ঢাকা: দালালদের দৌরাত্ম্য ও চিকিৎসকদের দায়িত্বে অবহেলার কারণে রাজধানীর পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ভোগান্তি বাড়ছে। আর গরিব রোগীদের ক্ষেত্রে ভোগান্তি চরম মাত্রা অতিক্রম করেছে।
মিটফোর্ড হাসপাতালে সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে থাকা ট্রলি দিয়ে ওর্য়াডে পৌঁছানোর জন্য রোগীদের গুণতে হচ্ছে ৫০ থেকে একশ’ টাকা। গরিব রোগীদের ক্ষেত্রে টাকা ছাড়া এ সেবা পাওয়া দুষ্কর। ভোগান্তির এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে হাসপাতালে ভর্তিকৃত অনেক রোগীর কাছ থেকেও।
এক্সরের জন্য ওয়ার্ড বয়দের বিশ টাকা আর টেকনিশিয়ানদের দিতে হচ্ছে পাঁচ টাকা। অন্যান্য সেবার ক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা গেছে।
হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা থাকার পরও ওয়ার্ডে বিভিন্ন ক্লিনিকের প্রতিনিধির উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। এসব প্রতিনিধি রোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে থাকেন।
মেডিসিন বিভাগে ভর্তি আব্দুল হামিদ নামে এক রোগী বলেন, ডাক্তার ডায়াবেটিস পরীক্ষা করতে দিয়েছে। ওয়ার্ডে গ্রিন প্যাথলজির একজন প্রতিনিধির কাছে রক্ত পরীক্ষা করতে দিয়েছি।
পরীক্ষা করাতে বাধ্য করা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হাসপাতালে পরীক্ষার জন্য লাইনে দাঁড়াতে হবে। তাই ওনার কাছে পরীক্ষা করতে দিয়েছি।
দোতলা থেকে পড়ে গিয়ে মারাত্মক জখম হওয়া নির্মাণ শ্রমিক আজিজ মিয়ার কপালে টাকার অভাবে ট্রলি সেবা জোটেনি। সঙ্গে আসা আলাল মিয়া কোলে করে তাকে (আজিজ মিয়া) নিয়ে যান ক্যাজুয়াল ইউনিটে।
আলাল মিয়া বলেন,রোগীর অবস্থা খারাপ দেখেও ওয়ার্ড বয়রা কোনো ট্রলি নিয়ে আসেনি।
এমন চিত্র দেখা যায় খোদেজা বেগমের ক্ষেত্রেও। হাতে সেলাইন লাগানো অবস্থায় তাকে হেঁটে যেতে হয়েছে মেডিসিন বিভাগ পর্যন্ত।
এদিকে, জরুরি বিভাগে হাসপাতালের কর্মচারী ছাড়াও বহিরাগত কর্মচারীদের দৌরাত্ম্য লক্ষ্য করা গেছে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক আয়া অভিযোগ করে বলেন,প্রভাবশালী কর্মচারীদের মাধ্যমে এসব আয়া- বুয়া হাসপাতালে ট্রলি ঠেলছে। আর রোগীদের কাছ থেকে পাওয়া সেলামির অর্ধেক পাচ্ছে ঐ সব কর্মচারী। মঝে মধ্যে বড় স্যার ( হাসপাতাল পরিচালক) এদেরকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। কিন্তু কোনোভাবেই এদের দৌরাত্ম্য বন্ধ হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে হাসপাতাল পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল জাকির হোসেন বলেন,রোগীরা যেন কোনো হয়রানির শিকার না হন, সেজন্য হাসপাতালে সার্বক্ষণিক একটি নম্বর দেওয়া আছে। ভোগান্তির ব্যাপারো কোনো রোগী এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ করে নি। তবে এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।
লোকবল সঙ্কট আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, লোকবল সঙ্কট নেই। তবে সরকারিভাবে ১০% লোকবল ঘাটতি রাখা হয়। এর মধ্যে অনেকেই আবার ছুটিতে আছেন। এজন্য মাঝে মধ্যে লোকবল সঙ্কটে পড়তে হয়।
এদিকে, চিকিৎসকদের দায়িত্ব অবহেলা সম্পর্কে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক প্রদীপ কুমার বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই।
বাংলাদেশ সময়: ০৩৪০ ঘণ্টা,ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৪