ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

রমজানে ওষুধের ব্যবহার

মোঃ আরিফুর রহমান ফাহিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৪ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০১৩
রমজানে ওষুধের ব্যবহার

ঢাকা: প্রত্যেক মুমিন মুসলমান পবিত্র মাসে রোজা পালন করেন। কিছু কিছু জটিল রোগ ব্যতীত রোজা ভঙ্গের কোন যৌক্তিক কারণ নেই।

তবে রমজানে কিছু কিছু ক্ষেত্রে যেমন, ডায়াবেটিস, আলসার বা গ্যাস্ট্রিক, অ্যাজমা, হার্ট ডিজিজ, উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের নিয়মিত ওষুধ সেবনের প্রয়োজন হয়। এসব রোগীরা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তাদের ওষুধের সেবনবিধি রমজান মাসে ঠিক করে নিতে পারেন। এতে রোজা ভাঙ্গার বা রোজা থেকে বিরত থাকার কোন প্রয়োজন হয় না।

রোজায় রোগীদের চিকিৎসা নিয়ে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য দূর করা এবং একটি মান নির্ধারণের জন্য ১৯৯৭ সালের জুনে মরক্কোতে অনুষ্ঠিত নবম ফিকাহ-চিকিৎসা সম্মেলনে ‘অ্যান ইসলামিক ভিউ অব সার্টেইন কনটেম্পোরারি মেডিকেল ইস্যুজ’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করা হয়। কোন কোন ওষুধ-সরঞ্জাম ও কর্মকাণ্ড রোজা নষ্ট করে, তা ছিল ওই সেমিনারের অন্যতম আলোচ্য বিষয়।

সেমিনারে অংশগ্রহণকারী বিশিষ্ট ইসলামি আইনবিদ ও ধর্মীয় পণ্ডিত, চিকিৎসক, ওষুধবিদ এবং অন্যান্য মানবিক বিশেষজ্ঞরা রোজা রাখা রোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে কিছু বিষয়ে একমত পোষণ করেন। পরবর্তীতে ইসলামিক চিন্তাবিদরা চিকিৎসা বিজ্ঞানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা ও গবেষণা করে রোজা অবস্থায় ওষুধ প্রয়োগ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পর্কে সুচিন্তিত তথ্য উপস্থাপন করেন।

বিখ্যাত ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালে ‘ড্রাগ ইনটেক ডিউরিং রামাদান’ শিরোনামের লেখাটি ২০০৪ সালের ২ অক্টোবর সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। ওই নিবন্ধে বলা হয়, চিকিৎসার প্রয়োজনে ক্রিম, অয়েন্টমেন্ট, ব্যান্ডেজ, প্লাস্টার ইত্যাদি ব্যবহার করলে এবং ওই সব উপাদান ত্বকের গভীরে প্রবেশ করলেও রোজার কোন সমস্যা হবে না। রোজা রেখে দাঁত তোলা যাবে, দাঁতের ফিলিং করা যাবে এবং ড্রিল ব্যবহার করা যাবে। এছাড়া দাঁত পরিষ্কারের সময় অসাবধানবশত কোন কিছু গিলে ফেললে রোজা নষ্ট হবে না। রক্ত পরীক্ষার জন্য রক্ত দেয়া যাবে এবং কাউকে রক্তদানেও কোন বাধা নেই। একই সঙ্গে রক্তগ্রহণ করতেও বাধা নেই। চিকিৎসার জন্য যোনীপথে ট্যাবলেট কিংবা পায়ুপথে সাপোজিটরি ব্যবহার করা যাবে। এমনকি পরীক্ষার জন্য যোনীপথ কিংবা পায়ুপথে চিকিৎসক বা ধাত্রী আঙ্গুল প্রবেশ করালেও রোজা নষ্ট হবে না। পাইলস, ফিস্টুলা, এনাল ফিশার ইত্যাদির ক্ষেত্রে পায়ুপথে ইনজেকশন দেয়া যাবে এবং আঙ্গুল ও যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করা যাবে। রোজা রেখে জরায়ু পরীক্ষার জন্য হিস্টোরোস্কোপি এবং আইইউসিডি ব্যবহার করা যাবে। রোগ নির্ণয়ের জন্য এন্ডোস্কোপি বা গ্যাস্ট্রোস্কোপি করলেও রোজা নষ্ট হয় না। তবে এ এন্ডোস্কোপি বা গ্যাস্ট্রোস্কোপি করার সময় ভেতরে তরল কিংবা অন্য কোন কিছু প্রবেশ করানো যাবে না, যার খাদ্যগুণ রয়েছে। লিভারসহ অন্য কোন অঙ্গের বায়োপসি করা যাবে। পেরিটোনিয়াল কিংবা মেশিনে কিডনি ডায়ালাইসিস করা যাবে। রোজা রাখা অবস্থায় সম্পূর্ণ অজ্ঞান করে রোগীর অপারেশন করলে রোজা নষ্ট হয় না।

ইনজেকশন ও ইনস্যুলিন : ইনজেকশনের কারণে রোজা ভাঙে না। এমনিভাবে একজন রোজাদার ইফতারের আগেও ইনস্যুলিন ইনজেকশন নিতে পারেন। অবশ্য যেসব ইনজেকশন খাদ্যের কাজ দেয় জটিল ওজর ছাড়া তা নিলে রোজা মাকরুহ হবে।

ইনহেলার: বর্তমানে অ্যারোসল জাতীয় বেশকিছু ওষুধ দ্বারা বক্ষব্যাধি, হার্টঅ্যাটাক ও অন্যান্য রোগের চিকিৎসা করানো হয়ে থাকে। গ্যাস জাতীয় এসব ওষুধ রোগীর মুখের ভেতর দিয়ে প্রবেশ করানো হয়। নিম্নে রমজানে এ ওষুধগুলো বর্ণনা করা হলো-

ক) নাইট্রোগ্লিসারিন: অ্যারোসল জাতীয় ওষুধটি হৃদরোগীরা ব্যবহার করে থাকেন। জিহ্বার নিচে ২/৩ ফোঁটা ওষুধ দিয়ে মুখ বন্ধ রাখা হয়। ডাক্তারদের মতে সঙ্গে সঙ্গে ওই ওষুধ শিরার মাধ্যমে রক্তের সঙ্গে মিশে যায়। এ হিসেবে এ ওষুধ ব্যবহার করলে রোজা নষ্ট হবে না।

খ) ভেন্টোলিন ইনহেলার : বক্ষব্যাধির জন্য এ ওষুধ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। রোগীদের মুখের ভেতর এমনভাবে ওষুধটি স্প্রে করতে বলা হয়, যাতে তা সঙ্গে সঙ্গে ভেতরের দিকে চলে যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, খাদ্যনালীর কমনস্পেস (যেখান থেকে দুটি পথ ভিন্ন হয়ে যায়) হয়ে ওষুধটি ফুসফুসে গিয়ে কাজ করে থাকে। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের সচিত্র ব্যাখ্যা থেকে এ কথা সুস্পষ্টভাবে বোঝা গেছে, ওষুধটি স্প্রে করার পর এর কিছু অংশ খাদ্যনালীতেও প্রবেশ করে। সুতরাং এ ধরনের ইনহেলার প্রয়োগের কারণে রোজা নষ্ট হয়ে যাবে।

চিকিৎসকরা বলেছেন, মারাত্মক জটিল রোগী ছাড়া অন্য সবারই সেহরিতে এক ডোজ ইনহেলার নেয়ার পর পরবর্তী ডোজের ক্ষেত্রে ইফতার পর্যন্ত বিলম্ব করার সুযোগ রয়েছে। সুতরাং রোগীর কর্তব্য হল বিষয়টি তার চিকিৎসকের নিকট থেকে বুঝে নেয়া এবং রোজা অবস্থায় তা ব্যবহার না করা।

অবশ্য যদি কোনো রোগীর অবস্থা এত জটিল হয় যে, ডাক্তার তাকে অবশ্যই দিনের বেলাও ওষুধটি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন, তাহলে সে ক্ষেত্রে ওই রোগীর ইনহেলার ব্যবহার করার অবকাশ রয়েছে। পরবর্তী সময় রোজা কাজা করে নিলেই চলবে।

নিবন্ধটির লেখকঃ সহকারী অধ্যাপক, ফার্মেসি বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ।     

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৩ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০১৩
সম্পাদনা: রাইসুল ইসলাম, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।