ঢাকা: রাজধানীর শিশু হাসপাতালে যেন ভোগান্তির শেষ নেই রোগীদের। মূল গেট দিয়ে ঢোকার পর থেকে শুরু হয় ভোগান্তি।
বহির্বিভাগে প্রথমে টিকিট কাটতে দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করলেও অনেকেই বাড়তি টাকা দিয়ে আগেভাগেই দিব্যি টিকিট কেটে চলে যান। যারা লাইনে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকেন তারা কেবলই যেন দাঁড়িয়েই থাকেন।
টিকিট কেটে ভেতরে প্রবেশ করার পর ডাক্তারের রুমের সামনে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন রোগী ও অভিভাবকরা। কিন্তু কী আর করা! বেশিরভাগ ডাক্তার সাহেবই মোবাইলে কথা বলতে মশগুল। সময় এভাবেই কেটে যায়। এদৃশ্য শনিবার বেলা ১১টায় ঢাকা শিশু হাসপাতালের। কিন্তু এসব বিষয়ে নেই কোনো প্রতিবাদ। এ নিয়ে কথা বললে ডাক্তার সাহেব রাগ করতে পারেন। আর তাতে বিপত্তি বাড়বে বলেই মনে করেন শিশুদের অভিভাবকরা।
শনিবার শিশু হাসপতালের বহির্বিভাগের প্রায় প্রতিটি রুমেরই একই অবস্থা ছিলো। স্থানীয়রা জানান, এটা নতুন কিছু না। এসব অনিয়মের মধ্যেই দিন পার করতে হয় শিশু হাসপাতালের রোগীদের।
ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন নিয়ে বেরিয়ে আসার পর রোগীদের পথ রোধ করে দাঁড়ান ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা। রোগীদের প্রেসক্রিপশন চেক করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেন নিজের কোম্পনির ওষুধের নাম চিকিৎসক দিয়েছেন কিনা। তা দেখাই তাদের ‘দায়িত্ব’। কারণ নির্দিষ্ট ওষুধ কোম্পানির ওষুধ প্রেসক্রিপশনে লেখার বিনিময়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ মাসোহারা পান দায়িত্বরত চিকিৎসকরা--- এমন অভিযোগ করলেন একজন রোগীর অভিভাবক আলমগীর আহমেদ।
আলমগীর আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, আরে ভাই হাসপাতাল কম্পাউন্ডের ভেতরে প্রেসক্রিপশন হাতে নিয়ে হাঁটা যায় না। মিনিমাম ১০ থেকে ১০ জন রিপ্রেজেনটেটিভি এসে ছেঁকে ধরে। খুঁটিয়ে দেখে প্রেসক্রিপশন। তাদের সাথে ডাক্তারদের চুক্তি থাকে। তাছাড়াও ডাক্তাদের নানা প্রকারের উপঢৌকন দেন তারা। আর তাই ডাক্তারাই অনেক সময় নিম্নমানের ওষুধ প্রেসক্রিপশনে লিখতেও দ্বিধাবোধ করেন না।
এসব বিষয়ে ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেনটিটিভদের সাথে কথা বলতে গেলে বলেন, নাম বলব ক্যান। আপনাদের নাম বলে আমাদের লাভ কি। ডাক্তার সাহেবরা আমাদের চেনেন। দুপুর দুইটার পর উনারা আমাদের সাথে কথা বলেন।
শিশু হাসপাতালের বহির্বিভাগে মোট আটজন ডাক্তার পালাক্রমে ডিউটি করেন। শনিবার বহির্বিভাগে ১০৩ নম্বর রুমের দায়িত্বে ছিলেন ডা. সাজেদা ও ডাক্তার শারমীন, ১০৪ নম্বর রুমের দায়িত্বে ছিলেন ডা. অমল, ১০৫ নম্বর রুমের দায়িত্বে ছিলেন ডা. মাহিনুর, ১০৬ নম্বর রুমের দায়িত্বে ছিলেন ডা. নাজমুল ও ডা. কামরুজ্জামান। তাছাড়া বাকিরা হলেন ডা. সুরাইয়া ও ডা. উজ্জল।
এসব বিষয়ে বহির্বিভাগের কোনো ডাক্তারই কথা বলতে রাজি হন নি। তবে রোগীর অভিভাকদের নানা অভিযোগ যেন তুড়ি মেরেই উড়িয়ে দেন শিশু হাসপাতালের ডেপুটি ডিরেক্টর শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. এইচ, এস, কে আলম।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বহির্বিভাগের সামনে কারা আসবেন আর কারা আসবেন না তা আমরা নিয়ন্ত্রণ করার এখতিয়ার রাখি না। তবে রিপ্রেজেনটিভিদের দ্বারা কেউ হয়রানির শিকার হয়ে যদি আমাদের কাছে অভিযোগ করেন তাহলে আমরা ব্যবস্থা নিই। আর এখানকার কোনো ডাক্তারই এমন কোনো ওষুধ প্রেসক্রাইব করেন না যা সরকারের দ্বারা অনুমোদন পায় নি। সরকারের অনুমোদিত ওষুধতো নিম্নমানের হতেই পারে না।
শুধু বহির্বিভাগই নয় হাসপতালের ভেতরে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা এবং তার রিপোর্ট সংগ্রহেও ঝামেলা পোহাতে হয় রোগীদের। রাসেল রহমান বলেন, দুই দিন আগে এসে ভাতিজার কিছু টেস্ট করিয়ে গেলাম তখন পরীক্ষার রুমে গিয়ে না পাই নাই ডাক্তার, না অন্য কাউকে। কী যে অবস্থা। আজ রিপোর্ট নিতে এসে দেখি যিনি রিপোর্ট দেবেন তিনি নেই। কোথায় গেছেন কেউ বলতে পারবে না। প্রায় আধা ঘন্টা ধরে অপেক্ষা করছি।
বেড বা কেবিন পেতেও দালালদের সহায়তা ছাড়া কিছু করা যায় বলে জানান জয় সাহা। বলেন, একা এসে এখানে সিট যখন খুঁজলাম তখন পাই নি। বাইরে চায়ের দোকানে চা খেতে গেলাম একজন এসে বললেন, সিট লাগবে? আমি তো অবাক। বললাম, আপনি সিট দিতে পারবেন!। তিনি বললেন হ্যাঁ, কিন্তু এক হাজার টাকা দিতে হবে। পরে দর কষাকষিতে ৫০০ টাকায় রাজি হোন। ঠিকই সিট ম্যানেজ করে দিলেন।
এভাবে প্রতিদিনই হয়রানির শিকার হচ্ছেন শিশু হাসপতালের রোগী ও অভিভাবকরা। এসব হয়রানি থেকে মুক্তি চান ভুক্তভোগীরা। কিন্তু কে তাদের এসব থেকে মুক্ত করবেন?
১৯৭৪ সালে রাজধানীতে শিশুদের চিকিৎসার জন্য ঢাকা শিশু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়। আজ এই হাসপাতালটিতে শিশুদের হূদরোগের সকল ধরনের সার্জারি চালু হয়েছে, আছে এনজিওগ্রাম ও ডিএনএ পরীক্ষাসহ অত্যাধুনিক পরীক্ষা নিরীক্ষা ও চিকিৎসাসেবার সুযোগ । এভাবে এটি বিশেষায়িত একটি আধুনিক চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে হাসপাতালটির বেড সংখ্যা ৫৮৮টি। এটি একটি পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউট।
রোগীর হাতে মানসিক হাসপাতালের চাবি!
বাংলাদেশ সময়: বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৪