ঢাকা: সিডিউল অনুযায়ী সকাল আটটা থেকেই চিকিৎসক থাকার কথা বিভাগগুলোতে। তবে ওই সময় গিয়ে অনেক বিভাগেই দেখা মিললো না তাদের।
রাজধানীর শেরেবাংলানগর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস ইউরোলজি হাসপাতালে শনিবার সরেজমিনে ঘুরে ধরা পড়ে এ চিত্রই।
সকালে দেখা গেল, হাসপাতালের করিডোরে অবস্থান করছেন এক রোগী ও তার স্বজনরা। দাঁড়িয়ে থাকার কারণ জানতে চাইলে রোগীর ভাই রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বললেন, এক মাস হলো বাইরেই চিকিৎসা করাচ্ছি। কিন্তু অর্থ ফুরিয়ে যাওয়ায় এখন আর পারছি না। এখানকার ডাক্তার রাশেদ আনোয়ার আসতে বলেছিলেন, তাই এসেছি। কিন্তু এখন বলা হচ্ছে সিট নাই, ভর্তিও হবে না। তাই চলে যাচ্ছি।
জানা গেল, হাসপাতালের ইউরোলজি বিভাগে ভর্তি হতে প্রয়োজন হয় সুপারিশেরও।
একই চিত্র হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগের সামনে। সকাল থেকেই বিভিন্ন বিভাগের সামনে লক্ষ্য করা গেছে রোগীদের দীর্ঘ লাইন। অনিবার্য উৎপাত হিসেবে আছে দালাল চক্রের উপস্থিতি। দালাল চক্রকে ৫শ’ টাকা দিলেই সিট পাওয়া যায় বলে বাংলানিউজকে জানালেন কয়েকজন রোগী।
তবে কর্তৃপক্ষের দাবি চিকিৎসকরা হাসপাতালেই আছেন। কিন্তু কে কোথায় আছেন তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি কেউই।
হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. মো. নিজাম উদ্দিন চৌধুরীর ২০৭ নম্বর রুমের সামনে গিয়ে তাকে পাওয়া গেল না। পরে জানা গেল, এক মাস আগেই তিনি প্রমোশন নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চলে গেছেন। অথচ এখনও বরাদ্দকৃত রুমটিতে তার নামফলক ঝুলছে।
একই বিভাগের দুই সহকারী অধ্যাপকের রুমেও তালাবদ্ধ। জানা গেল তারা এখনও এই হাসপাতালেই কর্মরত। অথচ শনিবার দিনের মধ্যে একবারও তাদের দেখা মেলেনি। এ দুজন হলেন ডা. মো. আনোয়ারুল হক ফরাজী ও মো. রাশেদ আনোয়ার। এদের মধ্যে রাশেদ আনোয়ারের রুম দীর্ঘ দিন ধরেই তালাবদ্ধ রয়েছে বলে এক কর্মচারী বাংলানিউজকে জানিয়েছেন। অথচ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হাজিরা খাতা অনুযায়ী তারা দুজনই ডিউটিতে রয়েছেন।
নিউরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. দেলোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে জানান, তার বিভাগে মোট ছয়জন চিকিৎসক ডিউটিতে আছেন। তবে কথার সঙ্গে বাস্তবতার মিল পাওয়া যায়নি। বাংলানিউজের অনুসন্ধানে দেখা গেছে বিভাগীয় প্রধানসহ মাত্র তিনজন ডিউটিতে রয়েছেন। বাকিরা কোথায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবাই এসেছিলেন, বাইরে হয়তো কোথাও গেছেন।
জাতীয় কিডনি ও ইউরোলজি ইনস্টিটিউট হাসপাতালে মোট ১০টি ওয়ার্ডে ১৫০টি শয্যা রয়েছে। এর মধ্যে শিশুদের দু’টি, নারী তিনটি, পুরুষদের চারটি ও জরুরি বিভাগ একটি।
সরকারি এই হাসপাতালে রক্ত সঞ্চালন বিভাগে সরকারিভাগে রক্তের ব্যাগ সরবরাহ করা হলেও রোগীদের বাইরে থেকে রক্ত সংগ্রহের নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে।
অবশ্য বিষয়টি অস্বীকার করে হাসপাতালের পরিচালক বলেন, গত সপ্তাহে ছিল। আজ হয়তো নেই তাই রোগীদের বাইরে থেকে আনতে বলা হয়েছে।
কয়েকজন চিকিৎসকের অনুপস্থিতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. জামানুল ইসলাম ভূঁইয়া বাংলানিউজকে বলেন, ওনারা হাসপাতালেই ছিলেন। তারা সহকারী অধ্যাপক তাই রুমে থাকার চাইতে আউটডোরে সময় দেন। তাদের বিভিন্ন বিষয় দেখতে হয় বলেও তারা রুমে কম সময় থাকেন বলে জানান পরিচালক।
তবে হাসপাতালের জনবল না বাড়িয়ে শয্যা বাড়ানোর ফলে রোগীদের কিছুটা সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে বলে স্বীকার করেন জামানুল ইসলাম।
হাসপাতালে জনবল নিয়োগ সম্পর্কে তিনি বলেন, ৪০ জনের একটি তালিকা করা হয়েছে। এমএলএসএস ছাড়াও বেশ কয়েকটি বিভাগে জনবল নিয়োগের চাহিদা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
বর্তমানে হাসপাতালে জুনিয়র চিকিৎসক সহ শতাধিক চিকিৎসক রয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ১০টি ওয়ার্ডে বর্তমানে মোট ১৫০টি শয্যা রয়েছে।
পরিচালক জামানুল ইসলাম বলেন, এখানে ডাক্তাদের ফাঁকি দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সকালের মিটিংয়ে সবার উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়। তাছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে মাঝে মাঝেই পরিদর্শন করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবারও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে এখানে পরিদর্শনে এসেছিলেন তারা কোনো অনুপস্থিতি খুঁজে পায়নি।
পরিচালক নিজেই রোগী দেখেন বাইরে
সরকারি একটি হাসপাতালের পরিচালক থাকা অবস্থাতেই জামানুল ইসলাম গ্রীন লাইফ মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল লি. এ রোগী দেখেন।
তার ভিজিটিং কার্ড থেকে জানা যায়, শুক্র ও সরকারি ছুটির দিন ছাড়া অন্য দিনে সন্ধ্যায় ছয়টা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত তিনি রোগী দেখেন।
বাংলাদেশ সময়: ১১১২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৪