৩৭৮ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর ফলে দেশটিতে বর্তমান সময়ে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছয় হাজার ১৩৩ জনে পৌঁছেছে। একই সময়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে।
প্রতিবেশী দেশ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে আবারও নতুন করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেওয়ায় বাংলাদেশ সরকার সব স্থল, নৌ এবং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কড়া স্ক্রিনিংসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়েছে।
করোনা পরিস্থিতি বিষয়ে হেলথ অ্যান্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, করোনা বা কোভিড১৯ আবার বাড়তে শুরু করেছে। ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়া, ভাইরাসজনিত জ্বর, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণজনিত জ্বর, পানিবাহিত সংক্রমণজনিত জ্বর (যেমন টাইফয়েড) ইত্যাদি চলমান রয়েছে। এগুলোর সাথে করোনা যুক্ত হওয়াতে ভোগান্তি ও জীবনহানির সম্ভাবনা বেড়ে গেল।
তিনি আরও বলেন, আমাদের পাশের দেশ ভারতে করোনা সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে। করোনা ওমিক্রন ধরনের কয়েকটি উপধরন দ্বারা এবার সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। এই উপধরনগুলোর ছড়িয়ে পড়া বা মানুষকে আক্রান্ত করার ক্ষমতা বেশি। তবে রোগের তীব্রতা তৈরির ক্ষমতা অপেক্ষাকৃত কম। তবে যে কোনো সময় এই চরিত্রের পরিবর্তন হতে পারে। বয়স্ক মানুষ, দীর্ঘমেয়াদি জটিল রোগে আক্রান্ত মানুষ, শিশু, গর্ভবতী নারী এবং নানা কারণে যাদের শরীরের রোগপ্রতিরোধ শক্তি কম তারাই বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
এ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, জনাকীর্ণ স্থানে অবশ্যই মাস্ক পড়তে হবে। জ্বর হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। দ্রুত সুস্থ হওয়ার জন্য জ্বরের ধরণটি শনাক্ত হওয়া জরুরি। স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব করোনাসহ সব ধরনের জ্বরকে নিবিড় নজরদারিতে রাখা এবং জনসাধারণকে সময়ে সময়ে গাইড করা।
ডা. লেলিন বলেন, করোনা জ্বর নিয়ে ফেসবুক বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু মানুষ আতঙ্ক ছড়াছে এসব গুজবে কান দেওয়ার দরকার নেই। এখনও দেশে করোনা বিষয়ে আতঙ্কিত হওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।
আরকেআর/এএটি